×

জাতীয়

আশালতা হত্যাকাণ্ড

স্বর্ণ ছিনিয়ে নেয়ার আড়ালে থাকতে পারে অন্য রহস্য

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০৮:৩১ পিএম

স্বর্ণ ছিনিয়ে নেয়ার আড়ালে থাকতে পারে অন্য রহস্য

রাজবাড়ীর পাংশা উপজেলার সরিষা ইউনিয়নে আশালতা দাস (৭৫) নামে এক বৃদ্ধাকে কুপিয়ে স্বর্ণালঙ্কার ছিনিয়ে নেয়ার ঘটনার আড়ালে অন্য রহস্য রয়েছে বলে আশঙ্কা করছে স্বজনরা। ঘটনার ৫ ঘণ্টার মধ্যে অভিযুক্ত প্রতিবেশী বিশ্বজিৎ বিশ্বাসকে আটক করে হত্যার কারণ হিসেবে স্বর্ণালঙ্কার ছিনিয়ে নেয়াকেই সামনে আনে পুলিশ। 

কিন্তু নিহতের মেয়ে রত্মা রাণী বিশ্বাস বলছেন, সাদা চোখে এটিকে চুরির ঘটনা মনে হলেও এর পেছনে অন্য কারো ইন্ধন রয়েছে। কারণ আমাদের কোনো ভাই নেই। আমরা দুই বোন বিয়ের পর অন্যত্র থাকি। বাবাও নেই। মা না থাকলে আমাদের সব সম্পত্তি অন্যরা ভোগদখল করতে পারবে। তার দাবি, পুলিশ তদন্তের সময় বিষয়টিতে জোর দিলে আসল সত্য বেড়িয়ে আসবে।

পাংশা উপজেলা যুব মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদক রত্মা রাণী বিশ্বাস ভোরের কাগজকে বলেন, আমাদের অনেক জমিজমা রয়েছে। আমাদের কোনো ভাই না থাকায় বাড়ির পাশের স্কুলের জন্য বাবা (সন্তোষ দাস) জমি দান করে বলেছিলেন, এই স্কুলে যারা পড়বে, তারা সবাই আমার সন্তান। স্থানীয় সামাজিক যেকোনো কাজে বাবা দুহাত ভরে দান করতেন। এরপরও একটি স্বার্থান্বেষী মহলের চোখ পড়ে আমাদের সম্পত্তির উপর। নানা সময় আমার বাবাকে নির্যাতন করা হয়েছে। একবার নারিকেল গাছের সঙ্গে বেধে নির্যাতন করা হয়েছিল। এসব নির্যাতনের হাত থেকে বাঁচতে আমি রাজনীতিতে নাম লেখাই। অথচ আমার বাবা বঙ্গবন্ধুর আদর্শে জীবনের পথ চলেছেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় আমাদের বাড়িটি মুক্তিযোদ্ধাদের ক্যাম্প হিসেবে ব্যবহার হয়েছে।

আরো পড়ুন: শাহবাগে ফুলের দোকানে তিন সাংবাদিককে মারধরের অভিযোগ

ইন্ধনদাতা কারা হতে পারে? এমন প্রশ্নের জবাবে রত্মা রাণী বিশ্বাস বলেন, বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরে আমাদের বাড়িতে ৭ বার ডাকাতি হয়েছে। চুরি হয়েছে কয়েকবার। আমাদের সন্দেহ, এই ঘটনাগুলো দূরের কেউ ঘটায় নি। নির্যাতন করে তাড়িয়ে দিতে ইন্ধন দিয়েছে অনেকে। 

আমার মনে হয়, পুলিশ এসব বিষয় তদন্ত করলে ইন্ধনদাতারা বেড়িয়ে আসবে। পাশাপাশি হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করেন তিনি।

উল্লেখ্য, গত মঙ্গলবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) সকালে উপজেলার সরিষা ইউনিয়নের প্রেমটিয়া গ্রামের নিজ বাড়ির বারান্দা থেকে ওই বৃদ্ধার মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। ঘটনার পর হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত বিশ্বজিৎ বিশ্বাসকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ জানায়, আশালতা দাস স্বর্ণালংকার পড়ে থাকতে পছন্দ করতেন। তার স্বর্ণালংকারের ওপর নজর পড়ে প্রতিবেশী ইলেকট্রিক মিস্ত্রি বিশ্বজিৎ বিশ্বাসের। কারণ, বিশ্বজিৎ দেনার দায়ে জর্জরিত ছিল। তার পরিকল্পনা ছিল আশালতা দাসের স্বর্ণালংকার ছিনিয়ে নিয়ে বিক্রি করে দেনা শোধ করবেন। 

আরো পড়ুন: মাদ্রাসা ছাত্রকে হত্যার পরও মুক্তিপণের টাকা চায় মকবুল

মঙ্গলবার ভোর সাড়ে ৬ টার দিকে আশালতা ঘুম থেকে উঠে বারান্দায় এলে আগে থেকে ওত পেতে থাকা বিশ্বজিৎ গলায় গামছা পেঁচিয়ে হত্যার চেষ্টা করেন। ধস্তাধস্তির এক পর্যায়ে হাতুড়ি দিয়ে আশালতার মাথায় আঘাত করে মৃত্যু নিশ্চিত করে শরীর থেকে স্বর্ণালংকার খুলে নিয়ে পালিয়ে যান তিনি।

জানা যায়, আশালতা দাসের স্বামী মারা যান ১১ বছর আগে। তার দুই মেয়ের অনেক আগেই বিয়ে হয়েছে। মেয়ে-জামাই, নাতি-নাতনি সবাই পাংশা শহরে থাকেন। গ্রামের বাড়িতে আশালতা দাস একাই বসবাস করতেন। পুরাতন বাড়িতে পুকুর, মাঠের জমি ছাড়াও বাগান রয়েছে তার। আশালতা দাসের দান করা জমির ওপর এলাকায় বিদ্যালয়, হাটবাজার হয়েছে। এসব দেখাশোনা করার জন্য লোকও ছিল।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App