×

জাতীয়

মাদ্রাসা ছাত্রকে হত্যার পরও মুক্তিপণের টাকা চায় মকবুল

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০২:৫৩ পিএম

মাদ্রাসা ছাত্রকে হত্যার পরও মুক্তিপণের টাকা চায় মকবুল

রাজধানীর শ্যামপুর এলাকা থেকে মোঃ মকবুল হোসেন (৩৭) নামে এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে র‍্যাব। গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে রবিবার (১১ ফেব্রুয়ারি) অভিযান চালিয়ে তাকে আটক করা হয়।

র‍্যাব বলছে, গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তি মাদ্রাসা ছাত্র তাওহীদ ইসলামকে (১০) মুক্তিপণ আদায়ের জন্য অপহরণ করে হত্যা করে। এই ঘাতক মাদ্রাসা ছাত্র তাওহিদুল ইসলামের বাসার পাশেই বসবাস করতো। রাজমিস্ত্রি হওয়ায় অপহৃতের বাসায় ভবন নির্মাণের কাজ করার সময় ঘাতক ব্যক্তি বুঝতে পারেন ভুক্তভোগীরা আর্থিকভাবে সচ্ছল। এ থেকেই তাকে অপহরণের পরিকল্পনা করে সে। তবে অপহরণের সময় চিৎকার করাসহ অপহরণকারীকে চিনে ফেলায় গলায় গামছা পিছিয়ে মাদ্রাসা ছাত্র তাওহীদকে শ্বাসরোধে হত্যা করে সে। 

সোমবার (১২ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে মাদ্রাসা ছাত্র তাওহীদ অপহরণের পর হত্যার ঘটনায় ঘাতককে গ্রেপ্তারের বিষয়ে রাজধানী কাওরান বাজারের র‍্যাব মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। 

সংবাদ সম্মেলনে র‍্যাব লিগ্যাল এন্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মইন বলেন, গত শনিবার দিবাগত রাতে ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের আব্দুল্লাহপুর এলাকার রসুলপুর জামি’আ ইসলামিয়া মাদরাসা ও এতিমখানায় নাজেরা বিভাগে অধ্যয়নরত মাদ্রাসাছাত্র তাওহীদ ইসলাম নিখোঁজ হয়। 

পরবর্তীতে ভুক্তভোগী পরিবারের লোকজন সম্ভাব্য সকল জায়গায় খোঁজাখুজি করতে থাকেন। খোঁজাখুজির এক পর্যায় ওইদিন রাতে অজ্ঞাত একজন ব্যক্তি মোবাইল ফোনের মাধ্যমে ফোন করে জানায়, সে ভিকটিম তাওহীদকে অপহরণ করেছে এবং মুক্তিপণ হিসেবে ৩ লাখ টাকা দাবি করে। পরবর্তীতে ভুক্তভোগীর মা বাদী হয়ে দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জ থানায় একটি অপহরণ মামলা করে। গতকাল রবিবার ভুক্তভোগীর মা তার ছেলেকে উদ্ধারে র‌্যাবের কাছেও অভিযোগ করেন। 

মঈন বলেন, এরই ধারাবাহিকতায় গতকাল রাতে র‌্যাব-১০ এর একটি দল মাদ্রাসা ছাত্র অপহরণ করে হত্যার পর সেপ্টিক ট্যাংকে লাশ গুমের পরও মুক্তিপণের টাকা আদায়ের মূল পরিকল্পনাকারী ও হত্যাকারী মকবুল হোসেনকে গ্রেপ্তার করে। উদ্ধার করা হয় মুক্তিপনের ২ লাখ ৯০ হাজার টাকা। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তারকৃত অপহরণ ও হত্যার বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দেয়।

র‍্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, গ্রেপ্তারকৃত মকবুল পেশায় একজন রাজমিস্ত্রি। ভুক্তভোগীর পরিবার ও মকবুল একই এলাকায় বসবাস করতো এবং কিছুদিন আগে গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তি ভুক্তভোগীর বাসায় রাজমিস্ত্রির কাজ করেছে বলে জানায়। একই এলাকায় বসবাস এবং বাসায় রাজমিস্ত্রির কাজ করার সুবাদে ভুক্তভোগীর পরিবারের সঙ্গে তার সুসম্পর্ক ছিল। ভুক্তভোগী তাওহীদের বাবা একজন সৌদি  প্রবাসী। তাওহীদ কেরানীগঞ্জের আব্দুল্লাহপুর এলাকার একটি মাদ্রাসা ও এতিমখানায় নাজেরা বিভাগে পড়াশুনা করতো, যার ফলে সে সকালে মাদ্রাসার উদ্দেশ্যে বাসা থেকে বের হতো এবং বাসায় ফিরতে প্রায়ই সন্ধ্যা হয়ে যেতো। 

কমান্ডার মঈন বলেন, গ্রেপ্তারকৃত মকবুল এর ধারণা ছিল যে, ভিকটিমের বাবা প্রবাসী তাই ভিকটিমকে অপহরণ করলে মোটা অংকের মুক্তিপণ আদায় করা যাবে। এরই প্রেক্ষিতে গ্রেপ্তারকৃত মকবুল অল্পসময়ে অধিক অর্থ লাভের আশায় প্রায় ০৬ মাস যাবৎ ভিকটিমকে অপহরণের পরিকল্পনা করে আসছিল। গ্রেপ্তারকৃত মকবুল ভিকটিম তাওহীদ মাদ্রাসা থেকে বাড়ী ফেরার পথিমধ্যে ভিকটিমের বাড়ীর রাস্তার পাশে ওৎ পেতে থাকে। এসময় ভিকটিম মাদ্রাসা থেকে আনুমানিক রাতে ঘটিকার সময়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছামাত্র পূর্বহতে ওৎ পেতে থাকা গ্রেপ্তারকৃত মকবুল ভিকটিমের মুখ চেপে ধরে উক্ত এলাকার নিকটস্থ একটি নির্জন জায়গায় নিয়ে গিয়ে তার হাত, পা ও মুখ বেধে রাখে। 

পরবর্তীতে গ্রেপ্তারকৃত মকবুল পূর্বে ক্রয়কৃত তার মোবাইল কৌশলে ভিকটিমের বাসায় রেখে আসে। গ্রেপ্তারকৃত মকবুল ভিকটিমের বাসায় রেখে আসা মোবাইল ফোনে কল দিয়ে ভিকটিমকে অপহরণের বিষয়টি জানায় এবং ৩ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। এসময় মুক্তিপণের টাকা না দিলে এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তা নিলে ভিকটিমকে হত্যা করবে বলে হুমকি দেয়। 

পরবর্তীতে ভিকটিমের মুখের বাঁধন খুলে গেলে ভিকটিম ডাক-চিৎকার করলে গ্রেপ্তারকৃত মকবুল ক্ষিপ্ত হয়ে ভিকটিম তাওহীদের মুখ ও গলা মাফলার দিয়ে পেঁচিয়ে ধরে শ্বাসরোধ করে নৃশংসভাবে হত্যা করে এবং ভিকটিমের লাশ গুম করার উদ্দেশ্যে ওই এলাকার নিকটস্থ একটি সেপটিক ট্যাংকের ভিতরে ফেলে রেখে দ্রুত ঘটনাস্থল হতে পালিয়ে যায়। 

র‍্যাব জানায়, হত্যার পরও মুক্তিপণের টাকা চায়। ভিকটিমের মামা গ্রেপ্তারকৃত মকবুলের কথা মত ঢাকার দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জের রাজেন্দ্রপুরে ঢাকা-মাওয়া হাইওয়ের ফুটওভার ব্রিজের উপরে ৪ নং পিলারের গোড়ায় ৩ লাখ টাকা রেখে আসে। পরবর্তীতে গ্রেপ্তারকৃত মকবুল মুক্তিপণের টাকা নিয়ে পোস্তগোলা এলাকায় একটি আবাসিক হোটেলে অবস্থান করে। হোটেলে অবস্থাকালীন সময় র‌্যাব গ্রেপ্তার করে। 

এক প্রশ্নের জবাবে মঈন বলেন, প্রাথমিকভাবে মকবুলের আগের কোন অপরাধের তথ্য পায়নি র‍্যাব। তবে এই ধরণের ইউনিক অপরাধের ধরণ দেখে আমরা ধারণা করছি তার আগের অপরাধের ইতিহাস থাকতে পারে। এটা মামলার বিস্তারিত তদন্তে উঠে আসবে বলে আশা করি। গ্রেপ্তারকৃত আসামির বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন। 

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App