×

সারাদেশ

মনপুরায় মসজিদের জমি জবরদখলের অভিযোগ, বিরোধের জেরে কুপিয়ে মুসল্লিকে জখম

Icon

মনপুরা (ভোলা) প্রতিনিধি

প্রকাশ: ১৮ মার্চ ২০২৪, ০৫:০৫ পিএম

মনপুরায় মসজিদের জমি জবরদখলের অভিযোগ, বিরোধের জেরে কুপিয়ে মুসল্লিকে জখম

অভিযুক্ত জেবল হক ব্যাপারী ও তার ছেলে মো. কামাল

ভোলার মনপুরায় ৩০ বছর ধরে মসজিদের জমি জবরদখলের অভিযোগ উঠেছে খোদ মসজিদের সভাপতির বিরুদ্ধে। একাধিকবার শালিসের পর জমি মেপে বুঝিয়ে দেননি ৩০ বছর ধরে পদে থাকা ওই সভাপতি। ৩০ বছরে মসজিদের আয়-ব্যয়ের হিসেব-নিকেশ ও জমি বুঝিয়ে না দেয়ায় স্থানীয় মুসল্লিরা একত্রিত হয়ে ওই সভাপতিকে সমাজ থেকে বহিষ্কার করেন। পরবর্তীতে স্থানীয় আমীন ও শালিসদাররা জমি মেপে দেখার জন্য গেলে উত্তেজিত হয়ে এক মুসল্লিকে ধারালো দায়ের কোপে জখম করেছেন সভাপতির ছেলে। দায়ের কোপে ওই মুসল্লির বাম হাত প্রায় বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। উক্ত জখমের ঘটনায় আহত মুসল্লির স্ত্রী বাদী হয়ে মনপুরা থানায় মামলা করেন।

শুক্রবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) জুম্মার নামাজের পর দুপুর সোয়া ২ টায় উপজেলার হাজীর হাট ইউনিয়নের চর ফৈজুদ্দিন গ্রামের ৮ নম্বর ওয়ার্ডে রিজির খাল জামে মসজিদের জমি মেপে দেখার সময় এই জখমের ঘটনা ঘটে।

অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, উপজেলার রিজির খাল জামে মসজিদটি ১৯৮৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। তখন থেকে মসজিদের সভাপতির দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তি মো. জেবল হক ব্যাপারী (৭৫) এবং তার বড় ছেলে মো. জসিম উদ্দিন সাধারণ সম্পাদক ও সেজো ছেলে জামাল উদ্দিন ৩০ বছর ধরে ক্যাশিয়ারের দায়িত্ব পালন করে আসছিলো। 

এর মধ্যে ১৯৮৯ সালে মসজিদের নামে সভাপতি জেবল হক ব্যাপারী ১০ শতাংশ জমি ওয়াকফ দানের দলিল দেন। কিন্তু ৩০ বছর কেটে গেলেও সেই জমি মসজিদকে মেপে বুঝিয়ে না দিয়ে জবরদখল করে রেখেছেন। বারবার স্থানীয় মুসল্লিরা জমি মেপে বুঝিয়ে দেয়ার কথা বললেও তারা তা মসজিদকে দেননি। উক্ত ১০ শতাংশ জমি মসজিদের সভাপতি জেবল হক জরবদখল করে ভোগ করছেন। এ নিয়ে মুসল্লিদের সঙ্গে একাধিকবার শালিস হয়। কিন্তু তারা শালিস না মেনে একাধিকবার মুসল্লিদের সঙ্গে বিবাদে জড়ায়। মসজিদের জমি বুঝিয়ে না দেয়া ও আয়-ব্যয়ের হিসেব নিকেশ না দেয়ায় ২০২০ সালে মুসল্লিরা ক্ষুব্ধ হয়ে সভাপতিসহ তাদের তিন বাবা ছেলেকে মসজিদের কমিটি থেকে বাদ দিয়ে সমাজ থেকে বহিষ্কার করে দেন। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে বিভিন্ন সময়ে নিরীহ মুসল্লিদের বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে হয়রানীর অভিযোগ রয়েছে জেবল হকের বিরুদ্ধে।

আরো পড়ুন: ঝালকাঠিতে ২ ব্যবসায়ীকে ২৫ হাজার টাকা জরিমানা

গত ১৬ ফেব্রুয়ারি (শুক্রবার) জুম্মার নামাজের পর স্থানীয় আমীন নিয়ে জমি মেপে দেখছিলেন মুসল্লিরা। এ সময় অভিযুক্ত জেবল হক ও তার ছেলেরা এসে বাধা দেয়। কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে জেবল হক ও তার ছেলেরা লাঠিসোটা দিয়ে মুসল্লিদেরকে এলোপাতাড়ি মারধর করে। একপর্যায়ে তার মেঝো ছেলে মো. কামাল এসে খেজুর গাছ কাটার ধারালো দা দিয়ে কোপ দিয়ে মসজিদের মুসল্লি মো. ফখরুল ইসলামের (৪৫) বাম হাত প্রায় বিচ্ছিন্ন করে ফেলে। আহত ফখরুলের অবস্থা গুরুতর হওয়ায় তাকে মনপুরা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়। উক্ত ঘটনায় আহত ফখরুলের স্ত্রী বাদী হয়ে অভিযুক্ত মো. কামাল, জেবল হক ব্যাপারী, মো. জামাল ও মো. জসিমকে আসামী করে মনপুরা থানায় মামলা করেন।

এ ব্যাপারে রিজির খাল মসজিদের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক মো. খোকন মিয়া জানান, ১৬ ফেব্রুয়ারি জুমার নামাজের পর স্থানীয় আমীন দিয়ে জমি মেপে দেখছিলাম আমরা। এরমধ্যে সাবেক সভাপতি ও তার ছেলেরা লাঠিসোটা দিয়ে আমাদেরকে মারধর শুরু করে। এক পর্যায়ে খেজুর গাছ কাটা ধারালো দা দিয়ে মসজিদের মুসল্লি ফখরুলকে কুপিয়ে জখম করে।

সরেজমিনে দেখা যায়, অভিযুক্ত রিজির খাল মসজিদের সাবেক সভাপতি ১০ শতাংশ জমির পাশাপাশি মসজিদের মক্তব ঘরকে জোরপূর্বক গরু ঘর হিসেবে ব্যবহার করে আসছেন। এতে স্থানীয় শিশুদের আরবি শিক্ষা তথা মক্তব শিক্ষা ব্যাহত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

এছাড়াও যারাই তার বিরুদ্ধে কথা বলেছে তাদেরকে একাধিক মামলা দিয়ে হয়রানির অভিযোগ রয়েছে জেবল হকের বিরুদ্ধে।

আরো পড়ুন: সোনারগাঁওয়ে চোরাই কাঠসহ কাভার্ড ভ্যান চালক গ্রেপ্তার

মসজিদের সাধারণ মুসল্লি ও স্থানীয় স্বপন মাঝি, মো. নুরুদ্দিন, আকরুজ্জামান, মহিউদ্দিন, জাকির, নুর ইসলাম, হাসেম ব্যাপারী, নুরনবী মাঝি ও রিপন জানান, দীর্ঘ ৩০ বছর ধরে মসজিদের সাবেক সভাপতি জেবল হক ব্যাপারী ১০ শতাংশ জমি জবরদখল করে ভোগ করছেন। এবং মসজিদের মক্তব ঘরটি জোরপূর্বক গরু ঘর হিসেবে ব্যবহার করছেন তিনি। জমি ও মক্তব ঘর বুঝিয়ে দেয়ার ব্যাপারে বহুবার শালিস হলেও তিনি কোনো শালিসই মানছেন না এবং তার বিরুদ্ধে কথা বললেই আমাদেরকে বিভিন্ন মামলা দিয়ে হয়রানী করা হয়। তার আত্মীয়স্বজন পুলিশের উচ্চ পদে চাকরী করায় তাদের প্রভাব খাটিয়ে এসব অপরাধ করছেন তিনি।

উক্ত জখমের ঘটনায় মামলার জের ধরে মনপুরা সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে স্থানীয় ১৪ জন মুসল্লিকে আসামী করে পাল্টা মামলা করেছেন জেবল হক ব্যাপারী।

সব অভিযোগ অস্বীকার করে রিজির খাল জামে মসজিদের সাবেক সভাপতি মো. জেবল হক ব্যাপারী জানান, আমি মসজিদকে ১০ শতাংশ জমি দান করেছি। সেই জমি বর্তমানে মসজিদের দখলে রয়েছে। তবু একটা পক্ষ আমার কাছে সেই জমি অযৌক্তিকভাবে দাবী করে সমাজের কাছে আমাকে খাটো করতে চায়।

এমতাবস্থায় মসজিদের মুসল্লিদের বিরুদ্ধে সাবেক সভাপতির দায়ের করা মামলা প্রত্যাহার, জবরদখলকৃত ১০ শতাংশ জমি মেপে বুঝিয়ে দেয়া, মসজিদের ৩০ বছরের আয়-ব্যয়ের হিসেব-নিকেশ, মসজিদের মক্তব ঘর পুনরুদ্ধার ও অভিযুক্ত সাবেক সভাপতি জেবল হক ব্যাপারীর উপযুক্ত শাস্তি দাবি করছেন এলাকাবাসী।

এ ব্যাপারে মনপুরা থানা অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. জহিরুল ইসলাম জানান, মসজিদের জমি নিয়ে বিরোধের জেরে আহত মুসল্লি ফখরুল ইসলামের স্ত্রীর দায়ের করা মামলায় আসামীরা হাইকোর্ট থেকে জামিনে রয়েছেন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App