×

আন্তর্জাতিক

রাস্তা থেকে মাদকাসক্তদের তুলে যা করছে তালেবান

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৪ এপ্রিল ২০২৩, ১২:২০ এএম

রাস্তা থেকে মাদকাসক্তদের তুলে যা করছে তালেবান

ছবি: সংগৃহীত

আমি কিছু মাদক সংগ্রহ করতে গেছিলাম সেতুর নিচে। ঠিক সেই সময় টের পেলাম একটা হাত আমাকে পেছন থেকে ধরে ফেললো। তারা ছিল তালেবানের লোক এবং আমাদেরকে ধরতেই তারা এসেছিলো বলে মন্তব্য করেছেন মোহামেদ ওমর। তখন তিনি ছিলেন কাবুল শহরের পশ্চিম প্রান্তে পুল-এ-সুখতা নামের একটি সেতুর নিচে। সেখানেই হঠাৎ করে উপস্থিত হয় তালেবান সেনারা।

কাবুলের নেশাখোরদের একটা পরিচিত বিচরণস্থল হচ্ছে এই জায়গাটা। কট্টর ইসলামপন্থী গোষ্ঠীটি ২০২১ সালের ১৫ আগস্ট আফগানিস্তানের রাষ্ট্রক্ষমতায় ফিরে আসার অনেক আগে থেকেই এই পুল-এ-সুখতা এলাকাটি এ জন্য কুখ্যাত। খবর বিবিসির।

গত কয়েক মাস ধরে সেখানে মাদকবিরোধী অভিযান শুরু করেছে তালেবান। এই সেতু এলাকা ছাড়াও কাবুলের পার্ক বা পাহাড়ের চূড়া থেকে মাদকাসক্ত লোকদের ধরে নিয়ে যাচ্ছে তারা।

তাদের বেশিরভাগকেই প্রথমে নিয়ে যাওয়া হয় একটি সাবেক মার্কিন সামরিক ঘাঁটিতে- যাকে এখন মাদকাসক্তদের জন্য একটা অস্থায়ী পুনর্বাসন কেন্দ্রে পরিণত করা হয়েছে।

ওমর বলেন, আমি সেখানে যেতাম বন্ধুদের সঙ্গে দেখা করতে আর নেশা করতে। আমার প্রাণের ভয় ছিলো না, কারণ মৃত্যু তো আল্লাহর হাতে।

তিনি আরো বলেন, তারা আমাদের পেটানোর জন্য পাইপ ব্যবহার করতো। আমি ব্রিজ ছেড়ে যেতে চাইনি, তাদের ঠেকাতেও চেষ্টা করেছিলাম, তাতে আমার একটা আঙুল ভেঙে যায়। শেষ পর্যন্ত তারা তাড়িয়ে দিতে পেরেছিলো আমাদের।

এরই মধ্যে এ ঘটনার ভিডিও প্রকাশ করেছে তালেবান সরকার। তাতে দেখা যায়, তালেবান সেনারা ব্রিজের নিচে থেকে অতিরিক্ত মাদক সেবন করে মারা যাওয়া লোকদের দেহ সরিয়ে নিচ্ছে। ধূসর রঙের কাপড়ে জড়িয়ে মরদেহগুলো নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। আরো কিছু লোক ছিল জীবিত কিন্তু সংজ্ঞাহীন- তাদেরকে স্ট্রেচারে করে নেয়া হচ্ছে।

যে নিরাময় কেন্দ্রটিতে ওমরকে নিয়ে যাওয়া হয় তা এক হাজার শয্যার, তবে রোগী আছে তিন হাজার। সেখানকার পরিবেশ খুবই জরাজীর্ণ। রোগীদের সেখানে মোটামুটি ৪০ দিনের জন্য রাখা হয়। এ সময়টা তাদের একটা নিবিড় কর্মসূচির ভেতর দিয়ে যেতে হয় এবং তারপর তাদের ছেড়ে দেয়া হয়।

তালেবান যাদেরকে রাস্তা থেকে তুলে নিচ্ছে তাদের বেশিরভাগই পুরুষ। তবে নিরাময় কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়াদের মধ্যে কিছু নারী ও শিশুও রয়েছে।

ওমর বলেন, একসময় আমি ক্যাম এয়ার বিমানসংস্থার একজন ফ্লাইট অ্যাটেন্ড্যান্ট ছিলাম। তখন আজ দুবাই, কাল তুরস্ক, পরশু ইরান-এমনই ছিলো আমার জীবন।

তিনি জানিয়েছেন, কাবুলের পতনের পর চাকরি হারান তিনি। অর্থকষ্ট ও অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ তাকে মাদকের দিকে নিয়ে যায়। মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রে আসার পর থেকে ওমরের মধ্যে ভালো হয়ে ওঠার একটা প্রতিজ্ঞা তৈরি হয়েছে।

ওমর বলেন, আমি বিয়ে করতে চাই, পরিবার নিয়ে স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে চাই। এ হাসপাতালের চিকিৎসকরা খুবই দয়ালু। তারা আমাদের ভালোর জন্য সবকিছুই করছেন।

চিকিৎসকদের চোখে, এই কেন্দ্রে যা করা হচ্ছে তা খুবই প্রাথমিক স্তরের কার্যক্রম। তালেবান এখানে ক্রমাগত আরো বেশি লোক পাঠাচ্ছে, আর তাদের রাখার জায়গা বের করতে স্টাফরা হিমশিম খাচ্ছেন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App