×

ভিডিও

১৬ হাজার টাকার নাট-বল্টু হয়ে গেল ২ কোটি ৫৯ লাখ টাকা!

Icon

কাগজ ডেস্ক

প্রকাশ: ১০ মে ২০২৪, ১১:৩৩ এএম

বাংলাদেশে দুঃখের বিষয় যে, নাট-বল্টু-ওয়াশার মতো ছোট ছোট জিনিস এখনও বিদেশ থেকে কিনে আনতে হয়। এগুলো আমরা নিজেরা তৈরি করতে পারি না। আর এই সুযোগে অসাধু ব্যবসায়ী এবং সরকারি কর্মকর্তারা বিদেশ থেকে আমদানি করার কথা বলে হাতিয়ে নিচ্ছে বহুগুণ অর্থ। এমনই একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে দেশের প্রথম সারির একটি গণমাধ্যমে।বাংলাদেশে দুর্নীতি-অনিয়ম বা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডগুলো যে কোন মাত্রায় পৌঁছেছে, এই প্রতিবেদনটি তার অতিক্ষুদ্র একটি নমুনা। 

এক কেজি নাট-বল্টুর দাম ২ দশমিক ১৮ ডলার। ভারত থেকে ৬৮ কেজি নাট, বল্টু ও ওয়াশার আমদানি করেছে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ লিমিটেড পিজিসিবিএল। এর দাম হওয়ার কথা ছিল ১৪৮ ডলার বা ১৬ হাজার টাকা। সেটা আমরা কিনে এনেছি ২ লাখ ৩৯ হাজার ৬৯৫ ডলার বা ২ কোটি ৫৯ লাখ টাকা দিয়ে।

পিজিসিবিএলের চীনা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান টিবিইএ কোম্পানি লিমিটেড ভারতের স্কিপার লিমিটেড থেকে প্রকৃত মূল্যের চেয়ে ১ হাজার ৬১৯ গুণ বেশি দামে আমদানি করেছে এগুলো।এত অধিক মূল্যে নাট-বল্টু আমদানি করায় মোংলা কাস্টমস কর্তৃপক্ষ প্রশ্ন তুলেছে। পণ্য ছাড় করানোর জন্য পিজিসিবিএলের অধিক তৎপরতা লক্ষ্য করা গেছে। তাদের অসংলগ্ন, অসত্য ও পরস্পর বিরোধী বক্তব্য ও কর্মকাণ্ড দৃশ্যমান হয়েছে।

কাস্টমসের চিঠির উত্তরে পিজিসিবিএলের প্রকল্প পরিচালক ও প্রধান প্রকৌশলী মো. শাহাদত হোসেন প্রথমে  এ ঘটানায় ব্যাখ্যা দিয়েছেন এভাবে যে, পূর্বে যখন এসব পণ্য আমদানি করা হয়েছিল তখন ভারতীয় প্রতিষ্ঠান পণ্য বেশি পাঠিয়েছিল। এখন কম পাঠিয়ে পূর্বের দামের সঙ্গে সমন্বয় করা হয়েছে; গড় মূল্য ঠিকই আছে। অথচ,এই বক্তব্যটি যে ছেলেমানুষি বুঝতে বাকি থাকে না যখন তারা এর পক্ষ্যে কোন এলসি, ইনভয়েসের নথি জমা দিতে পারেনি। পণ্য ছাড় করানোর জন্য বহুবিধ প্রক্রিয়ায় চেষ্টা করেছে। এমনকি পণ্য খালাস করানোর জন্য একজন সিঅ্যাণ্ডএফ এজেন্টও নিয়োগ দেয়।

শেষ পর্যন্ত কাস্টমসের সচেতনতায় পণ্য খালাস করতে ব্যর্থ হয় তারা। তখন তাদের ব্যাখ্যা ছিল, পণ্যগুলো ভুলবশত আমদানি করা হয়েছে। এটা একটি মানবিক ভুল। ঘটনাটি এখানেই শেষ নয়, এরপর তারা বলে ভারতীয় কোম্পানি ভুল করে দাম বেশি দেখিয়েছে। 

পিজিসিবিএল যখন কোনোভাবেই পণ্যের চালান ছাড় করাতে পারেনি, তখন তারা চালানটি পুনরায় ভারতে রপ্তানি করার চেষ্টা চালাতে শুরু করে। সামগ্রিকভাবে প্রতিবেদনটির তথ্য পর্যালোচনা করলে পরিষ্কারভাবে বোঝা যায়, পিজিসিবিএল ও চীনা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান পারস্পরিক যোগসাজশেই অধিক মূল্যে আমদানির ঘটনাটি ঘটিয়েছে। সেখানে অসৎ উদ্দেশ্য খুব পরিষ্কার। 

উল্লেখ্য, গত ১ এপ্রিল মাতারবাড়ী বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কেনাকাটা নিয়ে ঐ পত্রিকাটিতে আরেকটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছিল। সেখানে দেখা যায়, ১৪ হাজার ৫০০ টাকার দুটি পাইপ কাটার কেনা হয়েছিল ৯৩ লাখ টাকায়। ১ লাখ ৮২ হাজার টাকায় দুটি হাতুড়ি কেনা হয়েছিল, যার প্রকৃত মূল্য ছিল ১ হাজার ৬৬৮ টাকা। সেখানেও কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেডের (সিপিজিসিবিএল) কর্মকর্তারা হাস্যকর ও রসিকতাপূর্ণ যুক্তি দিয়েছিলেন।

যা হওয়া দরকার ছিল দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির বিষয়, তা হয়ে গেছে হাসি রসিকতার বিষয়। এটা তাদের বড় রকমের কৃতিত্ব যে শাস্তি বা জবাবদিহির পরিবর্তে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডগুলোকে তারা মশকরায় পরিণত করতে পেরেছেন। এরকম অনিয়ম আর দুর্নীতির খবর প্রকাশ পায় মাত্র কয়েকটি কিন্তু আড়ালে থেকে যায় হাজারো ঘটনা।  এখন প্রশ্ন হচ্ছে, এ ঘটনায় আদৌ কি কোন তদন্ত করা হবে ? এই অনিয়ম, দুর্নীতি থেকে আদৌ বের হতে পারবে বাংলাদেশ। 

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App