×

জাতীয়

ঢাকায় হর্ণ নিষিদ্ধ এলাকায় শব্দ দূষণ সবচেয়ে বেশি

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৪ মার্চ ২০২৪, ০৬:৪৯ পিএম

ঢাকায় হর্ণ নিষিদ্ধ এলাকায় শব্দ দূষণ সবচেয়ে বেশি

ছবি: সংগৃহীত

রাজধানী ঢাকার শব্দদূষণ ভয়াবহ আকার ধারণ করে আছে অতীতের মতোই। সরকার এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ না নেয়ায় এই দূষণের কোনো উন্নতি হয়নি। উল্টো ঢাকার যেসব সড়কে হর্ণ বাজানো নিষেধ বলে ঘোষণা করা হয়েছে সেসব সড়কেই দূষণের মাত্রা সবচেয়ে বেশি। দিনের বেলায় সবচেয়ে বেশি মাত্রায় শব্দ দূষণ হচ্ছে বিধিমালায় নীরব এলাকা হিসেবে উল্লেখ করা হাসপাতাল, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, অফিস আদালতের মতো এলাকাগুলো। 

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, ৬০ ডেসিবল শব্দে মানুষের সাময়িক শ্রবণশক্তি নষ্ট ও ১০০ ডেসিবল শব্দে চিরতরে শ্রবণশক্তি হারাতে পারে। সেখানে ঢাকার প্রায় এলাকায়ই শব্দ দূষণের সর্বোচ্চ মাত্রা ১০০ পার করছে বলে জরিপে দেখা গেছে। যা চরম স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে ফেলছে নগরবাসীকে।

সোমবার (৪ মার্চ) রাজধানীর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সাগর রুনি মিলনায়তনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে শব্দ দূষণের জরিপ প্রকাশ করে এসব তথ্য তুলে ধরে পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন আন্দোলন (পরিজা) নামে একটি সংগঠন। এসময় সংগঠনটির সভাপতি ও পরিবেশ অধিদপ্তরের সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক প্রকৌশলী মো. আবদুস সোবহান, সাধারণ সম্পাদক ফেরদৌস আহমেদ উজ্জ্বল, জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. মুসতাক হোসেন, নগর গবেষক মো. জাহাঙ্গীর আলম প্রমুখ।

আরো পড়ুন: সড়ক দুর্ঘটনায় কবলিতদের সহায়তা দেয়া হয়েছে

সংগঠনটির সভাপতি উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, গত দুই মাসে ঢাকা মহানগরীর ৪৫টি এলাকায় দিবা ও রাত্রিকালীন শব্দের মাত্রা পরিমাপ করা হয়েছে। জরিপকৃত এলাকাগুলোকে নীরব, আবাসিক, মিশ্র ও বাণিজ্যিক এলাকায় ভাগ করে নেয়া হয়েছে। 

জরিপে দেখা গেছে, নীরব এলাকায় দিবাকালীন শব্দের মাত্রা সবচেয়ে বেশি সচিবালয় এলাকায়, যা ১০১.৭ ডেসিবল এবং রাত্রিকালীন শব্দের মাত্রা সবচেয়ে বেশি ধানমন্ডি ল্যাবএইড এলাকায়, যা ১০১.৫ ডেসিবল। মিশ্র এলাকায় দিবাকালীন শব্দের মাত্রা সবচেয়ে বেশি বাংলামোটরে, যা ১০৩.৮ ডেসিবল এবং রাত্রিকালীন শব্দের মাত্রা সবচেয়ে বেশি লালবাগ সেকশনে, যা ১০১.৫ ডেসিবল।

তিনি আরো জানান, নীরব এলাকায় দিবাকালীন শব্দের মাত্রা ৮৪.৫ থেকে ১০১.৭ ডেসিবল এবং রাত্রিকালীন ৯৬.৪ থেকে ১০১.৫ ডেসিবল। আবাসিক এলাকায় দিবাকালীন ৮২.০ থেকে ৯১.০ ডেসিবল এবং রাত্রিকালীন ৮৩.০ থেকে ৯১.৬ ডেসিবল। মিশ্র এলাকায় দিবাকালীন ৯১.০ থেকে ১০১.৫ ডেসিবল এবং রাত্রিকালীন ৮৯.০ থেকে ১০৩.৮ ডেসিবল। বাণিজ্যিক এলাকায় দিবাকালীন শব্দের মাত্রা ৯২.০ থেকে ৯৭.০ ডেসিবল এবং রাত্রিকালীন ৯১.০ থেকে ৯৯.০ ডেসিবল। 

আবদুস সোবহান বলেন, বাংলামোটরে শব্দের মাত্রা ১০৩.৮ ডেসিবল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় শব্দের মাত্রা ৮৬.০০ থেকে ৯৪.০০ ডেসিবল। সচিবালয় এলাকায় শব্দের মাত্রা ৯৬.০০ থেকে ১০১.৭ ডেসিবল। জরিপ অনুযায়ী, রাজধানীতে দিনে সবচেয়ে বেশি শব্দদূষণ হয় বাংলামোটরে এবং রাতে সবচেয়ে বেশি লালবাগে। 

আরো পড়ুন: গাউসিয়া টুইন পিকের ১২ রেস্টুরেন্ট সিলগালা করল রাজউক

প্রকৌশলী মো. আবদুস সোবহান বলেন, রাতে শব্দ দূষণ বাড়াচ্ছে ড্রাম ট্রাক ও কার্গো ট্রাকগুলো। দিনের বেলায় বাস, প্রাইভেটকারসহ সব ধরনের যানবাহনই শব্দ দূষণে পাল্লা দিচ্ছে। দূষণ করা থেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বাস, অ্যাম্বুলেন্সও বাদ নেই। অথচ এগুলো তদারকি করার কেউ নেই। পরিবেশ অধিদপ্তরেরও কোনো শাখা নেই, নির্দিষ্ট লোকবল নেই। উদ্যোগও নিচ্ছে না কেউ। অথচ সংশ্লিষ্ট সংস্থা নিজনিজ দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করলে শব্দ দূষণ নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে অনেকটা। সেই সঙ্গে সরকারকে জনসচেতনতা বৃদ্ধি ও উচ্চ শব্দের হর্ণ আমদানি বন্ধ করতে হবে।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও ডাকসুর সাবেক জিএস ডা. মুসতাক হোসেন বলেন, শব্দ সরাসরি স্বাস্থ্যকে আঘাত করছে। এটা আমাদের বোধশক্তি নষ্ট করে দিচ্ছে। শব্দের মাত্রা যদি অনেক বেশি হয়, তাহলে শুধু শ্রবণের ক্ষতি না, উচ্চরক্তচাপ থেকে শুরু করে হৃদরোগের ঝুঁকি পর্যন্ত তৈরি হতে পারে। মানুষ বা যেকোনো প্রাণী যখন ক্রমাগত স্ট্রেসে থাকে তখন তার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App