×

জাতীয়

ডলারের দাম কমানো সঠিক

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৩ নভেম্বর ২০২৩, ০৮:১০ পিএম

দেশের ডলার সংকট নিরসনে গৃহীত পদক্ষেপ জানানোর জন্য সংবাদ সম্মেলন করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সেখানে বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলার এসোসিয়েশনের গতকাল বুধবারের সিদ্ধান্ত সঠিক ছিল বলে গণমাধ্যমকে জানিয়েছে সংস্থাটি। কারণ বুধবার বাফেদা আমদানি এবং রপ্তানি উভয় ক্ষেত্রে ডলারের ৫০ পয়সা দাম কমিয়েছে। এতে করে ডলারের বিপরীতে বাংলাদেশের টাকার মান বাড়বে। যেটা এতদিন ছিল উল্টোমুখী। আমদানি কমে যাওয়ার কারণে ডলার চাহিদা কমে এসেছে এবং আগামী বছরের সেপ্টেম্বরের মধ্যে বিল পরিশোধের চাপ অতি নগণ্যতে নেমে আসবে বলে আশা ব্যক্ত করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. মেজবাউল হক। বৃহস্পতিবার (২৩ নভেম্বর) বাংলাদেশ ব্যাংকের মূল ভবনের জাহাঙ্গীর আলম কনফারেন্স হলে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি। সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে মুখপাত্র জানান, আমাদের বেশিরভাগ ব্যাংকের কাছেই প্রয়োজনের চেয়ে বেশি ডলার আছে। পক্ষান্তরে সংকটেও রয়েছে কিছু ব্যাংক। এসব ব্যাংকের গ্রাহক চাইলেও চাহিদা অনুযায়ী ঋণপত্র খুলতে পারছেন না। তাই তারা বাধ্য হয়ে অন্য ব্যাংকের শরণাপন্ন হচ্ছেন। এ কারণেই কখনো কখনো অস্থিরতা দেখা দিচ্ছে ডলারের বাজারে। আস্তে আস্তে ডলার বাজার স্বাভাবিক হচ্ছে, এখন বাংলাদেশ ব্যাংক রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি বন্ধ করবে কিনা এমন প্রশ্নের উত্তরে মুখপাত্র জানান, বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে সরকার তার প্রয়োজনে ডলার নেয়। প্রয়োজন হলে দেশের স্বার্থে সেটা দিতেই হবে। বন্ধ করার কোন সুযোগ নেই। মেজবাউল হক বলেন, দেশের ডলার খরচের মূল খাত হলো দুইটি। আমদানি মূল্য পরিশোধ করা এবং অন্যটি সেবামূল্য পরিশোধ। দুই জায়গাতেই আমরা চাহিদা কমাতে সক্ষম হয়েছি। ইতিমধ্যে আমাদের ডলার পরিশোধের পরিমাণ অর্ধেকে নেমে এসেছে। ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরের মধ্যে মাসিক ডলার পরিশোধ নেমে ৪৯ মিলিয়ন ডলারে পৌঁছাবে। কারণ আমরা অলরেডি বেশ কিছু পণ্য আমদানিতে সীমাবদ্ধতা আরোপ করেছি। পাশাপাশি এখন দীর্ঘমেয়াদি ঋণপত্র খোলার হার কমে গেছে। ব্যবসায়ীরা এখন যেসব ঋণপত্র খুলছেন তার বেশিরভাগই অ্যাট সাইট এলসি বা তাৎক্ষণিক। তাই খুব অল্প সময়ের মধ্যেই ডলার সংকটের পাশাপাশি দেশের মূল্যস্ফীতি ও নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে বলে আশা ব্যক্ত করেন তিনি। প্রসঙ্গত, গত বুধবার প্রতি ডলারে ৫০ পয়সা করে কমিয়ে আমদানিতে ১১০ টাকা ৫০ পয়সা এবং রপ্তানি ও রেমিট্যান্সে ১১০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মধ্যস্থতায় বাণিজ্যিক ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন এবিবি ও বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনকারী ব্যাংকের সংগঠন বাফেদার যৌথ সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়। এমন এক সময়ে ডলারের দর কমানো হলো যখন ১২১ থেকে ১২২ টাকা পর্যন্ত দরে রেমিট্যান্স কিনছে ব্যাংকগুলো। আর খোলাবাজারে নগদ ডলার বিক্রি হচ্ছে ১২৩ থেকে ১২৪ টাকা। মূলত ধারাবাহিকভাবে টাকার বিপরীতে ডলারের দর বাড়ানোর ফলে আরো বাড়বে এমন আশায় অনেকেই ডলার ধরে রাখছে। প্রবাসীরা যেমন ডলার আনছে না। অনেকে আবার খোলাবাজার থেকে নগদ ডলার কিনে রাখছেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের অক্টোবর মাসে ৪ দশমিক ১৬ বিলিয়ন ডলারের পণ্য আমদানি হয়। তবে আগের মাসে যা ছিল ৪ দশমিক ৩৭ বিলিয়ন ডলার। আগস্টে ছিল ৬ দশমিক ১৪ বিলিয়ন ডলার। ধারাবাহিকভাবে ডলার পরিশোধের পরিমাণ কমছে। ফলে ব্যাংকের ডলার সংকট ক্রমেই কমে আসছে। ডলার কারসাজির বিষয়ে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে কিন জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংক জানায়, বাজার তদারকি বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়মিত কাজ। এটা চলতেই থাকবে। ইতপুর্বে আমরা একাধি ব্যাংককে জরিমানা ও শাস্তির আওতায় এনেছি। অনেকগুলে এক্সচেঞ্জ হাউজের লাইসেন্স বাতিল করেছি। সুতরাং আমরা সবসময় অনিয়ম তদরতকি করছি। ভাবিষ্যতেও করবো। গত বছর প্রয়োজনের চেয়ে বেশি ডলার সংরক্ষণ করে দর বৃদ্ধির প্রমাণ পাওয়ায় ছয় ব্যাংকের ট্রেজারি প্রধানকে অপসারণের নির্দেশ দিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। এর মধ্যে পাঁচটি দেশি এবং একটি বিদেশি ব্যাংক। দেশি পাঁচ ব্যাংক হচ্ছে- ব্র্যাক ব্যাংক, সিটি ব্যাংক, ডাচ্-বাংলা ব্যাংক, প্রাইম ও সাউথইস্ট ব্যাংক। আর বিদেশি ব্যাংকটি হচ্ছে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক। তবে পরে ছয় ব্যাংকের ট্রেজারি প্রধানদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ ব্যাংক যে ব্যবস্থা নিয়েছিল তা প্রত্যাহার করা হয়েছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App