×

সারাদেশ

ঘিওরে ড্রেজার বাণিজ্য অপ্রতিরোধ্য, মামলার ভয়ে চুপ স্থানীয়রা

Icon

সুরেশ চন্দ্র রায়, মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি

প্রকাশ: ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০:১১ পিএম

ঘিওরে ড্রেজার বাণিজ্য অপ্রতিরোধ্য, মামলার ভয়ে চুপ স্থানীয়রা

ছবি: ভোরের কাগজ

মানিকগঞ্জের বিভিন্ন জায়গায় স্থানীয়দের প্রতিবাদ ও প্রশাসনের অভিযানের মুখে ড্রেজার বাণিজ্য বন্ধ হলেও ঘিওর উপজেলার সিংজুরি ইউনিয়নের বেড়াডাঙ্গা এলাকার কালিগঙ্গা ও বালিয়াখোড়া ইউনিয়নের কুশুণ্ডা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশের পুরাতন ধলেশ্বরী নদীর ড্রেজার বন্ধ না হওয়ায় নদী পাড়ের মানুষ ভাঙন আতঙ্কে দিন পাড় করছেন বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।

সরেজমিনে বালিয়াখোড়া ইউনিয়নের কুশুণ্ডা থেকে সিংজুরি ইউনিয়নের বেড়াডাঙ্গা পর্যন্ত ঘুরে দেখা গেছে, কুশুণ্ডা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশের পুরাতন ধলেশ্বরী নদীতে ও বেড়াডাঙ্গা এলাকার আবাসন প্রকল্পের উত্তর পুর্ব কোণে ফজল আলী ও উকিল উদ্দিনের বাড়ির পাশে কালিগঙ্গা নদীতে নৌকায় অস্থায়ী ড্রেজার বসিয়ে বালু ব্যবসায়ীরা অবাধে বিভিন্ন জায়গায় বালু বিক্রি করে হাতিয়ে নিচ্ছেন লাখ লাখ টাকা।

সিংজুরি ইউনিয়নের বেড়াডাঙ্গা এলাকার বাসিন্দারা জানান, বালিয়াবাঁধা এলাকার হাবিবুর রহমান হবি ঘোষ ও পূর্ব উথলী (বর্তমান ঠিকানা বৈকণ্ঠপুর) গ্রামের আলমগীর হোসেন বেড়াডাঙ্গা এলাকার কালিগঙ্গা নদীর বিভিন্ন পয়েণ্টে ড্রেজার বসিয়ে প্রতিদিন লক্ষাধিক ঘনফুট বালু উত্তোলন করে বিভিন্ন জায়গায় বিক্রি করছেন। এতে সরকার হারাচ্ছে রাজস্ব আর ভাগ্যবিড়ম্বনায় পড়ছেন নদী পাড়ের অসহায় মানুষ। মাঝেমধ্যে নদীর পাড়ে উপজেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের লোকজনের দেখা মিললেও ড্রেজার ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে তারা এপর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি। দেখে মনে হয় এরা যেন ড্রেজার ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে মাসোহারা নিতে নদীর পাড়ে আসেন। এই ড্রেজার বাণিজ্য নিয়ে একাধিকবার লেখালেখি হলেও প্রশাসন একেবারেই নিরব। হাবিবুর রহমান ও আলমগীরের ড্রেজার বাণিজ্য নিয়ে কথা বলার কারণে ইতোপূর্বে এলাকার ১ জন যুবককে সাজানো মামলায় জেল পর্যন্ত খাটানো হয়েছে। এই মিথ্যা মামলার ভয়ে এখন এলাকার অসহায় মানুষ এই ড্রেজার ব্যবসায়ীদের নিয়ে কোনো কথা বলতে সাহস পান না। এই সুযোগে ড্রেজার ব্যবসায়ীরা হয়ে উঠেছেন আরো বেপরোয়া।

আরো পড়ুন: ছাত্রীর সঙ্গে প্রেম করে বরখাস্ত হলেন প্রভাষক

কুশুণ্ডা এবং চরকুশুণ্ডা এলাকার নদীপাড়ের বাসিন্দারা জানান, তাদের পাশ্ববর্তী এই নদীতে প্রায় সারাবছরই ড্রেজার চলে। এ এলাকার ড্রেজার ব্যবসায়ীদের নেতৃত্বে রয়েছেন শিমুলিয়া গ্রামের শুকুর আলী নামে এক যুবলীগ নেতা। ঈদের আগে ঘিওর উপজেলা প্রশাসন অভিযান চালিয়ে কিছু পাইপ ধ্বংস করলেও এখন আবার পুরোদমেই চলছে মাটি উত্তোলনের কাজ। তিনি নাকি অনেক ক্ষমতাবান নেতা!

নদী পাড়ের বাসিন্দারা আবেগের সঙ্গে বলেন, এখন তাদের শেষ ভরসা মানিকগঞ্জ-১ আসনের এমপি সালাউদ্দিন মাহমুদ জাহিদ। কারণ তিনি নির্বাচনের আগে বিভিন্ন সভা-সমাবেশে মাটি খেকোদের বিরুদ্ধে কঠোর হুশিয়ারি দিয়ে বক্তব্য দিয়েছিলেন। তাদের বিশ্বাস এমপি জাহিদের হস্তক্ষেপে সম্পূর্ণরূপে বন্ধ হবে নদীর বালু উত্তোলন। এতে রক্ষা হবে সরকারি সম্পত্তি আর ভাঙনের হাত থেকে রক্ষা পাবে নদী পাড়ের মানুষ।

বেড়াডাঙ্গা এলাকার এক বাসিন্দা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, প্রশাসন যদি একান্তভাবে চায় নদী থেকে অবৈধভাবে কেউ বালু উত্তোলন করতে পারবে না-সেটি অবশ্যই সম্ভব। কিন্তু রহস্যজনক কারণে এ ড্রেজার বাণিজ্য কোনোভাবেই বন্ধ হচ্ছে না। স্থানীয় সচেতন মহল, জনপ্রতিনিধি, গণমাধ্যমকর্মী এবং প্রশাসনের যৌথ প্রচেষ্টা থাকলে নদীর এ ড্রেজার বাণিজ্য অবশ্যই স্থায়ীভাবে বন্ধ করা সম্ভব।

আরো পড়ুন: ছেলে হত্যাকারীর বিচারের দাবিতে মায়ের আহাজারি

ড্রেজার ব্যবসায়ী আলমগীর হোসেন মোবাইল ফোনে জানান, ড্রেজার ব্যবসা করার জন্য তাদের অনুমতিপত্র আছে। এই অনুমতিপত্র কে দিয়েছেন প্রশ্নে তিনি বলেন, এ বিষয়ে হাবিবুর রহমান ভাল বলতে পারবেন। আপনি হাবিবুরকে ফোন দিন।

ড্রেজার ব্যবসায়ী হাবিবুর রহমান জানান, তিনি দীর্ঘদিন এ ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। প্রশাসন, রাজনৈতিক নেতা ও সাংবাদিক সবাই তাকে এক নামে চিনেন। ড্রেজারের বিষয়ে কোনো অনুমতি আছে কিনা প্রশ্নে তিনি বলেন, সবার সঙ্গে লিয়াজো করেই তিনি ব্যবসা করেন। আপনি বালিয়াবাঁধা অফিসে আসেন, সাক্ষাতে কথা হবে। আর যদি না আসতে পারেন, আপনি আপনার বিকাশ নম্বরটি দিন।

কুশুণ্ড এলাকার ড্রেজার ব্যবসায়ী মো. শুকুর আলী জানান, তিনি নদীর মাটি দিয়ে মসজিদ-মাদ্রাসা ও সরকারি রাস্তার কাজ করছেন। এ বিষয়ে ঝামেলা না করতে অনুরোধ করেন তিনি। বিনিময়ে একটি বিশেষ উপহারের প্রস্তাব দেন শুকুর আলী।

ঘিওর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম দৈনিক ভোরের কাগজকে জানান, প্রতিনিয়তই নদীতে মোবাইল কোর্ট পরিচালিত হচ্ছে। উল্লেখিত জায়গাগুলোতে অবশ্যই মোবাইল কোর্ট পরিচালনার মাধ্যমে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App