×

জাতীয়

কুমিল্লা ও ময়মনসিংহ সিটিতে ভোটগ্রহণ চলছে

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৯ মার্চ ২০২৪, ০৮:২৫ এএম

কুমিল্লা ও ময়মনসিংহ সিটিতে ভোটগ্রহণ চলছে

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দুই মাস বাদে ময়মনসিংহ ও কুমিল্লা সিটি করপোরেশন, ছয়টি পৌরসভাসহ স্থানীয় সরকারের দুই শতাধিক পদে ভোটগ্রহণ চলছে। নির্বাচনি এলাকাগুলোতে শনিবার (৯ মার্চ) সকাল ৮টা থেকে ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে। একটানা চলবে বিকাল ৪টা পর্যন্ত। গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কাগজের ব্যালটে ভোট হলেও ময়মনসিংহ ও কুমিল্লায় আজ শনিবার ভোট হচ্ছে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম)।

ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনে দ্বিতীয় নির্বাচন হচ্ছে এটি, আর কুমিল্লা সিটিতে হচ্ছে মেয়র পদের উপ নির্বাচন। এর বাইরে পটুয়াখালী জেলার পটুয়াখালী পৌরসভা, জামালপুর জেলার বকশীগঞ্জ পৌরসভা এবং বরগুনা জেলার আমতলী পৌরসভায় হচ্ছে সাধারণ নির্বাচন।ময়মনসিংহ জেলার ত্রিশাল পৌরসভা, মুন্সিগঞ্জ জেলার মুন্সিগঞ্জ পৌরসভা এবং বগুড়া জেলার শিবগঞ্জ পৌরসভায় মেয়র পদে হচ্ছে উপনির্বাচন। সিটি করপোরেশন, জেলা পরিষদ, পৌরসভা, ইউনিয়ন পরিষদসহ সব মিলিয়ে স্থানীয় সরকারে বিভিন্ন পর্যায়ের ২৩৩টি নির্বাচন হচ্ছে এদিন। 

এর আগে গত বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে এই দুই নির্বাচনী এলাকায় প্রার্থীদের আনুষ্ঠানিক প্রচারণা শেষ হয়। নির্বাচন উপলক্ষে এই দুই এলাকায় সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে যানবাহন চলাচলে। 

২০২২ সালের ১৫ জুন কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের সর্বশেষ নির্বাচন হয়। ওই নির্বাচনে মেয়র নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগের প্রার্থী আরফানুল হক। মেয়রের দায়িত্ব পাওয়ার দেড় বছরের মাথায় গত ডিসেম্বরে মারা যান তিনি। যে কারণে কুমিল্লায় মেয়র পদে উপনির্বাচন হচ্ছে। কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও কুমিল্লা-৬ (আদর্শ সদর) আসনের সংসদ সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দিনের প্রার্থী আরফানুল হকের কাছে গত সিটি নির্বাচনে মাত্র ৩৪৩ ভোটে হেরেছিলেন মনিরুল হক (সাক্কু)।

এবার মেয়র পদের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগের যে দুই নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন তারা হলেন তাহসীন বাহার ও নূর উর রহমান মাহমুদ (তানিম)। এর মধ্যে তাহসীন কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। তার বাবা সংসদ সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দিন। তাহসীনকে কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে দলীয় সমর্থন দেয়া হয়েছে। আরেক প্রার্থী নূর উর রহমান কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা।

নূর উর রহমান ভোট করছেন হাতি প্রতীকে। তাহসীনের প্রতীক বাস। অন্যদিকে বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত কুমিল্লা সিটির সাবেক মেয়র মো. মনিরুল হক ও মোহাম্মদ নিজাম উদ্দিন (কায়সার) এবারও মেয়র পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। মনিরুল কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। আর নিজাম কুমিল্লা মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সভাপতি। মনিরুল হক ‘টেবিলঘড়ি’ ও নিজামউদ্দিন ‘ঘোড়া’ প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে গত সিটি নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছিলেন মনিরুল ও নিজাম। তখন দল থেকে তাদের বহিষ্কার করা হয়। এখনো তারা বহিষ্কৃত। তবে স্থানীয় বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীর অনেকে এবারের নির্বাচনেও তাদের সঙ্গে কাজ করছেন।

দলীয় সূত্র বলছে, কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপিতে দুটি ধারা। এক পক্ষের নেতৃত্বে আছেন কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আমিন উর রশিদ। স্বতন্ত্র প্রার্থী নিজাম তার শ্যালক। আরেকটি পক্ষের নেতৃত্বে আছেন মো. মনিরুল হক। স্বতন্ত্র প্রার্থী মনিরুল হকের দাবি, গত নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে জেতাতে আমিন উর রশিদ তার শ্যালক নিজামকে প্রার্থী করেন। এবারো একই অবস্থা। এবারো শ্যালককে প্রার্থী করিয়েছেন আমিন।

গত নির্বাচনে ভোটের হিসাব অনুযায়ী মনিরুলের পরাজয়ের কারণ ছিলেন নিজাম। অন্যদিকে গত নির্বাচনে বিএনপির দুজন প্রার্থী থাকলেও আওয়ামী লীগের একক প্রার্থী ছিলেন আরফানুল হক। এবার তাহসীনের সঙ্গে নূর উর রহমানও প্রার্থী। ফলে দুজনের মধ্যে কম-বেশি ভোট ভাগাভাগির একটি ক্ষেত্র তৈরি হয়েছে। কুমিল্লা সিটি করপোরেশনে মোট ভোটার ২ লাখ ৪২ হাজার ৪৫৮ জন।

এদিকে, ২০১৮ সালের অক্টোবর মাসে ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশন গঠিত হয়। ২০১৯ সালের ৫ মে অনুষ্ঠিত হয় প্রথম নির্বাচন। ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় মেয়র নির্বাচিত হন ইকরামুল হক। এবার নিজ দলের একাধিক নেতা প্রার্থী হওয়ায় প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখে পড়তে হচ্ছে তাকে।

এবার মেয়র পদে প্রার্থী হয়েছেন সদ্য সাবেক মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ইকরামুল হক (টিটু), জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এহতেশামুল আলম ও জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা সাদেকুল হক খান। তিন প্রার্থীর মধ্যে মূলত মেয়র পদের প্রতিদ্বন্দ্বিতার আভাস পাওয়া গেছে প্রচারণার সময়ে। এই তিনজনের বাইরে মেয়র পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন কৃষিবিদ রেজাউল হক ও জাতীয় পার্টির প্রার্থী শহিদুল ইসলাম।

ময়মনসিংহ নগরের বিভিন্ন এলাকার সাধারণ ভোটারদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মেয়র পদে আওয়ামী লীগের তিনজন নেতাই ভোটারদের দ্বারে দ্বারে গিয়েছেন উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি নিয়ে। এরমধ্যে সাদেকুল ও এহতেশামুল শহরের অসহনীয় যানজটসহ নাগরিক সমস্যাগুলো ভোটারদের সামনে তুলে ধরেছেন। নির্বাচিত হলে তারা দুজনই ময়মনসিংহ শহরের যানজট ও জলাবদ্ধতামুক্ত করার পাশাপাশি হোল্ডিং ট্যাক্সের (গৃহকর) ‘বোঝা’ কমিয়ে দেবেন বলে ভোটারদের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

অন্যদিকে ইকরামুল হক বিগত পাঁচ বছরে শহরের উন্নয়ন চিত্র তুলে ধরার পাশাপাশি অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করতে ভোটারদের কাছে ভোট চেয়েছেন। এছাড়া করোনা মহামারির সময়ে মানুষের পাশে থাকার বিষয়টিও ছিল তার নির্বাচনী প্রচারে। নির্বাচনী প্রচারণায় এ তিন প্রার্থীর মধ্যে কথার লড়াই ছিল।

ময়মনসিংহ মহানগর আওয়ামী লীগের একটি অংশের মূল্যায়ন হচ্ছে, পৌরসভা ও সিটি করপোরেশন মিলিয়ে টানা ১২ বছর মেয়রের দায়িত্ব পালন করেছেন ইকরামুল। ফলে স্থানীয়ভাবে একধরনের গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে তার। সেই সঙ্গে মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবেও দলে তার শক্ত অবস্থান রয়েছে। অন্যদিকে তার বিরোধী পক্ষ মেয়র নির্বাচনে একক প্রার্থী দিতে পারেনি। দলের একাধিক নেতা প্রার্থী হওয়ায় সুবিধা পাবেন ইকরামুল। প্রচারেও তিনি অনেকটা এগিয়ে ছিলেন।

দলের স্থানীয় নেতা-কর্মীরা বলছেন, ময়মনসিংহ সদর আসনের সংসদ সদস্য মোহিত উর রহমান এবং সাবেক মেয়র ইকরামুলকে দলের ঘিরে নেতা-কর্মী ও সমর্থকেরা বিভক্ত। মোহিত মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। ইকরামুল মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি। সাবেক ধর্মমন্ত্রী মতিউর রহমানের ছেলে মোহিতের অনুসারীরা ইকরামুলের প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের পক্ষে থাকায় কিছুটা চাপ তৈরি হয়েছে। ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের ভোটে মেয়র পদে পাঁচজন, সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ৬৯ জন এবং সাধারণ কাউন্সিলর পদে ১৪৯ জন প্রার্থী। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী না থাকায় একটি ওয়ার্ডের কাউন্সিলর বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনে মোট ভোটকেন্দ্র ১২৮টি। নির্বাচনে মোট ভোটার ৩ লাখ ৩৬ হাজার ৪৯৬ জন।

ময়মনসিংহ আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মোহাম্মদ বেলায়েত হোসেন চৌধুরী বলেন, নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে আয়জনের লক্ষ্যে প্রতিটি কেন্দ্রে যথাযথ নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। এই নির্বাচনে ট্রাইকিং ফোর্স এর পাশাপাশি ৭ প্লাটুন বিজেপি, ১১ প্লাটুন পুলিশ, আর্ম পুলিশ, আনসার সদস্য, ১৭ টিম র‌্যাব ছাড়াও ৩৩ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এবং ১১ জন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্ব পালন করবেন। প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে ৪ জন পুলিশ ও ১২ জন আনসার সদস্য দায়িত্ব পালন করবেন। গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রগুলোতে ৫ জন পুলিশ ও ১২ জন আনসার সদস্য দায়িত্বে নিয়োজিত থাকবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App