×

জাতীয়

এবার গরমে লোডশেডিংয়ের শঙ্কা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১০ মার্চ ২০২৪, ১০:৪১ এএম

এবার গরমে লোডশেডিংয়ের শঙ্কা

জ্বালানি সংকট ও ভর্তুকির চাপে এমনিতেই পর্যুদস্ত বিদ্যুৎ খাত। এর মধ্যে ডলার সংকটের কারণে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় জ্বালানি আমদানি করা যাচ্ছে না। ফলে এই গ্রীষ্মে চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যাবে কি না তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে।

বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ দুই মাস গ্রীষ্মকাল। ১৪ এপ্রিল বৈশাখ মাস শুরু হবে। তবে, বসন্তের দ্বিতীয় ভাগ চৈত্র মাসেও তীব্র গরম পড়ে। সেই চৈত্রের বাকি আর ৩ দিন। তাই বলা যায়, গরমকাল প্রায় শুরু হয়ে গেছে।

ইতিমধ্যে এর প্রভাবে দেশের বিভিন্ন স্থানে লোডশেডিং শুরু হয়েছে। বিশেষত গ্রামাঞ্চলে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকছে না। বিদ্যুৎ খাতের রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশের (পিজিসিবি) তথ্যমতে, চলতি মাসে প্রায় ৬৫০ মেগাওয়াট লোডশেডিং করতে হয়েছে। এ বিষয়ে পিডিবির কর্মকর্তারা বলছেন, গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোয় গ্যাসের পর্যাপ্ত জোগান নেই। সে কারণে বিদ্যুতের উৎপাদন ও সরবরাহ কমেছে। ফলে বিতরণ কোম্পানিগুলোকে বাধ্য হয়ে লোডশেডিং করতে হচ্ছে।

বিদ্যুতের সর্বোচ্চ চাহিদার সময় গ্যাসভিত্তিক কেন্দ্রগুলোর জন্য দিনে গড়ে ১ হাজার ১০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের প্রয়োজন পড়ে। কিন্তু পিডিবি সরবরাহ পাচ্ছে ৫৫০ মিলিয়ন ঘনফুট। গ্যাস সরবরাহে প্রায় অর্ধেক ঘাটতি থাকায় বিদ্যুতের উৎপাদন কম হচ্ছে। এর ফলে লোডশেডিং হচ্ছে।

গ্রীষ্ম আসার আগেই লোডশেডিং করতে বাধ্য হওয়ার বিষয়টি ভাবাচ্ছে সংশ্লিষ্টদের। সরকারি হিসাব অনুযায়ী, গ্রীষ্ম মৌসুমে বিদ্যুৎ উৎপাদনে দৈনিক গ্যাসের ন্যূনতম চাহিদা হবে দেড় হাজার মিলিয়ন ঘনফুট। সর্বোচ্চ চাহিদা হবে ১ হাজার ৭৬০ মিলিয়ন ঘনফুট। কিন্তু এর বিপরীতে প্রয়োজনীয় গ্যাস সরবরাহের নিশ্চয়তা দিতে পারছে না পেট্রোবাংলা। অপরদিকে ডলার সংকটের কারণে জ্বালানি আমদানির ধারাবাহিকতা নিয়েও শঙ্কা দেখা দিয়েছে। 

 

এবারের গ্রীষ্মে বিদ্যুতের সর্বোচ্চ চাহিদা ধরা হয়েছে ১৮ হাজার মেগাওয়াট। দেশে বর্তমানে বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা রয়েছে ২৫ হাজার মেগাওয়াট। কিন্তু বেশিরভাগ সময় জ্বালানির অভাবে ২৫ শতাংশ বিদ্যুৎকেন্দ্র অলস বসে থাকে। আবার আমদানি নির্ভরতার কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানির দাম অস্থিতিশীল হলে বিপাকে পড়ে বিদ্যুৎ খাত। এ অবস্থা আরও প্রকট করে তুলেছে ডলার সংকট।

পিডিবির তথ্য অনুযায়ী, দেশে গ্রিডভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের মধ্যে গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের সক্ষমতা ১১ হাজার ৭০৮ মেগাওয়াট, কয়লাভিত্তিক কেন্দ্রের ৫ হাজার ৪১২ মেগাওয়াট, ফার্নেস অয়েল ভিত্তিক কেন্দ্রের ৬ হাজার ৪৯২ মেগাওয়াট, ডিজেলভিত্তিক কেন্দ্রের ৪৯০ মেগাওয়াট, জলবিদ্যুত কেন্দ্রের ২৩০ মেগাওয়াট এবং সৌরশক্তিভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের সক্ষমতা ৪৫৯ মেগাওয়াট।

গত বছর জ্বালানি আমদানির অন্তত ৫০ শতাংশ ডলার সরবরাহ করেছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। এরপরও লোডশেডিং করতে হয়েছে। এবার ডলার পরিস্থিতি আরো নাজুক। তাই এবারের গ্রীষ্মেও বিদ্যুৎ উৎপাদনে ঘাটতি দেখা দিতে পারে এবং লোডশেডিংয়ের কবলে পড়তে পারে দেশ। বিদ্যুৎ বিভাগ বলছে, বিদ্যুৎ চাহিদা মেটাতে উৎপাদন সক্ষমতার কোনো ঘাটতি নেই। তবে ঘাটতি আছে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য কয়লা, তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) ও জ্বালানি তেলের (ডিজেল, ফার্নেস) সরবরাহের।

গত বছর কয়লা থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা ছিল ২ হাজার ৬৯২ মেগাওয়াট। তবে ডলার সংকটের কারণে কয়লা আমদানি ব্যাহত হওয়ায় দুই দফায় পায়রা ও রামপাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র বন্ধ ছিল। বিশ্ববাজারে কয়লার দাম এখন নিম্নমুখী থাকলেও দেশের প্রায় সব কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিল বকেয়া থাকায় সহসা উৎপাদন বাড়ানো যাচ্ছে না।

গত বছর সাড়ে ৫ হাজার মেগাওয়াটের বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়েছে জ্বালানি তেল থেকে। এবার সাড়ে চার থেকে পাঁচ হাজার মেগাওয়াট উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা গ্রহণ করেছে পিডিবি। এজন্য ইতোমধ্যে বিদ্যুৎকেন্দ্রের বকেয়া শোধের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ১২ হাজার কোটি টাকার বন্ড ইস্যু করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তবে এর বাইরে বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রের আরো প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকা বকেয়া আছে। এই বকেয়ার চাপ ও ডলারের জোগান নিয়ে বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য জ্বালানি তেল আমদানি ব্যাহত হতে পারে বলে ধারণা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

গত বছরও গ্রীষ্ম মৌসুমের আগে বিদ্যুৎ খাতের বকেয়া শোধে বিভিন্ন উদ্যোগ নেয় সরকার। তারপরও চার থেকে পাঁচ মাসের বিল বকেয়া থেকে যায়। এ ছাড়া গত বছর জ্বালানি আমদানির অন্তত ৫০ শতাংশ ডলার সরবরাহ করেছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। এরপরও লোডশেডিং করতে হয়েছে। এবার ডলার পরিস্থিতি আরও নাজুক। তাই এবারের গ্রীষ্মেও বিদ্যুৎ উৎপাদনে ঘাটতি দেখা দিতে পারে এবং লোডশেডিংয়ের কবলে পড়তে পারে দেশ।

এ বিষয়ে পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক মোহাম্মদ হোসেইন বলেন, এবারের গ্রীষ্ম মৌসুমে সর্বোচ্চ বিদ্যুতের চাহিদা মাথায় রেখে উৎপাদন পরিকল্পনা করা হয়েছে। তবে জ্বালানি সরবরাহে ব্যাঘাত ঘটলে লোডশেডিং হতে পারে। আমরা চেষ্টা করব জোগান অব্যাহত রাখার। বিদ্যুতের ট্যারিফ সমন্বয় করা হলে ভর্তুকির চাপটা কমে আসবে। তখন পরিস্থিতি মোকাবিলা করা কিছুটা সহজ হবে। ভর্তুকির চাপ কমাতে কয়েক দিন আগে গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধি করেছে সরকার। গত বছরও তিন দফায় বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়েছিল। কিন্তু নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি।

আরো পড়ুন: ঢাকার বাতাস আজও অস্বাস্থ্যকর

জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ইজাজ আহমেদ এ প্রসঙ্গে বলেন, এই সংকটের জন্য বিদ্যুৎ খাতের অব্যবস্থাপনা দায়ী। একের পর এক বিদ্যুৎকেন্দ্র তৈরি করা হয়েছে কিন্তু জ্বালানির সংস্থান কীভাবে হবে তার পরিকল্পনা করা হয়নি। এখন বিদ্যুতের দাম বাড়িয়ে ডলার, জ্বালানি সংকট ও লোডশেডিং কোনোটারই সমাধান করা যাবে না। দিন শেষে ভুগতে হবে ভোক্তাদেরই।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App