×

শিক্ষা

ফের ইবির গণরুমে র‍্যাগিং, শিক্ষার্থীকে নগ্ন করে নির্যাতন

Icon

ইবি প্রতিনিধি

প্রকাশ: ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১২:৩৫ পিএম

ফের ইবির গণরুমে র‍্যাগিং, শিক্ষার্থীকে নগ্ন করে নির্যাতন

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) নবীন এক শিক্ষার্থীকে নগ্ন করে নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে শাখা ছাত্রলীগের দুই কর্মীর বিরুদ্ধে। নির্যাতনে ভুক্তভোগীকে রড দিয়ে মারা, নগ্ন করে টেবিলের উপর দাঁড় করিয়ে রাখা ও পর্ণ ভিডিও দেখতে বাধ্য করা হয় বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীর।

গত বুধবার (৭ ফেব্রুয়ারি) রাতে লালন শাহ হলের গণরুমে (১৩৬ নম্বর কক্ষে) রাত ১২ টা থেকে ভোর পর্যন্ত এই র‍্যাগিংয়ের ঘটনা ঘটে। 

ভুক্তভোগী বিশ্ববিদ্যালয়ের আল-ফিকহ এবং লিগ্যাল স্টাডিজ বিভাগের ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। অন্যদিকে অভিযুক্তরা হলেন, শারীরিক শিক্ষা বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মুদাচ্ছির খান কাফি এবং ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের মোহাম্মদ সাগর। তারা উভয়েই শাখা ছাত্রলীগের কর্মী এবং সাধারণ সম্পাদক নাসিম আহমেদ জয়ের অনুসারী বলে জানা গেছে।

ভুক্তভোগী ও হলের শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, ভুক্তভোগী ও অভিযুক্তরা লালন শাহ হলের ১৩৬ নম্বর রুমে থাকেন। গত ৭ ফেব্রুয়ারি রাতে ওই কক্ষে অভিযুক্তরাসহ কয়েকজন পরিচয়পর্বের নামে ভুক্তভোগীকে ডাকেন। শুরু থেকেই তারা ভুক্তভোগীর বাবা-মায়ের নাম তুলে গালিগালাজ করতে থাকে। এবং ভুক্তভোগীকে বিভিন্ন অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি করতে বাধ্য করা হয়। এসময় সে অস্বীকৃতি জানালে তাকে বারবার রড দিয়ে মারা হয়। পরে অভিযুক্তরা ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীকে জোরপূর্বক উলঙ্গ করে টেবিলের উপর দাঁড় করিয়ে রাখেন। উলঙ্গ অবস্থায় ভুক্তভোগীকে ‘নাকে খত’ (মেঝেতে নাক লাগিয়ে নির্দিষ্ট সীমানা অতিক্রম করা) দেয়া সহ বিভিন্নভাবে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করা হয়। এছাড়াও উলঙ্গ অবস্থায় তাকে পর্ণোগ্রাফি ভিডিও দেখতেও বাধ্য করেন অভিযুক্তরা। এভাবে রাত সাড়ে ১২ টা থেকে ভোর সাড়ে ৪টা পর্যন্ত দফায় দফায় চলে নির্যাতন। এছাড়া ঘটনার বিষয়ে কাউকে যেন না জানায় সেজন্য অভিযুক্তরা ভুক্তভোগীকে বিভিন্নভাবে ভয়ভীতি দেখান এবং ৩/৪ বার তার বিছানাপত্র রুমের বাইরে ফেলে দেন।

আরো পড়ুন: পাওনা টাকা চাওয়ায় ক্যান্টিন মালিককে ছাত্রলীগ নেতার মারধর

এদিকে, ঘটনার পরদিন দুপুরে জিয়া মোড়ে শাখা ছাত্রলীগ কর্মী হাফিজ এবং নাসিম আহমেদ মাসুমসহ কিছু নেতাকর্মীরা বিষয়টি সমাধান করে দেন। তাদের নির্দেশে অভিযুক্তরা ভুক্তভোগীর কাছে ক্ষমা চান। এসময় হাফিজ অভিযুক্তদের চড়-থাপ্পড় মারেন। পরে দ্বিতীয় দফায় রাতে শাখা ছাত্রলীগের কর্মী শাহিন আলম, নাসিম আহমেদ মাসুম এবং লিখন লালন শাহ হলের ১৩৬ নম্বর কক্ষে বসে ভুক্তভোগী এবং অভিযুক্তদের মাঝে বিষয়টি সমাধান করে দেন।

এ ঘটনায় মধ্যস্থতাকারী ছাত্রলীগ কর্মী নাসিম আহমেদ মাসুম বলেন, ঘটনাটি মিটমাট হয়ে গেছে। আমি এই বিষয়ে আর কোন কথা বলতে চাই না। 

ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘গত বুধবার আমার সাথে এমন একটি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেছে। তবে পরে হলের ছাত্রলীগের সিনিয়র ভাইয়েরা বিষয়টা মিটমাট করে দেয়। মিটমাটের পর অভিযুক্তদের হলে তেমন একটা দেখা যায়নি।

আরো পড়ুন: জাবির ভর্তি পরীক্ষা ২২ ফেব্রুয়ারি

অভিযুক্ত শিক্ষার্থী মোহাম্মদ সাগর বলেন, ‘এ রকম কোন ঘটনা ঘটেনি। এ বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। ওইদিন আমি হলের বাইরে ছিলাম।’ এছাড়া শুরুতে তিনি হলে ছিলেন না বলে জানালেও কথার এক পর্যায়ে তিনি ওইদিন পাশের রুমে ছিলেন বলে জানান। এবং অন্য অভিযুক্ত মুদাচ্ছির খান কাফির মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন করেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নাসিম আহমেদ জয় বলেন, কারো ব্যক্তিগত কাজের দায় সংগঠন নেবে না। ঘটনা শোনার পর আমি ভুক্তভোগীর জন্য হলে একটি সিটের ব্যবস্থা করে দিয়েছি। আমরা সবসময় ভুক্তভোগীর পাশে আছি। বিষয়টি মীমাংসা করা হয়েছে। যদি ভুক্তভোগী এ বিষয়ে অভিযোগ দেয় এবং অভিযুক্তরা ছাত্রলীগ কর্মী হয়। তবে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

এদিকে ছাত্রলীগ কর্মীদের মধ্যস্থতায় বিষয়টি সমাধান করায় এবং বিশেষ চাপে প্রশাসন বরাবর কোনো অভিযোগ দেয়নি ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী। তবে ভুক্তভোগী অভিযোগ দিলে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে নিশ্চিত করেছেন লালন শাহ হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. আকতার হোসেন এবং প্রক্টর অধ্যাপক ড. শাহাদৎ হোসেন আজাদ। 

প্রসঙ্গত, এর আগে গত বছরের জুনে একই হলের একই কক্ষে দুই ছাত্রলীগকর্মী দ্বারা এক নবীন ছাত্রকে নগ্ন করে র‍্যাগিংয়ের ঘটনা ঘটে। র‍্যাগিংয়ে ভুক্তভোগী ছাত্রকে একটি প্লাস্টিকের বোতল কেটে তার সাথে যৌনসঙ্গমে বাধ্য করা হয়। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী বিচার চেয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বরাবর লিখিত অভিযোগ দিলেও পরে ছাত্রলীগের বিশেষ চাপে অভিযোগ তুলে নিতে বাধ্য হয় ভুক্তভোগী ছাত্র। 

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App