×

জাতীয়

কর বাড়ায় জমি রেজিস্ট্রি বন্ধ, রাজস্ব আয়ে বড় ধস

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৭ অক্টোবর ২০২৩, ০৮:১৯ পিএম

কর বাড়ায় জমি রেজিস্ট্রি বন্ধ, রাজস্ব আয়ে বড় ধস

ছবি: প্রতীকী

জমি রেজিস্ট্রেশন খরচ বেড়ে যাওয়ায় সারাদেশে সাব-কবলা জমি রেজিস্ট্রেশন এক প্রকার বন্ধ হয়ে গেছে। কমেছে ফ্ল্যাট বিক্রিও। টানা দুই সপ্তাহ ধরে এ অবস্থা চলায় সরকার শত শত কোটি টাকা রাজস্ব বঞ্চিত হচ্ছে। বেকার হয়ে পড়েছেন দলিল লেখক এবং এরসঙ্গে সংশ্লিষ্টরা। আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের সঙ্গে দলিল লেখক সমিতির নেতৃবৃন্দ একাধিকবার সাক্ষাৎ করলেও এর কোনো প্রতিকার মিলছে না। দেয়া হবে স্মারকলিপি। আগামী শনিবার ঢাকায় বৈঠক করে কর্মসূচি দিবেন সারাদেশের নেতৃবৃন্দরা। এ প্রসঙ্গে নিবন্ধন অধিদপ্তরের একজন উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা মঙ্গলবার (১৭ অক্টোবর) সন্ধ্যার পর জানান, এনবিআর কয়েক ধাপে কর বাড়িয়েছে। এতে সাধারণ মানুষ বিপাকে পড়েছেন। আইনমন্ত্রণালয় এ নিয়ে এনবিআরের সঙ্গে কথা বলেছেন। তারা এ নিয়ে কাজ করছে। তবে এমন কর নির্ধারণ দু:খজনক বলে মনে করেন এই কর্মকর্তা। তবে এনবিআরের জনসংযোগ কর্মকর্তা সৈয়দ এ মুমেন দাবি করেছেন, জমি রেজিস্টেট্রশনে কর কমানো হয়েছে। তবে উৎসে করের কারণে জমি রেজিস্ট্রেশনে জটিলতা হওয়ায় আরোপিত কর কমানো হবে কিনা এ ব্যাপারে তার জানা নেই বলেও জানান তিনি। বাংলাদেশ দলিল লেখক সমিতির মহাসচিব জুবায়ের আহমেদ ভোরের কাগজকে জানান, গেল ১ জুলাই থেকে সারাদেশে সাব কবলা দলিল এক প্রকার বন্ধ রয়েছে। উৎসে কর শতকরা ৪ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৮ টাকা করা হয়েছে। বাবার মৃত্যুর পর ওয়ারিশ সার্টিফিকেট দিয়ে রেজিস্ট্রি করা গেলেও নতুন ভূমি আইনের কারণে নামজারি ছাড়া দলিল হচ্ছে না। তিনি বলেন, কাঠা প্রতি রেজিস্ট্রি খরচ নির্ধারণ করে দিয়েছে। অনলাইনে পে-অর্ডার জমা দেয়ায় কোনো কারণে ওইদিন জমি রেজিস্ট্রি না হলে সেই টাকা অফেরৎযোগ্য হয়ে যাওয়ায় রেজিস্ট্রি কমেছে। তিনি বলেন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) নতুন করে উৎসে কর নির্ধারণ করায় রাজস্ব আয় কমে যাওয়ার বিষয়টি আইনমন্ত্রীকে একাধিকবার জানানো হয়েছে। তিনি সমাধানের আশ্বাস দিয়ে এনবিআর চেয়ারম্যানের সঙ্গে এ নিয়ে কথা বললেও সুরাহা হয়নি। আইনমন্ত্রী এ নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলবেন বলে জানিয়েছেন। রেজিস্ট্রি খরচ কোথাও শতকরা ৩০ আবার কোথাও ৪০ টাকা বেড়েছে। গুলশানে ২৭ লাখ টাকার জমি কিনলে রেজিস্ট্রি খরচ পড়বে ২৬ লাখ টাকা! উৎসে কর কাঠা প্রতি এক লাখ থেকে ধাপে ধাপে নির্ধারণ করা দু:খজনক উল্লেখ করে জুবায়ের আহমেদ বলেন, আজ (বুধবার) তারা আইনমন্ত্রীর কাছে স্মারকলিপি দিবেন। বুধবার থেকে সারাদেশে দলিল লেখকদের কলমবিরতি কর্মসূচি স্থগিত করে শনিবার সারাদেশের (৬১ জেলা) দলিল লেখক সমিতির নেতৃবৃন্দকে ঢাকার তেজগাঁও রেজিস্ট্রেশন কমপ্লেক্সে ডাকা হয়েছে। ওইদিন সারাদেশে কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। সাভার দলিল লেখক কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আলীম জানান, কর বাড়ায় সাব কবলা রেজিস্ট্রি এক প্রকার বন্ধ হয়ে গেছে। জমির ক্রেতারা খরচের হিসেবে নিয়ে চলে যাচ্ছেন। হঠাৎ এমন খরচের কথা শুনে অনেকের মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ার উপক্রম হয়েছে। এতে দলিল লেখকদের আয় রোজগার বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তারা পরিবার নিয়ে কষ্টে আছেন। জানা গেছে, জুলাই মাস থেকে জমি রেজিস্ট্রেশন ফি দ্বিগুণ করায় এমন বিড়ম্বনায় পড়েছেন ক্রেতারা। আয়কর বিধিমালার ৬ ধারায় বলা আছে, ঢাকা, চট্টগ্রাম ও নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় সম্পত্তি নিবন্ধন কর ৪ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৮ শতাংশ করা হয়েছে। গাজীপুর, মুন্সীগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, নরসিংদী এবং ঢাকা ও চট্টগ্রাম এলাকায় সিটি করপোরেশনের বাইরের এলাকা ও জেলা সদরে অবস্থিত পৌরসভায় ওই কর ৩ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৬ শতাংশ করা হয়েছে। পাশাপাশি দেশের যেকোনো পৌরসভার আওতাধীন সম্পত্তি কর ২ শতাংশ থেকে ৪ শতাংশ এবং বাকি এলাকাগুলোতে ১ শতাংশ থেকে কর বাড়িয়ে ২ শতাংশ করা হয়েছে। তবে রাজধানীর বিভিন্ন মৌজার জমির চুক্তিমূল্যের ৮ শতাংশ কিংবা এলাকাভিত্তিক কাঠা প্রতি নূন্যতম কর নির্ধারণ করা হয়েছে। নিবন্ধন ফি বেড়ে যাওয়ায় নিবন্ধনের সংখ্যাও কমে গেছে। সাব রেজিস্ট্রি কার্যালয়ে আগের মতো ভিড়ও নেই। অলস সময় কাটাচ্ছেন দলিল লেখকরা। একাধিক রেজিস্ট্রি অফিসের উমেদার ও নকলনবীশরা জানিয়েছেন, নতুন সিদ্ধান্তে কর কমেছে মনে হলেও বাস্তবে অধিকাংশ জমির নিবন্ধন কর বেড়েছে। জাতীয় সংসদে গত ২০ জুন নতুন আয়কর আইন পাসের পর জমি ও ফ্ল্যাটের উৎসে কর দ্বিগুণ হয়ে যায়। এর পর থেকেই ধস নামে জমি-ফ্ল্যাট নিবন্ধনে। এ খাতে রাজস্ব আয়ে ভাটা এবং সমালোচনা ও বিতর্কের মুখে ৩ অক্টোবর নিবন্ধন কর পুনর্নিধারণ করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। আগে সব ধরনের জমি নিবন্ধনে একই কর হার ছিল। পুনর্নিধারিত হারে মৌজার অবস্থান অনুযায়ী জমিকে পাঁচ শ্রেণিতে বিভক্ত করে কর ধার্য করা হয়েছে। এনবিআরের দাবি, এতে স্থানভেদে কাঠাপ্রতি সর্বোচ্চ ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত কর কমেছে। তবে প্রকৃত চিত্র পুরো উল্টো। এক-দুটি শ্রেণিতে কর কমলেও বাকিগুলোতে উল্টো বেড়েছে। উপজেলা পর্যায়ে নিবন্ধন খরচ বেশি বেড়েছে। গ্রামের মানুষ খুবই বিপাকে পড়েছেন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App