×

আন্তর্জাতিক

ভারতীয় নাগরিকের হৃদপিণ্ডে বাঁচালো পাকিস্তানের আয়েশার প্রাণ

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১১:৫৬ এএম

ভারতীয় নাগরিকের হৃদপিণ্ডে বাঁচালো পাকিস্তানের আয়েশার প্রাণ

ছবি: সংগৃহীত

ভারতের চেন্নাইয়ের এমজিএম হাসপাতালে পাকিস্তানের আয়েশার হার্ট প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। ২০১৯ সালে চেন্নাইয়ের এক হৃদরোগ বিশেষজ্ঞের সঙ্গে প্রথম দেখা করেন আয়েশা রাশিদ। এর কিছুদিনের মধ্যেই প্রথমবার হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হন তিনি।

আয়েশা রশিদের মাত্র ৭ বছর বয়সে হার্টের সমস্যা দেখা দেয়। তার হার্টের ২৫ শতাংশ অকেজো ছিল। একসময় ধীরে ধীরে তার হৃদযন্ত্রের স্বাভাবিক কাজ করা বন্ধ হয়ে যায়। পরে ১৯ বছরের আয়েশার হৃৎপিণ্ড প্রতিস্থাপন হয়েছে ভারতের চেন্নাইয়ের এমজিএম হাসপাতালে। খবর বিবিসির।

প্রতিবেদনটিতে আয়েশার অভিভাবক সানোবর রাশিদের বরাতে বলা হয়- ‘আমরা পাকিস্তানেও চেষ্টা করেছিলাম কিন্তু খরচ বেশি হওয়ায় সম্ভব হয়নি। কিন্তু ভারতের চিকিৎসকরা আমাদের জন্য যা করেছেন তা অবিশ্বাস্য। এই মুহূর্তে আমার মনে যা চলছে তা ভাষায় প্রকাশ করতে পারবো না।’

এ সময় সানোবর রাশিদের চোখে-মুখে ছিল স্বস্তি আর খুশির ঝিলিক। চেন্নাইয়ের ওই হাসপাতালের ১১ তলায় বসে কথা বলছিলেন তিনি। ১০ মাস আগে মেয়ের হৃৎপিণ্ড প্রতিস্থাপনের আশায় ভারতে এসেছিলেন রশিদ। তখন আয়েশার হৃদপিণ্ডে অস্ত্রোপচার করে কৃত্রিম যন্ত্র বসানো হয়। কিন্তু করাচিতে ফিরে আসার ১০ মাস পর তার হার্টের ডানপাশ কাজ করা বন্ধ করে দেয়। এসময় চিকিৎসকরা আয়েশার হার্ট প্রতিস্থাপনের পরামর্শ দেয়। এজন্য তাদের ভারত বা কানাডায় যাওয়ার পরামর্শ দেয়। পরে মেয়ের চিকিৎসার জন্য চেন্নাইয়ের এক চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করেন সানোবর। এসময় তার কাছে আয়েশার অস্ত্রোপচার এবং চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থও ছিল না।

তবে এসব আয়েশার চিকিৎসার জন্য অন্তরায় হয়ে দাঁরায়নি। এ পর্যায়ে চিকিৎসকরা তাদের পাশে দাড়ায়। এমজিএম হাসপাতালের হার্ট ট্রান্সপ্লান্ট ইউনিটের ডিরেক্টর ডা. বালাকৃষ্ণন ২০১৯ সাল থেকে আয়েশার চিকিৎসা করে আসছিলেন। তিনি আয়েশাদের পাশে দাঁড়ান। 

ডা. বালাকৃষ্ণ বলেন- ‘আয়েশা যখন প্রথমবার এখানে এসেছিল, সে সময় তার হার্ট অ্যাটাক হয়। সে সময় এক্সট্রাকর্পোরিয়াল মেমব্রেন অক্সিজেনেশন নামে এক ধরনের এক্সট্রাকর্পোরিয়াল লাইফ সাপোর্ট বা একমো ব্যবহার করা হয়েছিল। আমরা একটি কৃত্রিম রক্ত পাম্পিং ডিভাইসও লাগিয়েছিলাম। পরে আয়েশার স্বাস্থ্যের উন্নতি হলে ওকে বাড়ি পাঠানো হয়। কিন্তু পাকিস্তানে কৃত্রিম হার্ট পাম্প পর্যবেক্ষণের ব্যবস্থা না থাকায় তার একটি রক্তনালীতে লিকেজ দেখা দেয়।’

১৯ বছরের আয়েশা রাশিদ কয়েক বছর ধরেই ডা. বালাকৃষ্ণনের চিকিৎসাধীন ছিলেন। তাকে যথাসম্ভব সাহায্য করার চেষ্টা করেছেন ওই বিশেষজ্ঞ। তার মধ্যস্থতায় দিল্লির এক পরিবার তাদের ৬৯ বছরের এক মৃত সদস্যের হৃদপিণ্ড দান করতে রাজি হয়ে যায়।

এমজিএম হাসপাতালের যুগ্ম পরিচালক সুরেশ রাও বলেন- ‘ভারতে প্রতিস্থাপন নীতি অনুসারে অঙ্গদানের ক্ষেত্রে প্রথম অগ্রাধিকার দেশের নাগরিকদের দেয়া হয়। তাই আয়েশাকে ১০ মাস অপেক্ষা করতে হয়েছে। এই হার্ট আয়েশার পক্ষে পাওয়ার সম্ভাবনা তখনই তৈরি হয় যখন দেশে অন্য কেউ এ হার্টের জন্য দাবি জানায়নি। এই হার্ট না পেলে ওকে বাঁচানো সম্ভব হত না।’

ডা. সুরেশ রাও আরো বলেন, ‘যখন জানতে পারি যে ওই ব্যক্তির পরিবার মরণোত্তর হার্ট দান করতে রাজি, তখন আমরা আয়েশাকে অস্ত্রোপচারের জন্য প্রস্তুত করি। ৫ ঘণ্টার মধ্যে দিল্লি পৌঁছে যায় ওই হার্ট।’

আয়েশার চিকিৎসার পাশাপাশি তার অন্যান্য ব্যয়ভার বহন করছিলেন ডা. বালাকৃষ্ণ। এছাড়া অনেক হৃদয়বান ব্যাক্তিও অর্থ সহায়তার হাত বাড়ান। 

চিকিৎসকদের কৃতজ্ঞতা জানিয়ে আয়েশা বিবিসিকে বলেন- ‘অস্ত্রপচারের পর আমি আগের চেয়ে অনেকটা ভাল বোধ করছি। ডাক্তার বলেছে আমি ২ মাসের মধ্যে বাড়ি ফিরতে পারব। আমি ফিরে যেতে চাই, পড়াশোনা চালিয়ে যেতে চাই। ভবিষ্যতে ফ্যাশন ডিজাইনার হতে চাই আমি।’

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App