×

সারাদেশ

ক্যাপ্টেন আফতাবুল কাদের বীর উত্তমের শাহাদাতবার্ষিকী আজ

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৭ এপ্রিল ২০২৩, ০২:৪২ পিএম

ক্যাপ্টেন আফতাবুল কাদের বীর উত্তমের শাহাদাতবার্ষিকী আজ

ছবি: ভোরের কাগজ

পার্বত্য চট্টগ্রামে মুক্তিযুদ্ধের এক মহানায়কের নাম শহীদ ক্যাপ্টেন আফতাবুল কাদের (ইকবাল) বীর উত্তম। ১৯৭১ সালের ২৭ এপ্রিল খাগড়াছড়ির মহালছড়িতে পাকবাহিনী সাথে এক প্রচণ্ড সম্মুখযুদ্ধে তিনি শাহাদাৎ বরণ করেন।

ক্যাপ্টেন আফতাবুল কাদের (ইকবাল) ১৯৬৭ সালে পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। ১৯৬৯ সালে আর্টিলারি কোরে কমিশন প্রাপ্ত হন এবং ১৯৭০ সালে হায়দ্রাবাদ ক্যান্টনমেন্টে ৪০ ফিল্ড আর্টিলারি রেজিমেন্টে ক্যাপ্টেন হিসেবে যোগ দেন। ১৯৭১ সালে ৫ ফেব্রুয়ারি সরকারি কর্মস্থল পাকিস্তানের হায়দ্রাবাদ থেকে ছুটিতে নিজবাড়ি ঢাকায় আসেন। পরে ১৯ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রামে এসে খালাতো বোন মোর্শেদা জুলিয়াকে নিজের পছন্দে বিয়ে করেন।

বিয়ের অল্প কয়েকদিন পর যুদ্ধ শুরু হলে বদ্ধ ঘরে স্থির থাকতে পারেননি ক্যাপ্টেন কাদের। বিয়ের মেহেদীর রং না মুছতেই নববধূ ও সংসারের মায়া ত্যাগ করে ৫১ দিনের মাথায় ২৮ মার্চ মাকে বন্ধুর বাসায় যাবার কথা বলে ফেনীর শুভপুর যুদ্ধে ইপিআর বাহিনীর সাথে যোগ দেন। ২রা এপ্রিল রাতে ক্যাপ্টেন কাদের সীমান্ত শহর রামগড়ে আসেন করেন।

মুক্তিযুদ্ধের ১নং সেক্টরের প্রশিক্ষণ কেন্দ্র রামগড় সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে প্রায় ৫ শতাধিক সংগ্রামী তরুণকে অস্ত্র প্রশিক্ষণে অংশ নিলে তিনি সহযোগী ইপিআর সুবেদার এ. কে. এম. মফিজুল বারিকে সাথে নিয়ে মুক্তিকামী যুবকদের অস্ত্র চালানো ও যুদ্ধ কৌশলের প্রশিক্ষণ দেন। প্রশিক্ষণ দিয়ে কয়েকজন ইনসট্রাকটরকে প্লাটুনে ভাগ করে অন্যান্য অফিসারের সাথে ১০ এপ্রিল ক্যাপ্টেন কাদের ৫০ জনের একটি গ্রুপ পার্বত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়লে ক্যাপ্টেন কাদের তার গ্রুপ নিয়ে রাঙ্গামাটি রেকীতে অবস্থান করেন।

এদিকে, পাকসেনারা হাজার হাজার মিজোদের সহযোগিতায় মুক্তিযোদ্ধাদের গুরুত্বপূর্ণ সকল ঘাঁটির উপর বিমান হামলা শুরু করে। পাহাড়ি এলাকায় যুদ্ধে পাক বাহিনীর মোকাবিলায় মুক্তিযোদ্ধাদের রসদ ও গোলা বারুদ শেষ পর্যায়ে চলে এলে এমন নাজুক পরিস্থিতিক্ষণে ২৭ এপ্রিল সকালে শত্রু পক্ষের ভারি অস্ত্র ও নিয়মিত কমান্ডো কোম্পানির ১৫-১৬ শ মিজোর দুটি ব্রিগ্রেড মহালছড়িতে অবস্থানকারী মুক্তিযোদ্ধাদের উপর সর্বশক্তি নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে। এমন পরিস্থিতির খবর পেয়ে ক্যাপ্টেন কাদের রাঙ্গামাটি রেকী থেকে দ্রুত এসে খাগড়াছড়ির মহালছড়িতে তুমুল যুদ্ধে মুক্তি সেনাদের সাথে যোগদান করেন।

ক্যাপ্টেন কাদেরের সাহসী সম্মুখ যুদ্ধে পাক বাহিনী কিছুটা পিছু হটতে শুরু করে কিন্তু শেষ পর্যন্ত জীবন বাঁচানোর তাগিতে পাক সেনারা আবারো বেপরোয়া হয়ে মিজোদের সামনে রেখে একের পর এক আক্রমন চালিয়ে সামনে অগ্রসর হতে থাকলে এক পর্যায়ে শত্রুরা মুক্তিযুদ্ধাদের ঘিরে বেপরোয়া গোলাগুলি শুরু করলে ঘাতকের বুলেটে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন ক্যাপ্টেন কাদের তখন সহযোদ্ধা শওকত আলী এবং সিপাহী ড্রাইভার আব্বাস আহত ক্যাপ্টেন কাদেরকে একটি জিপযোগে রামগড় আনার পথে গুইমারায় আহত ক্যাপ্টেন কাদের পানি পান করতে চাইলে পান করানো হয় আর সেখানেই তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

পরে ২৭ এপ্রিলের বিকালে শহীদ বীরযোদ্ধা ক্যাপ্টেন কাদের এর পবিত্র মরদেহ রামগড় নিয়ে আসা হয়। সন্ধ্যার প্রক্কালে রামগড় কেন্দ্রীয় মসজিদ প্রাঙ্গণে ইমাম মাওলানা মোহাম্মদ মোস্তফার পরিচালনায় শহীদ ক্যাপ্টেন আফতাবুল কাদেরের জানাজা নামাজ শেষে কেন্দ্রীয় কবরস্থানে পূর্ণ সামরিক ও ধর্মীয় মর্যাদায় দাফন করা হয়।

ক্যাপ্টেন আফতাবুল কাদের (ইকবাল) জন্ম ১৯৪৭ সালে ২৫ ডিসেম্বর দিনাজপুর শহরে। তবে পৈত্রিক গ্রামের বাড়ি লক্ষীপুর জেলার (তৎকালীন বৃহত্তর নোয়াখালী) রামগঞ্জ থানাধীন টিওড়া গ্রামে। পিতা স্থায়ী নিবাস গড়ে তোলেন পুরাতন ঢাকার ফরিদাবাদ এলাকার লাল মোহন পোদ্দার লেনে। সেখানেই অকুতোভয় এই সৈনিকের শৈশব কাটে। পিতা মরহুম আবদুল কাদের ছিলেন ইংরেজ আমলের একজন ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট, মাতা রশন আরা বেগম ছিলেন গৃহীনি। ক্যাপ্টেন কাদের ১৯৬৪ সালে ময়মনসিংহ শহরের মৃত্যুঞ্জয় স্কুল থেকে এসএসসি এবং ১৯৬৬ সালে আনন্দ মোহন কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করে ইংরেজিতে স্নাতক (সম্মান) এ ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে।

যুদ্ধ পরবর্তীতে মুক্তিযুদ্ধের অসাধারণ ও গৌরবোজ্জ্বল অবদানের স্বীকৃতির স্বরূপ ১৯৭৪ সালে সরকার ক্যাপ্টেন আফতাবুল কাদেরকে মরণোত্তর ‘বীর উত্তম’ উপাধিতে ভূষিত করেন। তার নামে স্মৃতিসৌধ (খাগড়াছড়ি), ভার্স্কয (মহালছড়ি), কেজি স্কুল (রামগড়), তৎকালীন রামগড় ১৬ বর্ডার গার্ড ব্যাটালিয়নের উদ্যেগে তার নামে রাস্তার নাম করণ এবং শহীদ ক্যাপ্টেন আ. কাদের বিদ্যা নিকেতন নামে রামগড়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করা হয়।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App