×

শিক্ষা

ঢাবিতে শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলার প্রতিবাদে মানববন্ধন

Icon

ঢাবি প্রতিনিধি

প্রকাশ: ১৪ মার্চ ২০২৪, ০৪:৪৮ পিএম

ঢাবিতে শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলার প্রতিবাদে মানববন্ধন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) বঙ্গবন্ধু টাওয়ারে রমজান উপলক্ষ্যে 'প্রোডাক্টিভ রামাদান' শীর্ষক আলোচনা সভাকে কেন্দ্র করে আইন বিভাগের শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলার প্রতিবাদে মানববন্ধন ও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে স্মারকলিপি প্রদান করেছে বিভাগটির শিক্ষার্থীরা। 

বৃহস্পতিবার (১৪ মার্চ) দুপুর সাড়ে ১২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদের সামনে বিভাগটির বিভিন্ন ব্যাচের শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে মানববন্ধনটি অনুষ্ঠিত হয়। মানববন্ধন শেষে প্রতিবাদী মিছিল নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও প্রক্টর বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করেন শিক্ষার্থীরা। 

মানববন্ধনে বক্তারা রমজান মাসে রোজা রাখা অবস্থায় বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের ওপর বহিরাগত ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের হামলার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান। প্রতিবাদের অংশ হিসেবে হাতে কালো ব্যাচ ধারণ ও এক মিনিট নীরবতা পালন করে আন্দোলনকারীরা। এছাড়াও এই ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নীবর ভূমিকাকে ধিক্কার জানিয়ে দ্রুততম সময়ের মধ্যে তদন্ত সাপেক্ষে দ্রুত বিচার দাবি করেন। দাবি মানা না হলে এসময় কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দেন শিক্ষার্থীরা। 

এ সময় তাদের হাতে 'রোজাদার ছাত্রদের ওপর বর্বর সন্ত্রাসী হামলা, প্রশাসন কই?', 'টনক, কবে নড়বে তুমি?', 'আবরার ফাহাদের মতো শহিদ হলেই কি তবে বিচার পাবো আমরা?', 'আইন কোথায়?', 'সন্ত্রাসবাদ নিপাত যাক' ইত্যাদি লেখা সংবলিত প্ল্যাকার্ড দেখা যায়। 

মানববন্ধনে বিভাগটির ৪৮ ব্যাচের শিক্ষার্থী আনিকা তাহসিনার সঞ্চালনায় শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে একাত্মতা জানিয়ে বিভাগটির অধ্যাপক ড. মো. নজরুল ইসলাম (আসিফ নজরুল) বলেন, গতকাল বঙ্গবন্ধু টাওয়ারে আইন বিভাগের শিক্ষার্থীদের ওপর বহিরাগত ছাত্রলীগের কর্মীদের দ্বারা যে হামলা হয়েছে সেটি বর্বরোচিত ও ফৌজদারি অপরাধ। শিক্ষার্থীদের ওপর শাহবাগ থানা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা হামলাকে 'এটেম্পড টু মার্ডার অফেন্স' উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, এধরনের হামলা বিভিন্ন সময়ে ক্যাম্পাসে ঘটে চলেছে।

আরো পড়ুন: সাংবাদিকতা করায় ১০ শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার করেছে ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি

শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা দিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে তিনি আরো বলেন, বহিরাগতরা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের এসে মেরে যাবে এখানে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কিছু করার নাই? আমরা চাই এটার সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে বিচার হোক। শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগের এই হামলার ঘটনায় শুধু বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ নয়, দেশের আইন ও বিচার ব্যবস্থার কাছে তিনি আবেদন জানান, যে আইন বিভাগের শিক্ষার্থীরা ক্লাসরুমে পড়ছে- বিনা বিচারে কেউ কাউকে আক্রমণ করতে পারবে না, সেই শিক্ষার্থীদেরকে ক্যাম্পাসের মধ্যেই ছাত্রলীগের 'গুণ্ডারা' মারধর করে কী বার্তা দিয়ে গেছে? 

যখন কাউকে মারা হয় তখন মারধরকে বৈধতা দিতে ভুক্তভোগীদের 'শিবির' ট্যাগ দেয়া হয় উল্লেখ করে তিনি ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগের উদ্দেশ্যে আরো বলেন, আপনাদের এতো শিবির ভীতি থাকলে শিবির নিষিদ্ধ করেন না কেন? একটা সংগঠন নিষিদ্ধ না হয়েও যে এই সংগঠন করে তাকে আপনারা মারতে পারেননা। আন্দাজ করেও মারা যাবে না। এটা আইনের দৃষ্টিতে অপরাধ। এসময় ছাত্রলীগের উচ্চপদস্থ নেতৃবৃন্দের কাছে হামলার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের বহিষ্কার করার দাবি জানান তিনি। 

এসময় শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে বিভাগটির ৫০ তম ব্যাচের শিক্ষার্থী সাদেকুন নাহার বলেন, মসজিদ থেকে বের করে দিয়ে শিক্ষার্থীদের ওপর বহিরাগত ছাত্রলীগ দিয়ে পেটানোর ঘটনাকে কোনোভাবেই 'জাস্টিফাই' করা যায় না। আমাদের ভাইদের ওপর এরকম ন্যাক্কারজনক হামলা পুরোপুরি অবৈধ। 

এসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে উদ্দেশ্য করে এই নারী শিক্ষার্থী আরো বলেন, আপনি আমাদের সবারই অভিভাবক। আপনার তত্ত্বাবধানে থেকে দিনে-দুপুরে কেন আমাদেরকে বহিরাগতরা এসে মেরে যাবে? আমরা কেন অতর্কিত হামলার শিকার হবো? 

এসময় বিভাগটির ৪৩ ব্যাচের শিক্ষার্থী আখতার হোসেন বলেন, মসজিদ থেকে বের করে শিক্ষার্থীদের পিটিয়েছে ছাত্রলীগ। এ ঘটনায় প্রশাসন প্রক্টরিয়াল টিম পাঠাননি। এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়ের কেউই আহতদের কোনো খোঁজ খবর নেননি। 

আরো পড়ুন: ঢাবিতে আইন বিভাগের শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলা, আহত ৫

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরের ভূমিকাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তিনি আরো বলেন, একজন দায়িত্বশীল প্রক্টরের আচরণ কি এরকম হওয়ার কথা ছিলো, যেখানে তার শিক্ষার্থীরা মার খাচ্ছে আর তিনি মিটিংয়ে বসে থাকার অজুহাত দিচ্ছেন। আমরা আজকে উনাকে স্মারকলিপি দিতে যাবো। আমরা দেখতে চাই শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা বাদে তিনি কোন কাজে ব্যস্ত আছেন? এসময় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা 'শেইম, শেইম' দুয়োধ্বনি দেন। 

মানববন্ধনে বিভাগটির ৪৯ তম ব্যাচের আরেক নারী শিক্ষার্থী আয়েশা সিদ্দিকা জুঁই বলেন, আমরা আমাদের ক্যাম্পাসে কোনোভাবেই নিরাপদ না। রাস্তা, ফুটপাতসহ সবখানে আমাদের ঝুঁকি নিয়ে চলতে হয়। বর্তমানে এমন অবস্থা এসে দাঁড়িয়েছে যে, আমাদের মার খাওয়ার জন্য শুধু বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী- এই পরিচয় থাকাটাই যথেষ্ট।  আমরা চাই তদন্ত সাপেক্ষে হামলার ঘটনায় দ্রুত অপরাধীদের শাস্তির আওতায় আনা হোক। 

মানববন্ধনে বিভাগের ৫০ ব্যাচের শিক্ষার্থী মাহমুদ শাকিল বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে একটি 'অমেরুদণ্ডী কর্তৃপক্ষ' উল্লেখ করে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা প্রদানের জন্য জোর দাবি জানান। এসময় তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কোনোভাবে তার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারছে না। কোনো ঘটনায় কাউকে মারা হলে ওই ঘটনাকে জাস্টিফাই করার জন্য তখন 'শিবির' ট্যাগ দেয়া হয়। 

উল্লেখ্য, এর আগে গত বুধবার (১৩ মার্চ) দুপুরে জোহরের নামাজের পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু টাওয়ারের মসজিদে রমজান বিষয়ক ধর্মীয় আলোচনার জের ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের একদল শিক্ষার্থীর ওপর ছাত্রলীগের হামলার অভিযোগ উঠে। 

হামলায় শাহবাগ থানা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তাওহিদুল সুজন নেতৃত্ব দিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। তিনি ছাত্রলীগের মহানগর দক্ষিণ শাখার সাধারণ সম্পাদক সজল কুন্ডুর অনুসারী বলে জানা গেছে। এ ঘটনায় বঙ্গবন্ধু টাওয়ার কল্যাণ সমিতির সভাপতি সিরাজুল হক সরাসরি জড়িত ছিলেন বলে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা দাবি করেন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App