সাবেক ১৮ মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রীসহ ৪১ জনের বিরুদ্ধে দুদকের অনুসন্ধান, কারা কারা?
কাগজ ডেস্ক
প্রকাশ: ২০ আগস্ট ২০২৪, ০৬:০৫ পিএম
অবিশ্বাস্য, অকল্পনীয়ভাবে বেড়েছে গত ১৫ বছরে থাকা শেখ হাসিনা সরকারের মন্ত্রী-এমপিদের। শতাংশের হারে শত থেকে সহস্রাধিক গুণ সম্পদ বেড়েছে। এমনকি কারও বেড়েছে লাখ গুণ। বক্তৃতা-বিবৃতিতে দেশ ও মানুষের কল্যাণের কথা বলে মুখে ফেনা তুললেও বাস্তবে মন্ত্রী-এমপিরা নিজেকে বিত্তশালী করতেই ব্যস্ত সময় কাটিয়েছেন। গত ১৫ বছরে তাদের প্রায় সবাই সম্পদের পাহাড় গড়েছেন।
স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ ও আয়ে শীর্ষে থাকা ৪১ জন সাবেক মন্ত্রী-এমপির দুর্নীতি ও অবৈধ সম্পদ অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। পর্যায়ক্রমে এদের সবার বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করবে সংস্থাটি। এরই মধ্যে তিনজন উপপরিচালকের নেতৃত্বে আলাদা টিম গঠন করা হয়েছে।
জানা গেছে, গত ১৫ বছরে রেকর্ড পরিমাণ ২,৪৩,৫১৩% অস্থাবর সম্পদ বাড়িয়ে শীর্ষস্থানে আছেন রাজশাহী-৪ আসনের এমপি এনামুলক হক। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৮৩২৪% সম্পদ বাড়িয়েছেন জাতীয় সংসদের সাবেক চিফ হুইপ নূর-ই-আলম চৌধুরী লিটন। এরপর যথাক্রমে সাবেক মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকির ৭৬৯২%, খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদারের ৬৩৫০%, আইন ও খাদ্য প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করা কামরুল ইসলামের ৫৩৯০%, সাবেক তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুর ৪৭২৩%, পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদের ৪৬৮৩%, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ আসনের এমপি জিয়াউর রহমানের ৪৬৮২% ও ঢাকা-২০ আসনের এমপি বেনজীর আহমেদের ৮১৯৭% সম্পদ বেড়েছে।
আরও জানা গেছে, আয় বৃদ্ধিতে শীর্ষ ১০ মন্ত্রী-এমপি আছেন দুদকের তালিকায়। এদের মধ্যে পিরোজপুর-২ আসনের সাবেক এমপি জাতীয় পার্টি (জেপি) নেতা আনোয়ার হোসেন মঞ্জু ৭১১৬%, জয়পুরহাট-২ আসনের আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপনের ২৮৯৫%, বাগেরহাট-১ আসনের হেলাল উদ্দিনের ২৭৬৭%, রাজশাহী-৪ আসনের এনামুল হকের ২৭৫৬% ও গাজীপুর-২ আসনের জাহিদ আহসান রাসেলের ২৫৪৫% আয় বেড়েছে।
গত ৫ বছরের অস্থাবর সম্পদ বৃদ্ধির তালিকায় পুরোনোদের সঙ্গে যোগ হয়েছে নতুন নতুন মুখ। এই তালিকায় ৯ জনের নাম রয়েছে। এখানেও ৫৪৭০% অস্থাবর সম্পদ বাড়িয়ে শীর্ষস্থান অক্ষুণ্ণ রেখেছেন রাজশাহীর এমপি এনামুল হক। এরপর যথাক্রমে নোয়াখালী-৩ আসনের মামুনুর রশীদ কিরণের ৩০৬৫%, নাটোর-১ আসনের শহিদুল ইসলাম বকুলের ১৯১৩%, পটুয়াখালী-৪ আসনের মহিববুর রহমানের ১০২৪%, মেহের আফরোজ চুমকির ৮২৭% অস্থাবর সম্পদ বেড়েছে।
জানা গেছে, গত ১৫ বছরে অস্বাভাবিক স্থাবর সম্পদ বাড়ার তালিকায় আছেন আরও ১৬ জন। তাদের মধ্যে সাবেক খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদারের ৬৩৫০%, গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেনের ২৮৫৮%, পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজীর ২৭০৩%, প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী ইমরান আহমেদের ২১৬৯%, স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের ৭৮৩%, শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদারের ৪৯৩% ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ সম্পদ বেড়েছে।
জানা গেছে, সবশেষ গত ৫ বছরে অস্বাভাবিক আয় বৃদ্ধির তালিকায় আছেন বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু, ত্রাণ ও দুর্যোগ প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান, শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, নৌ প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, স্থানীয় সরকার মন্ত্রী তাজুল ইসলাম, শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী, তথ্য প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক ও ধর্ম প্রতিমন্ত্রী ফরিদুল হক খান। এদের প্রতিজনের সর্বনিন্ম ১৩২% থেকে সর্বোচ্চ ১০৬৩% সম্পদ বেড়েছে।
দুদক কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে,মন্ত্রী-এমপিদের সীমাহীন এই আয় ও সম্পদ বৃদ্ধি দুর্নীতি ছাড়া সম্ভব হয়নি। অনেক মন্ত্রী-এমপির সম্পদ বাড়ার চিত্র রূপকথার গল্পকেও হার মানিয়েছে।