কারামুক্ত জীবনে যেসব আক্ষেপ ছিল জল্লাদ শাহজাহানের
কাগজ ডেস্ক
প্রকাশ: ২৪ জুন ২০২৪, ১০:০২ পিএম
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা মামলার মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ৬ আসামিসহ মোট ৬০ জনের ফাঁসির দড়ি টানা আলোচিত ‘জল্লাদ’ শাহজাহান ভূঁইয়া মারা গেছেন। ২৪ জুন সোমবার রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। ‘জল্লাদ’শাহজাহানের বোন ফিরোজা বেগম তার মৃত্যুর খবরটি নিশ্চিত করেছেন।
১৯৭৯ সালে গ্রেফতার হওয়ার পর ৩৬টি মামলায় তার ১৪৩ বছরের সাঁজা হয়। এর মধ্যে একটি অস্ত্র মামলা, একটি ডাকাতি মামলা এবং বাকি ৩৪টি হত্যা মামলা। পরে ৮৭ বছরের জেল মাফ করে তাকে ৫৬ বছরের জন্য সাঁজা দেওয়া হয়। ফাঁসি কার্যকর ও সশ্রম কারাদণ্ডের সুবিধার কারণে সেই সাঁজা ৪৩ বছরে এসে নামে। অবশেষে ৪৪ বছর পর জেল খাটার পর ২০২৩ সালের ১৮ জুন কারামুক্ত হয়ে খোলা আকাশের নিচে দাঁড়িয়ে শ্বাস ফেলার সুযোগ পান জল্লাদ শাহজাহান।
১৯৫০ সালের ২৬ মার্চ নরসিংদীর পলাশ উপজেলার ইছাখালী গ্রামে জন্ম নেন শাহজাহান ভূঁইয়া। কারাজীবনে মোট ২৬ জনের ফাঁসি দিয়েছেন জল্লাদ শাহজাহান। এর মধ্যে ছয়জন বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি, চারজন যুদ্ধাপরাধী, জঙ্গি নেতা বাংলাভাইসহ দুজন জেএমবি সদস্য এবং আরও ১৪ জন অন্যান্য আলোচিত মামলার আসামির ফাঁসি কার্যকর করেছেন তিনি।
কারাগার থেকে ফিরে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত মাত্র ৩৭১টি দিন নানা কারণে তার জীবনে বিষাদময় হয়ে উঠেছিল। কারামুক্ত হওয়ার পর নানা কষ্টে দিন কেটেছে তার। ক্ষুধার্ত পেটে অনাহারে কাটিয়েছেন অনেক রাত। প্রেস ক্লাবে একটি সংবাদ সম্মেলনে জল্লাদ শাহজাহান বলেছিলেন, 'কারাগারের বাইরের জীবন এত কঠিন হবে জানলে কারাগারেই থেকে যেতাম। চরম অর্থনৈতিক সংকটের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেছিলেন, তার কাজ করার মতো ক্ষমতা নেই, আয়-রোজগার নেই, অর্থের যোগানদাতা নেই, নিজের থাকার জায়গা নেই। ৪৪ বছর কারাভোগ করার পর বাইরে এসে তিনি বারবার প্রতারণার খপ্পরে পড়ছিলেন বলেও ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন।
কারামুক্তির পর ২০২৩ সালের ২১ ডিসেম্বর বিয়ে করে সেখানেও সর্বস্বান্ত হয়েছিলেন তিনি। বিয়ের কাবিন ৫ লাখ টাকা হলেও তার কাছে থাকা ১০ লাখ টাকা স্ট্যাম্পে লিখিত নিয়ে তার স্ত্রী সাথী আক্তার ফাতেমা বিয়ের ৫৩ দিনের মাথায় পালিয়ে যায় বলে অভিযোগ করেছিলেন তিনি। পালিয়ে যাওয়ার পর তার নামে একটি যৌতুকের মামলা দেয় তার স্ত্রী। এরপর একজন আইনজীবীর সহযোগিতায় আদালতে তার স্ত্রী, শাশুড়িসহ ৬ জনের নামে মামলা করেন তিনি।
আক্ষেপ করে শাহজাহান বলেছিলেন, 'মানুষের বেঁচে থাকার জন্য অপরিহার্য উপাদান খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসা-এগুলোর কোনোটিই আমি পাচ্ছি না। দুই-তিন দিন পর পর ভাত খাই। কেউ আমাকে খাবার দিলে খাই, না দিলে না খেয়ে থাকি। আমার থাকার জায়গা নেই। তাই ফুটপাতে, গ্যারেজে বা কেউ সাময়িক আশ্রয় দিলে সেখানে থেকে খুব কষ্টে সময় পার করি। এভাবে চলতে থাকলে আমার আত্মহত্যা করা ছাড়া আর কোনো উপায় থাকবে না।' এসব জানিয়ে প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনার কাছেও একটি আবাসন ও একটি কর্মসংস্থানের অনুরোধ জানিয়েছিলেন তিনি।