×

সারাদেশ

গোয়াইনঘাট সাব-রেজিষ্ট্রি অফিস ঘুষ দুর্নীতির আখড়া

Icon

নজরুল ইসলাম, গোয়াইনঘাট, সিলেট প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১১:৩৫ এএম

গোয়াইনঘাট সাব-রেজিষ্ট্রি অফিস ঘুষ দুর্নীতির আখড়া

সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার সাব-রেজিস্ট্রি অফিস নিয়ে অভিযোগের শেষ নেই। ঘুষ, অনিয়ম ও দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছে রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ এই প্রতিষ্ঠানটি। এখানে যে কোনো কাজ করাতে হলে আগে টাকা গুনতে হয়। টাকা দিলে সকল অনিয়মই এখানে নিয়মে পরিণত হয়। অফিসে কোনো পদ-পদবী না থাকলেও সাব-রেজিস্টারের মনোনীত সবুজ আহমদ (৩০) নামের স্থানীয় এক ব্যক্তির নেতৃত্বে দালাল চক্রের দৌরাত্ম্যে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন এই অফিসে সেবা নিতে আসা সাধারণ মানুষ।

উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রার মাসুদ পারভেজের ছত্রছায়ায় নিজের মনগড়া নিয়োগকৃত সবুজ আহমেদ, মহুরি আব্দুল মালিকের বিরুদ্ধে ঘুষ, দুর্নীতি ও নানা অনিয়ম করে লাখ লাখ টাকার মালিক হওয়ার অভিযোগ উঠেছে। তাদেরকে ‘খুশি’ না করে এ অফিসে কোনো কাজই করা সম্ভব হয় না। 

উপজেলা সাবরেজিস্ট্রি অফিস সূত্রে জানা যায়, গোয়াইনঘাট থানা সদরের (গোয়াইন গ্রামের) বাসিন্দা মৃত বশির উদ্দিনের ছেলে সবুজ আহমদ। তিনি ২০২০ সালে গোয়াইনঘাট সাব-রেজিস্ট্রার অফিসে অস্থায়ী কর্মচারী হিসাবে যোগ দেন। যোগদানের পর থেকেই শুরু হয় সবুজ সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য। 

আরো পড়ুন: আম বয়ানে শুরু বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্ব

সাব-রেজিস্টার মাসুদ পারভেজের ভয়ে মুখ খুলতে চায় না অফিসে কর্মরত কেউই। কয়েকজন দলিল লেখক নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রতিবেদককে জানান, প্রতিটি দলিলের ক্ষেত্রে দাখিলা বাবত ৭ শত টাকা, এক লক্ষ টাকা মূল্যের দলিলে ১ হাজার টাকা, ৫০ লক্ষ টাকা মূল্যের দলিলে ৫০ হাজার টাকা, খরিদদার অনুপস্থিত থাকিলে ৫শত টাকা, প্রতি শতক বাড়ীর জমিতে ১ হাজার টাকা, প্রতি শতক (আবাসিক) জমিতে ১ হাজার টাকা, বিকেল ৩টার পর দলিল প্রতি ১ হাজার টাকা, প্রতি দলিলে কমিশন বাবত ২০-৩০ হাজার টাকা দিতে হয়। সাব-রেজিস্ট্রার মাসুদ পারভেজের যোগসাজশে এসব টাকা উত্তোলন করেন সবুজ আহমদ, মহরিঘ আব্দুল মালিক চক্র। 

দীর্ঘদিন থেকে এসব অনিয়ম দুর্নীতি হলেও কেউই মুখ খুলতে রাজি হয়না, অবশেষে বৃহস্পতিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) উপজেলার পূর্ব আলীরগাঁও ইউনিয়নের বাসিন্দা সিরাজ উদ্দিন এসব অনিয়মের বিরুদ্ধে উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। 

অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, গত ৭ ফেব্রুয়ারি তিনি গোয়াইনঘাট এস.আর অফিসে দলিল দাতা হিসাবে উপস্থিত হলে তার পিতার নাম জাতীয় পরিচয়পত্রে আব্দুল আজিজ এবং জমির পর্চায় আব্দুল ওয়াজিদ হওয়ায় দলিল আটকানো হয়। পরে ইউনিয়ন চেয়ারম্যানের প্রত্যয়ন জমা দিলে দলিল লেখক জহুরুল ইসলাম বলেন, ৫ (পাঁচ) হাজার টাকা সাব-রেজিষ্টারকে না দিলে দলিল হবে না। পরে সাব-রেজিষ্টারের মনোনীত অফিসের কোনো পদে নয় এমন ব্যক্তি সবুজ আহমদের মাধ্যমে ৩ হাজার টাকা দিলে দলিল নিবন্ধন হয়। 

তিনি বলেন, সাব-রেজিস্টার এখানে যোগদানের পরই অযথা লেইট ফি দলিল প্রতি ২/৩ হাজার টাকা আদায় করেন। তিনি এভাবে অনেক দলিলে জাতীয় পরিচয়পত্রের নাম ও পর্চার নামে অমিলের কারণে প্রতি দলিলে ৩ থেকে ৫ হাজার টাকা নেন। তিনি আরো বলেন, গোয়াইনঘাট সাব-রেজিস্ট্রার অফিসের সবুজ আহমদ সিন্ডিকেটের কাছে নগদ টাকা দেয়া ছাড়া কোনো দলিল বা কাজই হয় না। দলিল প্রতি তাকে ১ হাজার থেকে ৩ হাজার টাকা দিতে হয়। 

আরো পড়ুন: রামেকে রোগীর ছেলেকে নির্যাতন, ২ চিকিৎসক বরখাস্ত

অফিসের একজন দলিল লেখক নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রতিবেদককে বলেন, গোয়াইনঘাট সাবরেজিস্ট্রি অফিসে ঘুষ ছাড়া কোনো কাজই হয় না। কোনো কারণে যদি দিনের বেলা দলিল না হয়, ঘুষ দিলে রাতেই দলিল হয়ে যায়। অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে সবুজ আহমদ বলেন, আমাদের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ করা হয়েছে তা ঠিক নয়। 

এদিকে গত ডিসেম্বর মাসে বিভিন্ন গ্রাহকের অভিযোগের ভিত্তিতে সিলেট জেলা পরিষদ সদস্য সুবাস দাস ও লেংগুড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান সরেজমিনে সাব-রেজিস্টার মাসুদ পারভেজকে বিভিন্ন গ্রাহকের অভিযোগের বিষয়টি মৌখিকভাবে অবহিত করেন। তখন সাব রেজিস্টার মাসুদ পারভেজ তাদেরকে বিষয়টি লিখিতভাবে দিতে বলেন। পরে তারা বিষয়টি মুঠোফোনে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকেও অবহিত করেন।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে সাব-রেজিস্টার মাসুদ পারভেজ নিজেকে নির্দোষ দাবী করে বলেন, আমার অফিসে কেউ দুর্নীতি করলে আমাকে লিখিতভাবে জানালে আমি ব্যবস্থা নেব।

অভিযোগের বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সিদ্ধার্থ ভৌমিক খুঁদে বার্তায় জানান, আমরা তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App