×

সারাদেশ

ফরিদপুরে মন্দিরে আগুন, পিটুনিতে নিহত ২

Icon

কাগজ ডেস্ক

প্রকাশ: ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০১:০০ পিএম

ফরিদপুরে মন্দিরে আগুন, পিটুনিতে নিহত ২

ছবি: সংগৃহীত

ফরিদপুরের মধুখালীতে একটি মন্দিরে নির্মাণশ্রমিকরা হামলা করে অগ্নিসংযোগ করেছে এমন অভিযোগ তুলে কয়েকজনকে পিটিয়ে আহত করে এলাকাবাসী। পরে ফরিদপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আহত নির্মাণশ্রমিক দুই ভাইয়ের মৃত্যু হয়েছে।

গতকাল (বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল) দিবাগত রাত ১টা ও শুক্রবার (১৯ এপ্রিল) ভোর ৪টার দিকে তারা মারা যান। নিহত দুই ভাই হলেন- মধুখালী উপজেলার নওয়াপাড়া ইউনিয়নের ঘোপেরঘাট গ্রামের শাহজাহান খানের ছেলে আশরাফুল (২১) ও আশাদুল (১৫)।

ফরিদপুর কোতোয়ালি থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ হাসানুজ্জামান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

এর আগে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে মধুখালী উপজেলার ডুমাইন ইউনিয়নের পঞ্চপল্লি গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।

আরো পড়ুন: নগরকান্দায় ট্রেনে কাটা পড়ে মানসিক ভারসাম্যহীন ব্যক্তির মৃত্যু

এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, পঞ্চপল্লি গ্রামের কালী মন্দিরের আনুমানিক ৫০ গজ পাশেই পঞ্চপল্লি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় অবস্থিত। ওই বিদ্যালয়ের শৌচাগার নির্মাণের জন্য কয়েকজন শ্রমিক সেখানে কাজ করছিলেন। বৃহস্পতিবার সকালে ওই শ্রমিক‌দের সঙ্গে কালীপূজার প্রতিমা নি‌য়ে কথা কাটাকা‌টি হয় কয়েকজন গ্রামবাসীর। এর মধ্যে গতকাল সন্ধ্যার দিকে ওই মন্দিরের প্রতিমায় অগ্নিসংযোগ করে অজ্ঞাত ব্যক্তিরা। তখন এলাকাবাসী ধারণা করেন শ্রমি‌করা ম‌ন্দি‌রে হামলা ও প্রতিমায় অগ্নিসং‌যোগ করেছে। এর জের ধরে এলাকাবাসী ওই স্কুলের একটি কক্ষে ওই শ্রমিকদের মোটা রশি দিয়ে বেধে বেদম মারধর করে।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ঘটনা শুনে সেখানে মধুখালী উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মামনুন আহমেদ ও ওসি মিরাজ হোসেনের নেতৃত্বে পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলে তাদেরকে ঢুকতে দেয়নি এলাকার বিক্ষুব্ধ জনতা। ঘটনাস্থলের অদূরে তাদের ঘিরে রাখে এলাকাবাসী। ঘণ্টাখানেকের বেশি সময় তারা অবরুদ্ধ ছিলেন। এরপর ফরিদপুর পুলিশ লাইনস, রাজবাড়ী পুলিশ লাইনস, মাগুরার শ্রীপুর থানা ও ফরিদপুর থেকে র‍্যাবের সদস্যরা গিয়ে ফাঁকা গুলি ও সাউন্ড গ্রেনেড ফাটিয়ে ঘটনাস্থলে প্রবেশ করে। এরপর ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক মো. কামরুল আহসান তালুকদার ও পুলিশ সুপার মোর্শেদ আলমের উপস্থিতিতে আহত অবস্থায় ওই সাত শ্রমিককে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠায়। এ ঘটনায় ননী গোপাল নামে মধুখালী থানা পু‌লি‌শের এক উপপ‌রিদর্শক আহত হ‌য়ে‌ছেন।

ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক মো. কামরুল আহসান তালুকদার জানান, পরিস্থিতি অশান্ত হওয়ার খবর পেলে তিনি ঘটনাস্থলে ছুটে যান। রাত দেড়টার দিকে পরিস্থিতি শান্ত হওয়ার পর তিনি ফরিদপুর ফিরে আসেন।

আরো পড়ুন: মিয়ানমার থেকে পালিয়ে এলেন আরো ১৩ বিজিপি সদস্য

জেলা প্রশাসক বলেন, আহত ওই সাত শ্রমিককে উদ্ধার করতে গিয়ে এলাকাবাসীর প্রতিরোধের মুখে পড়ে পুলিশের সদস্যরা। তাদের লক্ষ্য করে ইটপাটকেলও ছোড়ে তারা। এ সময় পুলিশ ফাঁকা গুলি ও সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়ে আহত সাতজনকে উদ্ধার করে ফরিদপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠায়। রাতেই সেখানে দুইজনের মৃত্যু হয়। এলাকায় পুলিশ ও র‍্যাব মোতায়েন করা হয়েছে।

তিনি আরো বলেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে পুলিশের পাশাপাশি শুক্রবার ফরিদপুর শহরের গুরুত্বপূর্ণ মোড় ও মধুখালীতে চার প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হবে।

ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে ডুমাইন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শাহ মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ঘটনা শোনার পর আমি ঘটনাস্থলে গিয়ে প্রতিমার গায়ের কাপড় পোড়া অবস্থায় দেখতে পাই। তবে ততক্ষণে এ খবর আশপাশে ছড়িয়ে পড়লে শত শত মানুষ জড়ো হয়ে যাওয়ায় তাদের নিবৃত করা সম্ভব হয়নি।

তিনি আরো বলেন, এ ঘটনা আমি প্রথমে ইউএনও এবং ওসিকে জানাই। তারা এসে অবরুদ্ধ হয়ে পড়লে পুলিশ সুপার ও জেলা প্রশাসককে জানানোর পর রাত সাড়ে ১১টার দিকে আহত ওই সাত শ্রমিককে উদ্ধার করে ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করেন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App