মুজিবনগর কমপ্লেক্সের ৬০০ ভাস্কর্য ভেঙে ফেললো দুর্বৃত্তরা
মেহেরপুর ও মুজিবনগর প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১২ আগস্ট ২০২৪, ০৫:২৬ পিএম
মুজিবনগরের ৬০০টি ভাস্কর্য ভেঙে ফেলেছে দুর্বৃত্তরা।
মুজিবনগরের ছোট বড় প্রায় ৬০০টি ভাস্কর্য ভেঙে ফেলেছে দুর্বৃত্তরা। গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের খবর ছড়িয়ে পড়লে ওইদিন বিকাল থেকে রাত প্রায় ১০টা পর্যন্ত দফায় দফায় হামলা করে এ ঘটনা ঘটিয়েছে দুর্বৃত্তরা। ভাস্কর্যগুলো মহান মুক্তিযুদ্ধের নানা ইতিহাস তুলে ধরতো পর্যটকদের কাছে। ভাস্কর্যগুলো ভাংচুর হয়েছে শুনে আফসোস করেছেন মুক্তিযোদ্ধাসহ স্থানীয়রা। তারা এর বিচার দাবি করেছেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সরকার পতনের খবর ছড়িয়ে পড়ার কিছুক্ষণ পর থেকে প্রায় দুই শতাধিক দুর্বৃত্ত রড, বাঁশ ও হাতুড়ি নিয়ে মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি কমপ্লেক্সে প্রবেশ করে। প্রথমে তারা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্যটির মাথা ভেঙে ফেলে। একই সময়ে এলোপাতাড়িভাবে আঘাত করে ১৭ এপ্রিলের গার্ড অব অনার ভাস্কর্যটিতে। আরো একটি দল ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানের আত্মসমর্থনের ভাস্কর্যগুলোতে আঘাত করে। তবে সেখানে খুব বেশি ভাঙচুর করতে পারেনি তারা। পরে কমপ্লেক্সের মধ্যে দেশের মানচিত্রের আদলে তৈরি করা মুক্তিযুদ্ধের ১১টি সেক্টরে যুদ্ধের বর্ণনা সংবলিত ছোট ভাস্কর্যগুলো ভেঙে আশপাশে ছুড়ে ফেলে। আরেকটি দল শহীদ স্মৃতিসৌধের প্রধান ফটকটি ভেঙে নিয়ে যায়।
আরো পড়ুন : যশোরে সংখ্যালঘু সুরক্ষা কমিশন গঠনসহ চার দফা দাবি
ওই সময়ে মুজিবনগর স্মৃতি কমপ্লেক্সের দায়িত্বে থাকা আনসার সদস্য সুমন আহমেদ বলেন, ৬০০টি ছোট-বড় ভাস্কর্য ভেঙে ফেলা হয়েছে। আমরা প্রথমে তাদের বাধা দেয়ার চেষ্টা করলে আমাদের ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিয়ে তারা ভাস্কর্যগুলো ভাঙতে শুরু করে। এসময় আমাদের এক সদস্য পড়ে গিয়ে আহত হন। একদল এসে কিছু‚ ভাস্কর্য ভেঙে চলে যায়। কিছুক্ষণ পর আবার আরেক একদল এসে স্মৃতি কমপ্লেক্সের মানচিত্র ও গ্যালারির সকল ভাস্কর্য ভেঙে ফেলে। দূর্বৃত্তরা সীমনা রেলিং, স্মৃতিসৌধের প্রধান ফটক, পানির পাম্পসহ বিভিন্ন মালামাল লুট করেও নিয়ে গেছে।
মুজিবনগর স্মৃতি কমপ্লেক্সে স্থাপিত আনসার ক্যাম্পের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সুবেদার রবিউল ইসলাম বলেন, যখন দুর্বৃত্তরা এখানে হামলা শুরু করে, তখন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার মুঠোফোনে নির্দেশনা চাওয়া হয়েছিল। তিনি কোনো নির্দেশনা দিতে পারেননি। এ কারণে আনসার সদস্যরা নিজেদের জীবন ও অস্ত্রের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ব্যারাকে অবস্থান নেন।
সোমবার সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, মুজিবনগর কমপ্লেক্সের মূল ফটকে কোনো নিরাপত্তাকর্মী নেই। ভিতরে প্রবেশ করে মনে হলো যেন এক মরুভূমি। দর্শনার্থীদের পদভারে মুখরিত মুজিবনগর মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি কমপ্লেক্সটি আজ নির্বীকার হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। মুক্তিযুদ্ধ কমপ্লেক্সের মধ্যে রয়েছে পর্যটন মোটেল, মসজিদ ও রাষ্ট্রীয় অতিথিদের বাংলো। এগুলো ভাংচুর করা হয়নি। এগুলো পেরিয়ে স্মৃতি কমপ্লেক্স। কমপ্লেক্সের সামনে সারি সারি ভাস্কর্য। সখানে সব ভাস্কর্য কমবেশি ভাঙচুর করা হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যটির মাথা ভেঙে ফেলা হয়েছে।
তাজউদ্দীন আহমদের ভাস্কর্যটিকে আঘাত করা হয়েছে। গার্ড অব অনারের ভাস্কর্যগুলোতে এলোপাতাড়ি আঘাত করা হয়েছে। ভাস্কর্যগুলো ভেঙে পড়ে আছে। চেনার উপায় নেই সেগুলো। বাংলাদেশের মানচিত্রের ওপরে নির্মিত মুক্তিযুদ্ধকালীন ১১টি সেক্টরের আদলে তৈরি ছোট ভাস্কর্যগুলো একেবারে ভেঙে গুঁড়িয়ে দেয়া হয়েছে। কমপ্লেক্সের পেছনে জয় বাংলা তোরণের ‘জয় বাংলা’ লেখাটি খুলে নিয়ে গেছে দুর্বৃত্তরা। তবে অক্ষত রয়েছে মসজিদ, এতিমখানা, বাংলোগুলো।