শেখ হাসিনার পতনের জন্য যে ৪ জন দায়ী
কাগজ ডেস্ক
প্রকাশ: ২২ আগস্ট ২০২৪, ১০:৫২ পিএম
ছাত্র-জনতার তুমুল বিক্ষোভের মুখে গেল ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছেন শেখ হাসিনা। এরপর সামরিক বিমানে করে ভারতে পালাতে বাধ্য হন তিনি। শেখ হাসিনার আকস্মিক পদত্যাগ এবং দেশত্যাগে বিস্মিত হয়েছিলেন আওয়ামী লীগ সরকারের তৎকালীন অনেক মন্ত্রী ও নেতা। আওয়ামী লীগের আত্মগোপনে থাকা কয়েকজন নেতা ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে দেয়া এক বার্তায় জানিয়েছে- শেখ হাসিনা সরকারের পতনের মূলে রয়েছে চারজনের একটি চক্র। গত এক সপ্তাহে দলটির আত্মগোপনে থাকা কয়েকজন নেতার সঙ্গে কথা বলতে সক্ষম হয়েছেন দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের একজন প্রতিনিধি।
আত্মগোপনে থাকা নেতারা দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে জানিয়েছেন, ‘হাসিনা দল ও জনগণকে পরিত্যাগ করেছেন।’ আওয়ামী লীগের এক নেতা বলেছেন, ‘আপা আমাদের ছেড়ে গেছেন।’ আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের জন্য আত্মগোপনে থাকা ওই নেতাদের একজন দলের অভ্যন্তরীণ একটি স্বার্থগোষ্ঠীকে দায়ী করে বলেছেন, ‘শেখ হাসিনা আমাদের কথা শোনেননি।’ এই চক্রটিকে ‘গ্যাং অব ফোর’ বলে আখ্যায়িত করেন নেতাদের একজন। তিনি বলেন, চক্রটি শেখ হাসিনাকে বাস্তব অবস্থা বুঝতে দেয়নি।
এই চক্রটির চার নেতা হলেন, শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, সালমান এফ রহমান, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান। আওয়ামী লীগের ওই নেতা বলেন, ‘চারজনের এই দল হাসিনার পতনে নেতৃত্ব দিয়েছে। এই ব্যক্তিদের ওপর শেখ হাসিনার অন্ধবিশ্বাস ছিল। তার যে সহজাত রাজনৈতিক প্রজ্ঞা ছিল, তা তিনি এই চারজনের কারণেই হারিয়েছেন।’
আওয়ামী লীগের এক নেতা বলেন, দুর্নীতি, চাঁদাবাজি, নির্যাতন, পুলিশের নিষ্ঠুরতায় জনগণের মধ্যে যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে, তা আমরা বুঝতে পেরেছিলাম। বিএনপি নির্বাচনে গেলে সেই ক্ষোভ হয়তো থামানো যেত। তাতে আমরাই আবার জিততে পারতাম এবং দল ক্ষমতায় থাকতো। তারা জানান, ৫ আগস্টের ঘটনাবলি তারা আগে থেকে আঁচ করতে পারেননি। সেদিন শেখ হাসিনা তার বোন শেখ রেহানাকে সঙ্গে নিয়ে দেশ ছেড়ে ভারতে চলে যান। শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে ও মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ ভারতে রয়েছেন।
আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্র জানায়, হাসিনার দেশ ছাড়ার সিদ্ধান্ত তার মন্ত্রিসভার সদস্য, এমনকি ঘনিষ্ঠ সহযোগীদেরও ‘পুরোপুরি বিস্মিত’ করে। এক নেতা বলেন, ‘আমরা টেলিভিশনের খবর থেকে এটা জানতে পারি।’ এভাবে শেখ হাসিনার চলে যাওয়ার ঘটনা আওয়ামী লীগের নেতা–কর্মীদের জীবন বিপদের মধ্যে ফেলেছে। ‘বিক্ষোভকারী, বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর কর্মী এবং সুযোগসন্ধানীরা’ আওয়ামী লীগের নেতাদের বাড়িঘর, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও দলীয় কার্যালয়গুলো নিশানা বানান। অগ্নিসংযোগ, লুট ও ভাঙচুর করা হয়েছে দলের নেতা-কর্মীদের বাড়ি ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে।
আওয়ামী লীগের এক নেতা বলেন, ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা চলে যাওয়ার পর সেনাপ্রধান যখন বেলা তিনটার দিকে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন সে সময় শুধু বাড়ি থেকে বের হওয়ার সুযোগ পাই আমরা। আরেক নেতা ও সাবেক মন্ত্রী বলেন, ‘আমি ও আমার পরিবারের সদস্যরা ধরা পড়লে লোকজন আমাদের জীবন্ত পুড়িয়ে মারতেন।’