সাত ব্যাংক থেকে সালমান যেভাবে শত শত কোটি টাকা ঋণ নিয়েছেন
কাগজ ডেস্ক
প্রকাশ: ১৫ আগস্ট ২০২৪, ০৯:০৫ পিএম
সদ্য সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা ছিলেন সালমান এফ রহমান। গেল রমজানেও মক্কার খুব কাছে ইতিকাফে বসেছিলেন তিনি। মুখ ভর্তি দাড়ি, পরনে সবসময় সাদা পাঞ্জাবি। দেখে মনে হবে তিনি যেন সুফি-দরবেশ। বোঝার উপায় নেই যে এই চেহারার আড়ালে রয়েছেন একজন প্রবল পরাক্রমশালী ব্যবসায়ী। যার হাতের ইশারায় চলেছে দেশের ব্যাংক খাত ও পুঁজিবাজার। ধ্বংস হয়েছে দেশের আর্থিক খাতের মেরুদণ্ড।
সালমান এফ রহমান প্রভাব খাটিয়ে দেশের সরকারি ও বেসরকারি সাতটি ব্যাংক থেকে নামে-বেনামে ৩৬ হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়েছেন। এসব ঋণ নেওয়ার ক্ষেত্রে মানা হয়নি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কোনো আইন। পর্যাপ্ত জামানতও নেই অধিকাংশ ঋণে।
আবার বছরের পর বছর ঋণের অর্থ পরিশোধ না করেই বারবার করেছেন পুনঃতফশিল। সবমিলিয়ে ব্যাংক খাতে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছেন প্রধানমন্ত্রীর সাবেক এই বিনিয়োগ উপদেষ্টা। এসব অপরাধ জেনেও চুপ ছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। তাই এসব ঋণ এখন ঝুঁকি সৃষ্টি করেছে। অধিকাংশ ঋণই খেলাপির ঝুঁকি রয়েছে।
সালমান এফ রহমান রাষ্ট্রায়ত্ত জনতা ব্যাংক থেকে সবচেয়ে বেশি ঋণ বের করেছেন। এই ব্যাংকে বেশিরভাগ ঋণই ছিল তার বেনামি। এতদিন তার নামে জনতা ব্যাংকে থাকা ঋণ ১০ হাজার কোটি টাকা দেখিয়ে আসছিলেন। সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে তার ২৯ প্রতিষ্ঠানে ফান্ডেড ও নন-ফান্ডেড ২১ হাজার ৬৮১ কোটি টাকার ঋণের তথ্য বেরিয়ে আসে।
২০২৩ সাল শেষে জনতা ব্যাংকের বার্ষিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ব্যাংকটিতে সালমান এফ রহমানের দুই প্রতিষ্ঠানে ২৩ হাজার ৭০ কোটি টাকার ঋণ স্থিতি দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ম অনুযায়ী, একক গ্রাহককে মূলধনের ২৫ শতাংশের (ফান্ডেড ও নন-ফান্ডেড) বেশি ঋণ দেওয়ার নিয়ম নেই। তবে জনতা ব্যাংক একটি গ্রুপকেই ব্যাংকের মূলধনের ৯৪৯ দশমিক ৭৮ শতাংশ ঋণ সুবিধা দিয়েছে।
সালমান এফ রহমান নিজের মালিকানাধীন আইএফআইসি ব্যাংক থেকে মোটা অঙ্কের ঋণ নিয়েছেন। প্রতিবেদন অনুযায়ী, শ্রীপুর টাউনশিপ প্রতিষ্ঠানের নামে নন-ফান্ডেড ১ হাজার ২০ কোটি টাকা, সানস্টার বিজনেসের নামে ৬১৫ কোটি, ফারেস্ট বিজনেসের নামে ৬১৪ কোটি টাকা ঋণ নেন। এর মধ্যে বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানই বেনামি।
বাদ যায়নি ধুঁকতে থাকা ন্যাশনাল ব্যাংক। বেসরকারি খাতের ন্যাশনাল ব্যাংক থেকেও সালমান এফ রহমান নামে-বেনামে ঋণ বের করে নিয়েছেন। ব্যাংকটি থেকে এসব ঋণ বহু বছর আগের। কোনো অর্থ পরিশোধ না করেই নিয়মিত থেকে যাচ্ছেন।
সোনালী, অগ্রণী ও রূপালী ব্যাংকে দীর্ঘদিনের ঋণ রয়েছে সালমান এফ রহমানের। তথ্য অনুযায়ী, অগ্রণী ব্যাংক থেকে বেক্সিমকো লিমিটেডের ফান্ডেড ৬৬৩ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছেন। এছাড়াও বেক্সিমকো গ্রুপের নাম দিয়েই কোটি কোটি টাকা ঋণ রয়েছে। রূপালী ব্যাংক থেকে বেক্সিমকো লিমিটেডে ৯৬৫ কোটি টাকার ঋণ রয়েছে। এবি ব্যাংকে সালমান এফ রহমানের চার প্রতিষ্ঠান ঋণ রয়েছে। সবগুলো ঋণই পুনর্গঠিত। বর্তমানে চার প্রতিষ্ঠানের ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ৬০৫ কোটি টাকা।