আরজি কর কাণ্ড
ময়নাতদন্তের রিপোর্ট প্রকাশ
কাগজ ডেস্ক
প্রকাশ: ২০ আগস্ট ২০২৪, ১০:১৭ এএম
ছবি: সংগৃহীত
পশ্চিমবঙ্গের আলোচিত আরজি কর হাসপাতালের চিকিৎসককে ধর্ষণের পর শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে। তার শরীরের বাইরে ও ভেতরে একাধিক ক্ষত চিহ্ন পাওয়া গেছে। নিহতের ময়নাতদন্তের রিপোর্টে এমটিই উঠে এসেছে।
সোমবার (১৯ আগস্ট) ৯ আগস্ট সন্ধ্যা ৬ টা থেকে ৭ টার মধ্যে আরজি কর হাসপাতালের চিকিৎসককে ধর্ষণ-হত্যার পর ময়নাতদন্ত করা হয়। হাসপাতালটির চিকিৎসকেরাই এ ময়নাতদন্ত করেন।
ময়নাতদন্তের রিপোর্ট অনুযায়ী, নারী চিকিৎসকের নাক-মুখ বন্ধ করে শ্বাস রোধ করার কারণেই তার মৃত্যু হয়েছে। তার শরীরের বহিরাংশে ১৬টি ও ভেতর ৯টি ক্ষতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। এছাড়াও যৌন নির্যাতনেরও আলামত পাওয়া গেছে। হত্যার ধরনটি নরহত্যার পর্যায়ে পড়ে।
প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, তার গাল, ঠোঁট, নাক, ঘাড়, বাহু, হাঁটু ও যৌনাঙ্গে বাহ্যিক ক্ষত পাওয়া গেছে। অভ্যন্তরীণ ক্ষত পাওয়া গেছে ঘাড়, মাথার ত্বক ও অন্যান্য অংশের পেশিতে। মৃত্যুর আগে তাকে নির্মমভাবে আঘাত করে মারা হয়েছে বলে ময়নাতদন্তের রিপোর্টে উঠে এসেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, নাক-মুখ বন্ধ করে শ্বাস রোধ করার কারণেই (ওই চিকিৎসকের) তার মৃত্যু হয়। হত্যার ধরনটি নরহত্যার পর্যায়ে পড়ে। ভুক্তভোগীর যৌনাঙ্গে কোনো কিছু জোর করে প্রবেশের আলামত পাওয়া গেছে। চিকিৎসকদের ধারণা, সম্ভবত তাকে যৌন নিপীড়ন করা হয়েছিল।
বিভিন্ন মহল থেকে অভিযোগ কর হয়, নির্যাতিতার দেহে ‘১৫০ গ্রাম সিমেন’ পাওয়া গেছে। কলকাতা হাই কোর্টে তার পরিবার যে পিটিশন দায়ের করেছে, সেখানেও এই বিষয়টির উল্লেখ রয়েছে। তবে ময়নাতদন্তের রিপোর্টে ‘সিমেন’ সংক্রান্ত কোনো উল্লেখ নেই।
রিপোর্টে লেখা হয়েছে, নির্যাতিতার ‘এন্ডোসার্ভিক্যাল ক্যানাল’ থেকে ‘সাদা ঘন চটচটে তরল’ সংগ্রহ করা হয়েছে। তবে সেই তরল কী, তা উল্লেখ নেই রিপোর্টে। রিপোর্টে ‘এক্সটারনাল ও ইন্টারনাল জেনিটালিয়া’ বলে এটির উল্লেখ রয়েছে, যার ওজন ১৫১ গ্রাম।
সাধারণত ময়নাতদন্তের রিপোর্টে নিয়ম মেনে মৃতদেহের বিভিন্ন অংশের ওজন উল্লেখ করা হয়। এ ক্ষেত্রেও তা-ই করা হয়েছে। এক ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞ জানিয়েছেন, যে সাদা চটচটে তরলের কথা উল্লেখ করা হয়েছে, সেটি কী বস্তু তা ফরেন্সিক রিপোর্ট থেকে জানা যাবে। ময়নাতদন্তের রিপোর্টে এমন কিছু লেখা যায় না। কারণ, সেটা পরীক্ষাসাপেক্ষ বিষয়।
ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনটি তৈরি করেছেন আরজি কর হাসপাতালের ফরেনসিক মেডিসিন ও টক্সিকোলজি বিভাগের অধ্যাপক অপূর্ব বিশ্বাস, একই হাসপাতালের একই বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক রিনা দাস এবং এনআরএস মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মলি ব্যানার্জি।
আরো পড়ুন: আমিরাতে ৫৭ বাংলাদেশির শাস্তি হওয়ার পেছনে কনস্যুলেটের ইন্ধন নেই
উল্লেখ্য, শুক্রবার আরজি কর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের সভাকক্ষে এক নারী চিকিৎসকের মরদেহ পাওয়া যায়। দীর্ঘ ৩৬ ঘণ্টা দায়িত্ব পালন শেষে ওই দিন রাতে তিনি সেখানে বিশ্রাম নিতে গিয়েছিলেন। ৩১ বছর বয়সী ওই শিক্ষানবিশ নারী চিকিৎসকের মরদেহটি ছিল রক্তাক্ত, শরীরের নানা জায়গায় ছিল ক্ষতের চিহ্ন। এ ঘটনায় কলকাতার পাশাপাশি গোটা ভারতজুড়ে চিকিৎসকরা বিক্ষোভে ফেটে পড়েন, যেটি এখনো চলছে।