×

অর্থনীতি

বিজিএমইএ ভোটার তালিকায় মৃত ব্যক্তির নাম

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০৮:৪৪ পিএম

বিজিএমইএ ভোটার তালিকায় মৃত ব্যক্তির নাম

আগামী ৯ মার্চ দেশের পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর পরিচালনা পর্ষদের (২০২৪-২৬) নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। চূড়ান্ত ভোটার তালিকায়ও মৃত ব্যক্তির নাম রয়েছে বলে অভিযোগ করেছে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্ধিতায় থাকায় প্যানেল ফোরাম। প্রায় শুরু থেকেই ভোটার তালিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে আসছে এই প্যানেল। এবার নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ না করারও আহ্বান জানিয়েছে প্যানেলটি। 

বুধবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর একটি হোটেলে নির্বাচন উপলক্ষ্যে ইশতেহার ঘোষণা করে ফোরাম। এবারের নির্বাচনে ফোরামের মূল প্রতিপাদ্য 'সাসটেইনেবল স্মার্ট বিজিএমইএ'।

গেল কয়েকবছর ধরে বিজিএমইএ নির্বাচনে মূলত দুটি প্যানেল প্রতিদ্বন্ধিতা করে আসছে। সম্মিলিত পরিষদ ও ফোরাম- এই দুটি প্যানেলের নেতারাই বিজিএমইএর সভাপতি ও অন্যান্য পদে নির্বাচিত হয়ে থাকেন। এবার ফোরামের নেতৃত্বে রয়েছেন বিজিএমইএর সাবেক জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি ও সুরমা গার্মেন্টসের কর্ণধার ফয়সাল সামাদ। অপরদিকে সম্মিলিত পরিষদের নেতৃত্বে রয়েছেন বিজিএমইএর বর্তমান কমিটির জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি ও সিহা ডিজাইন (বিডি) লিমিটেডের চেয়ারম্যান এস এম মান্নান কচি। বিজিএমইর বর্তমান সভাপতি ফারুক হাসান সম্মিলিত পরিষদ থেকে প্রতিদ্বন্ধিতা করে জিতে এসেছেন। আর তার আগের কমিটির সভাপতি ড. রুবানা হক ফোরামের নেতা। রুবানা হকের কমিটিতে ফয়সাল সামাদ জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি ছিলেন।

ফোরামের প্যানেল লিডার ফয়সাল সামাদ বলেন,‘আমরা আন কোয়েশ্চেনবল ইলেকশন চাই। এ দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের। বাণিজ্যমন্ত্রীসহ সরকারের বেশ কয়েকজন প্রতিনিধির সঙ্গে আমাদের কথা হয়েছে। নির্বাচন স্বচ্ছ ও সুষ্ঠু হওয়ার ব্যাপারে তারা ইতিবাচক। বর্তমান সভাপতি ফারুক ভাই, প্রতিদ্বন্ধি প্যানেল লিডার কচি ভাই কিংবা আমার দায়িত্ব নয়- নির্বাচন আন কোয়েশ্চেনবল করা। এই দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের। আমরা আশা করি তারা তাদের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করবে।’

আরো পড়ুন: বীমার আওতায় দেশের ১.৭১ কোটি মানুষ: আইডিআরএ

সম্মিলিত পরিষদের প্যানেল লিডার এস এম মান্নান কচি সরাসরি আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে জড়িত রয়েছেন। এবারের নির্বাচনে ভোটার তালিকায় অসঙ্গতি রয়েছে বলে ফোরামের অভিযোগ। বিষয়টি আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছিলো। সব মিলিয়ে নির্বাচনে কোনো চাপ অনুভব করছেন কিনা এমন প্রশ্নের উত্তরে ফোরামের প্যানেল লিডার ফয়সাল সামাদ বলেন, ‘আমরা কোনো চাপ দেখিনা। কোনো ধরণের চাপ নেই। উনারা প্রভাবশালী হলেও আমরা জয়ের ব্যাপারে প্রত্যাশী। আমাদের ওয়ার্কিং প্যানেল। নির্বাচনকে কেউ প্রভাবিত করতে পারবে বলে আমরা মনে করিনা।’

ফোরামের সভাপতি ও পরিচালক প্রার্থী এম এ সালাম বলেন, ‘বিজিএমইএর ভোটার তালিকায় মৃত ব্যক্তির নামও রয়েছে। নূরে আলম সিদ্দিকীর নাম রয়েছে। এই নামটি কিভাবে রয়ে গেলে আমরা জানিনা। এর দ্বারাই বোঝা যায় আমরা ৪০০ নতুন ভোটারের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ এনেছিলাম তা সঠিক।’ তিনি বলেন, ‘যুগ যুগ ধরে বিজিএমইএর নির্বাচন স্বচ্ছ ও উৎসবমুখর পরিবেশে হয়ে আসছে। নির্বাচন এবারো স্বচ্ছ ও উৎসবমুখর হতে হবে।’ ভোটার তালিকায় দেখা গেছে, ২০২৩ সালের মার্চ মাসে মারা যাওয়া ডরিন গ্রুপের চেয়ারম্যান নূর ই আলম সিদ্দিকীর নাম রয়েছে। যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য ছিলেন তিনি।

অনুষ্ঠানে ফোরামের নেতারা আরো বলেন, মাত্র দুই বছরের ব্যবধানে ৪০০ নতুন ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হওয়া যে কারো মনে প্রশ্ন জাগাবে। সেই প্রশ্নই তুলেছিলেন তারা। অভিযোগ দেয়ার পর আপিল বোর্ড ৬৭ জনকে বাদ দিয়েছে। কিন্তু বাকিরা এখনো ভোটার রয়েছেন। পুরো অনুষ্ঠানে অবৈধ এই ভোটার নিয়েই সাংবাদিকদের প্রশ্ন ছিলো সবচেয়ে বেশি।

এক প্রশ্নের উত্তরে প্যানেল লিডার ফয়সাল সামাদ বলেন, ‘আমরা তাদের ভুয়া ভোটার বলতে চাইনা। আমরা বলছি তারা ইনভেলিড ভোটার। ৪০০ ভোটারের বিরুদ্ধে আমাদের অভিযোগ ছিলো।’ এসব ভোটারের ভোট সম্মিলিত পরিষদের দিকেই যাবে কিনা এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি আরো বলেন, ‘সেই প্রশ্নের উত্তর ভোটাররাই দিতে পারবেন। এসব ভোটার তো গত দুই বছরে হয়েছে। বর্তমান কমিটির মেয়াদে হয়েছে।’

আরো পড়ুন: রিহ্যাব নির্বাচনে ব্যবসায়ী ঐক্য পরিষদের নিরঙ্কুশ জয়

ইশতেহারে দেয়া ফোরামের প্রতিশ্রুতিগুলোর মধ্যে রয়েছে- স্মার্ট বিজিএমইএ প্রতিষ্ঠা; স্বচ্ছ ও পরিচ্ছন্ন বিজিএমইএ প্রতিষ্ঠা; এলডিসি থেকে উত্তরণের লক্ষ্যমাত্রা ও পোশাক শিল্পের ভাবমূর্তি উন্নয়ন এবং জিএসপি প্লাসের কঠিন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা; পোশাক শিল্পের জন্য স্বতন্ত্র মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠার দাবি উত্থাপন; ক্রেতার জবাবদিহিতা ও পোশাকের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করা; নতুন বাজারের উন্নয়ন এবং প্রচলিত ও অপ্রচলিত বাজারে নিজস্ব বিপণন ব্যবস্থা গড়ে তোলা; শিল্পের নিরাপত্তা, শ্রম অধিকার ও পরিবেশ সুরক্ষা; ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পকে অর্থনীতির প্রাণ হিসেবে প্রতিষ্ঠা; রুগ্ন শিল্প এবং ব্যবসা থেকে সম্মানজনক প্রস্থানের নীতি প্রণয়ন; শিল্পের কমপ্লায়েন্স ও ব্যবসা সহজীকারণ।

ইশতেহারে বলা হয়েছে, স্মার্ট বিজিএমইএ গঠনের লক্ষ্যে বিজিএমইএর সকল কার্যক্রমকে অনলাইনে নিয়ে আসা হবে। পোশাক শিল্পের প্রতিটি কারখানার জন্য স্বল্পমূল্যে ইআরপি সার্ভিস প্রোভাইডের উদ্যোগ নেয়া হবে। অনলাইনে চাঁদা প্রদান ও সদস্যপদ নবায়নের সকল কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে। মিড ম্যানেজম্যান্ট ও শ্রমিকদের অনলাইন প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে। বিজিএমইএর ওয়েবসাইটে প্রতিটি কারখানার বিস্তারিত তথ্য সম্বলিত স্বতন্ত্র প্রোফাইল তৈরি ও কারখানার গুরুত্বপূর্ণ ভিডিও সংযুক্ত করা হবে।

ইশতেহারে আরো বলা হয়েছে, উৎপাদনশীলতা বাড়াতে আধুনিক প্রযুক্তি ও সম্যক জ্ঞানকে শিল্পের সবার মধ্যে ছড়িয়ে দেয়া। কাস্টমস ও বন্ড ম্যানেজমেন্টকে অটোমেশনের আওতায় নিয়ে আসা হবে। লোকাল সোর্সিং, নতুন উদ্ভাবন, নতুন প্রযুক্তি ও প্রডাক্ট ডেভেলপমেন্টের জন্য ডাটাবেজ প্রতিষ্ঠা করার অঙ্গীকার দেয়া হয়েছে। বিজিএমইএতে বায়ার নিবন্ধন বাধ্যতামূলক করা হবে। আলাদা মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেয়া হবে। পোশাক শ্রমিকদের সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিতে অন্তর্ভুক্ত করা হবে। মালিকদের জন্য বীমা ও কল্যাণ তহবিল গঠন করা হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App