×

সারাদেশ

গারো পাহাড়ে বন্যহাতির তাণ্ডবে গ্রামবাসীদের নির্ঘুম রাত

Icon

খোরশেদ আলম, শেরপুর থেকে

প্রকাশ: ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০৪:০৯ পিএম

গারো পাহাড়ে বন্যহাতির তাণ্ডবে গ্রামবাসীদের নির্ঘুম রাত

শেরপুরের গারো পাহাড়ে বন্যহাতির তাণ্ডবে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন পাহাড়ি গ্রামবাসীরা। উপর্যুপরি বন্যাহাতির তাণ্ডবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছেন পাহাড়ের মানুষ।    

জানা গেছে, সীমান্তের প্রায় ৪০ কিলোমিটার এলাকার বনাঞ্চলে অবস্থান করছে বন্যহাতির দল। 

৬টি ইউনিয়নের প্রায় ৫০টি পাহাড়ি গ্রামে- গারো, হাজং, কোচ, বানাই, হিন্দু ও মুসলমানসহ বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর প্রায় ৫০ হাজার লোকের বসবাস।  

জানা গেছে, খাবারের সন্ধানে ১৯৯৫ সালে এসব পাহাড়ি গ্রামগুলোতে পদচারণা শুরু হয় বন্যহাতির। 


জানা গেছে, হাতিরদল দিনে গভীর অরণ্যে আশ্রয় নিচ্ছে, আর সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে খাদ্যের সন্ধানে নেমে আসছে লোকালয়ে। ঘরবাড়ি ও ক্ষেতের ফসলের ব্যাপক ক্ষতি সাধন করে চলেছে।

ফসল রক্ষার্থে পাহাড়ি গ্রামবাসীরা রাতজেগে পাহাড়া দিচ্ছে।ঢাকঢোল বাজিয়ে, পটকা ফুটিয়ে ও মশাল জ্বালিয়ে হাতি তাড়ানোর চেষ্টা চলছে।কিন্ত যতই হাতি তাড়ানোর চেষ্টা চলছে, ততই হাতির দল তেড়ে আসছে লোকালয়ে। হাতির কবল থেকে রক্ষা পেতে ঘরবাড়ি ফেলে রেখে অনেকেই চলে আসছেন সমতলের লোকালয়ে। হাতি চলে যাওয়ার পর বাড়ি ফিরছেন তারা।

এতে যেন পাল্লা দিয়েই বাড়ছে মানুষ- হাতির দ্বন্দ্ব। নির্ঘুম রাত কাটছে পাহাড়ি গ্রামবাসীদের।

হাতি কবলিত এলাকাগুলোতে নেই ন্যাচারাল বন। একসময় ২০ হাজার একর  বনের জমিতে শাল গজারী বন ছিল। ৯০ দশকের পর থেকে  এসব   বন পরিস্কার করে   সৃজন করা হয় সামাজিক বন।  শতশত একর জমিতে  চাষাবাদ  হচ্ছে। গড়ে উঠেছে জনবসতি।  এতে  গড়ে উঠছে  না  হাতির খাদ্য । বনের জমি বেদখল হওয়ায় সংকুচিত হয়ে পরেছে হাতির আবাস্থল।

জানা গেছে, বন বিভাগের পক্ষ থেকে  গারো পাহাড়ে    হাতির ২,টি খাদ্য ভান্ডার গড়ে তুলার জন্য  সরকারি অর্থ বরাদ্দ  হয়। কিন্তু ওই খাদ্য ভান্ডার    আর  আলোর মুখ দেখেনি।

নাওকুচি গ্রামের ইউপি সদস্য গোলাপ হোসেনসহ গ্রামবাসীরা জানান, বন্যহাতির তাণ্ডবে পাহাড়ি এলাকার জমিগুলো চাষাবাদ করা সম্ভব হয় না। অনেকেই জীবিকার তাগিদে হাতির আক্রমনের ভয় উপেক্ষা করে চাষাবাদ করছেন। এছাড়া পাহাড়ি গ্রামগুলোতে নেই কোন ককর্মসংস্থানের ব্যবস্থা। ফলে অতিকষ্টে দিনাতিপাত করছেন তারা।

গজনী গ্রামের অবিও সাংমা বলেন, পেটে খাবার না থাকলে ও প্রতিরাতেই হাতি তাড়াতে মশালে ব্যবহারের জন্য কমপক্ষে ২ লিটার কেরোসিন তেল ঘরে রাখতে হয়।  অনেকের পক্ষে তা সম্ভব হয় না।

হাতির আক্রমন শুরুর দিকে প্রশাসন বা জনপ্রতিনিধিদের পক্ষ থেকে  পাহাড়ি গ্রামবাসীদের মশালে ব্যবহারের জন্য কেরোসিন তেল বিতরন করা হতো। 

কিন্তু এখন আর তা করা হয় না। হাতির কবল থেকে পাহাড়ি গ্রামবাসীদের  রক্ষার্থে বন মন্ত্রনালয়ের পক্ষ থেকে সোলার ফেন্সিং স্থাপন করা হয়।

কিন্তু ঠিকাদার নিম্নমানের কাজ করায় তা কোনই কাজে আসছে না। অকেজো হয়ে পড়ে আছে সোলার ফেন্সিং। 

অনুসন্ধানে জানা গেছে, ১৯৯৫ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত হাতির আক্রমণে ৬০ জন মানুষের মৃত্যু হয়েছে। আহত শতাধিক। আর  হাতির মৃত্যু হয়েছে ৩৩টি। ৩টি হাতি হত্যার বিষয়ে মামলা হয়েছে। এসব হাতির বেশির ভাগই মৃত্যু হয়েছে বৈদ্যুতিক ফাঁদে, নয়তো ধারালো অস্ত্রের আঘাতে।

গ্রামবাসীদে খাদ্যসহায়তা ও হাতি তাড়াতে কেরোসিন তেল বিতরণ ব্যবস্থা চালু রাখার দাবি উঠেছে জনপ্রতিনিধিদের পক্ষ থেকে।

শ্রীবরদী উপজেলার বালিজুরি রেঞ্জ কর্মকর্তা রবিউল ইসলাম বলেন, হাতিকবলিত এলাকায় বসবাসকারীদের সরিয়ে নেয়া ও খাদ্যভাণ্ডার গড়ে তোলা হলে মানুষ-হাতি দ্বন্দ্ব কমিয়ে আনা যাবে।    

ময়মনসিংহ বিভাগীয় বন কর্মকর্তা আ ন ম আব্দুল ওয়াদুদ বলেন, হাতির আক্রমনে    নিহতদের পারিবার ও ক্ষতিগ্রস্থ  কৃষকদের ক্ষতিপূরণ বাবদ ২০২৪ সাল পর্যন্ত  ১ কোটি   টাকা বিতরণ করা হয়েছে।

শেরপুরের জেলা প্রশাসক আব্দুল্লাহ আল খায়রুম বলেন, সীমান্তের গারো পাহাড়ে হাতি-মানুষের দ্বন্দ্ব নিরসনে জনগনকে সচেতনতার লক্ষে বন বিভাগের পক্ষ থেকে রেসপন্স টিম কাজ করছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App