×

সারাদেশ

মিয়ানমারে সংঘাত

অস্ত্রসহ আসা ২২ রোহিঙ্গা তিনদিনের রিমান্ডে

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০৬:১৮ পিএম

অস্ত্রসহ আসা ২২ রোহিঙ্গা তিনদিনের রিমান্ডে

ছবি: সংগৃহীত

মিয়ানমারে সংঘাতের মধ্যে বাংলাদেশের ক্যাম্প ছেড়ে রাখাইনে যাওয়া এবং পরে অস্ত্রসহ ফিরে আসা ২৩ রোহিঙ্গার মধ্যে ২২ জন রোহিঙ্গাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ।

সোমবার (১২ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে কক্সবাজারের জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম শ্রীজ্ঞান তঞ্চঙ্গ্যা শুনানি শেষে প্রত্যেকের তিনদিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এ বিষয়টি নিশ্চিত করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা উখিয়ার থানার পরিদর্শক (তদন্ত) নাছির উদ্দিন মজুমদার জানান।

গ্রেপ্তারের পর কারাগারে থাকা মো. সাদেক নামের এক রোহিঙ্গা অসুস্থ হওয়ায় তার রিমান্ডের অনুমতি দেননি বিচারক।

৬ ফেব্রুয়ারি সংঘাতের মধ্যে বিদ্রোহীদের তাড়া খেয়ে প্রাণ বাঁচাতে কক্সবাজারের উখিয়া সীমান্তের বিভিন্ন স্থান দিয়ে বিজিপি সদস্যদের পাশাপাশি ২৩ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে ঢুকে পড়ে।

পরে ৯ ফেব্রুয়ারি বিজিবির ৩৪ ব্যাটালিয়নের পালংখালী বিওপির নায়েব সুবেদার মো. শহিদুল ইসলাম বাদি হয়ে অস্ত্র আইনে মামলা করে তাদের ১২টি অস্ত্রসহ পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে।

এর আগে, শনিবার কক্সবাজারের জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আদালতে ওই ২৩ রোহিঙ্গাকে হাজির করে প্রত্যেকের ১০ দিন করে রিমান্ড আবেদন করে পুলিশ। বিচারক ফাহমিদা সাত্তার আবেদন আমলে নিয়ে রবিবার শুনানির দিন ঠিক করে দেন।

আরো পড়ুন: রঙ্গিন ফুলকপি চাষ করে স্বপ্ন পূরণের পথে কৃষক মিঠুন

পরিদর্শক নাছির উদ্দিন বলেন, “মিয়ানমার থেকে অনুপ্রবেশের সময় অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার ২৩ রোহিঙ্গার সবাই উখিয়ার বালুখালী ও কুতুপালং ক্যাম্পের বাসিন্দা। স্বাভাবিক কারণে রোহিঙ্গা ক্যাম্প ছেড়ে তাদের মিয়ানমারে যাওয়ার কথা না।

কিন্তু কি কারণে মিয়ানমারে গেল আর তাদের হাতে অস্ত্র কেন? এসব প্রশ্নের উত্তর পাওয়া জরুরি। তিনি আরো বলেন, “বিচারক যে ২২ জনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন, তাদের কক্সবাজার কারাগার থেকে পুলিশ হেফাজতে নিয়ে এসব প্রশ্নের উত্তর বের করার চেষ্টা করা হবে।”

২৩ রোহিঙ্গা হলেন- উখিয়ার বালুখালী ৮ নম্বর ক্যাম্পের কবির আহমদের ছেলে মো. হোসেন আহমদ (৩০), একই ক্যাম্পের মো. ইউনুসের ছেলে মো. রফিক (২৩), আব্দুর রাজ্জাকের ছেলে আয়াতুল্লাহ (৩০), ৯ নম্বর ক্যাম্পের মো. রফিকের ছেলে মো. জুনাইদ (১৯), একই ক্যাম্পের নুর কালামের ছেলে মো. হারুন (২৩), সমসের আলমের ছেলে মো. কায়সার (১৯), রশিদ আহমেদের ছেলে মো. সাবের (১৯), ১০ নম্বর ক্যাম্পের আবদুল্লাহর ছেলে ওসামা (১৯), একই ক্যাম্পের জাফর আলমের ছেলে ওমর ফারুক (১৯), মো. তোহার ছেলে মো. সাদেক (১৯), মকবুল আহমদের ছেলে হারুন অর রশিদ (২৪), হামিদ হোসেনের ছেলে ইয়াসিন আরাফাত (১৯), দিল মোহাম্মদের ছেলে মো. ইসমাইল (১৯), মো. হোসেনের ছেলে মো. রহিম (১৯), ১১ নম্বর ক্যাম্পের আতা উল্লাহর ছেলে নজু মোল্লা (৩৮), ১৫ নম্বর ক্যাম্পের মো. সৈয়দের ছেলে সৈয়দ উল্লাহ (১৯), একই ক্যাম্পের দিল মোহাম্মদের ছেলে হাফেজ আহমেদ (১৯), ২০ নম্বর ক্যাম্পের মো. রশিদের ছেলে মো. জোবায়ের (১৯), কুতুপালং এলাকার ৬ নম্বর ক্যাম্পের ইউসুফের ছেলে আব্দুল্লাহ (২০), একই এলাকার ৩ নম্বর ক্যাম্পের আবুল হাসেমের ছেলে এনামুল হাসান (২২), ২ নম্বর ক্যাম্পের ইমাম হোসেনের ছেলে মো. রফিক (২৪), একই ক্যাম্পের আবুল কালামের ছেলে সৈয়দুল ইসলাম (২৪) ও ৭ নম্বর ক্যাম্পের মো. জলিলের ছেলে মো. আরমান (২১)।

এ ঘটনায় উদ্ধার ১২টি অস্ত্রের মধ্যে ৫টি এসএমজি (সাবমেশিন গান), ১টি জি-৩ রাইফেল, ২টি পিস্তল ও ৪টি রিভলবার রয়েছে।

আরো পড়ুন: পাইকগাছায় চোখ-মুখে সুপারগ্লু দিয়ে গৃহবধূকে ধর্ষণ

এছাড়া রয়েছে- এসএমজি গুলি ১৯৮ রাউন্ড, এমজি গুলি ৯৮ রাউন্ড, রাইফেলের গুলি ২৭৬ রাউন্ড, জি-৩ রাইফেলের গুলি ১০৩ রাউন্ড, পিস্তলের গুলি ১৯৩ রাউন্ড, পিস্তলের খালি কার্তুজ ২৫ রাউন্ড, রাইফেলের গ্রেনেড ফিউজ ৫ রাউন্ড, এসএমজি ম্যাগাজিন ৬টি, এলএমজি ম্যাগাজিন ৪টি, জি-৩ ম্যাগাজিন ১টি, পিস্তল ম্যাগাজিন ২টি।

এদিকে চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার মো. তোফায়েল ইসলাম ও পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি নুরে আলম মিনা সোমবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার পালংখালী সীমান্ত পরিদর্শনে যান। সেখানে সীমান্তের লোকজন ও জনপ্রতিনিধির সঙ্গে বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলেন। এরপর বেলা সাড়ে ১২টার দিকে ঘুমধুম সীমান্ত পরিদর্শনে যান।

বিভাগীয় কমিশনার তোফায়েল সাংবাদিকদের বলেন, সীমান্তের চলমান পরিস্থিতিতে ঘুমধুম উচ্চ বিদ্যালয়ের এসএসসি পরীক্ষার কেন্দ্রটি পরিবর্তনের জন্য মন্ত্রণালয় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। এর প্রেক্ষিতে উত্তর ঘুমধুমের দুইটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এ পরীক্ষা হবে। এ সংক্রান্ত প্রক্রিয়া প্রায় চূড়ান্ত। “সীমান্ত পরিস্থিতি আগের চেয়ে অনেক বেশি উন্নত হয়েছে। সীমান্ত এলাকা ঘুরে পরিস্থিতি অস্বাভাবিক বলা যাবে না।”

পালিয়ে আশ্রয় নেয়া ৩৩০ বিজিপিসহ বাকিদের ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশ-মিয়ানমার মন্ত্রণালয়ে আলোচনা চলছে; ২-৩ দিনের মধ্যে এটা চূড়ান্ত হবে।

পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি নুরে আলম মিনা বলেন, “সীমান্ত পরিস্থিতি বিজিবি দেখছে, আমরা সহযোগিতা করছি। অস্ত্রধারী ২৩ জনকে আটক করে মামলা দিয়েছে। এ ব্যাপারে তদন্তসহ আইনী প্রক্রিয়া চলছে।”

অন্য কোনোভাবে ‘অপরাধী’ অনুপ্রবেশ হলে তাদের বিরুদ্ধেও আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন তিনি।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন, কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহীন ইমরান ও পুলিশ সুপার মো. মাহাফুজুল ইসলামসহ অন্যরা।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App