×

ভিডিও

যে ভয়ংকর দ্বন্দ্বের কারণে খুন হন নায়ক সোহেল চৌধুরী

Icon

কাগজ ডেস্ক

প্রকাশ: ০৯ মে ২০২৪, ১১:০৬ পিএম

১৯৯৮ সালের ১৮ ডিসেম্বরের ভোর। রাজধানীর অভিজাত এলাকা বনানীর ১৭ নম্বর রোডের আবেদীন টাওয়ারে অবস্থিত ট্রাম্প ক্লাবের নিচে উপুড় হয়ে থাকা একটি মরদেহ ঘিরে দাঁড়িয়েছিল শত শত মানুষ। রক্তে ভেসে যাচ্ছিল চারপাশ। রক্তের ছাপ শুরু হয়েছিল ক্লাবের সিঁড়ির সামনে থেকে। উপুড় হয়ে থাকা দেহটি যখন ঘোরানো হয় তখন পরিচিত মুখটি দেখে অনেকেই আঁতকে ওঠেন। তিনি ছিলেন সে সময়ের বাংলা চলচ্চিত্রের জনপ্রিয় নায়ক সোহেল চৌধুরী। 

দেশজুড়ে ব্যাপক চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছিল সোহেল চৌধুরীর হত্যাকাণ্ড ঘিরে। সেই চাঞ্চল্যকর হত্যাকাণ্ডের ২৫ বছর পর ৯মে রায় ঘোষিত হলো। আদালত নায়ক সোহেল চৌধুরী হত্যায় আজিজ মোহাম্মদ ভাইসহ ৩ জনের যাবজ্জীবন সাজা দিয়েছেন। খালাস পেয়েছেন ৬ জন।  

চিত্রনায়ক সোহেল চৌধুরী হত্যা মামলার একাধিক প্রত্যক্ষদর্শী-সাক্ষী জবানবন্দিতে বলেছেন, ১৯৯৮ সালের ২৪ জুলাইয়ের একটি ঘটনা থেকে আজিজ মোহাম্মদ ভাই, আজিজের আত্মীয় বান্টি ইসলাম, বান্টির বন্ধু আশীষ রায় চৌধুরীর সঙ্গে সোহেলের বিরোধের শুরু। এর জেরেই ট্রাম্প ক্লাবের সামনে ভাড়াটে লোক দিয়ে হত্যা করা হয় সোহেল চৌধুরীকে। কিন্তু কী এমন ভয়ানক কারণ, যেজন্য খুন হতে হলো দেশের একজন জনপ্রিয় অভিনেতাকে। 

বনানীর ট্রাম্প ক্লাবের পশ্চিম পাশে ছিল একটি জামে মসজিদ। ওই ক্লাবে নাচ-গানসহ অসামাজিক কার্যকলাপ চলত। ক্লাবের অসামাজিক কার্যকলাপ বন্ধে স্থানীয় মুসল্লিদের পক্ষে অবস্থান নেন সোহেল চৌধুরী। তিনি মসজিদ কমিটির লোকজন নিয়ে ক্লাব বন্ধ করার চেষ্টা করেন। কিন্তু ব্যর্থ হন। এ নিয়ে আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের সঙ্গে সোহেল চৌধুরীর ঝামেলা শুরু হয়। 

২৪ জুলাই রাত। সোহেল চৌধুরী ও তাঁর কয়েকজন বন্ধু সেই ক্লাবে যান। সেখানে বিতর্কিত ধনকুবের আজিজ মোহাম্মদ ভাইও ছিলেন। সেদিন রাতে বনানীর ট্রাম্প ক্লাবে গান বন্ধ করতে বলেছিলেন সোহেল চৌধুরী ও তাঁর বন্ধুরা। এ নিয়ে আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের সঙ্গে সোহেলের কথা-কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে সোহেল চৌধুরী আজিজের ওপর ক্ষেপে যান। তখন সোহেলের বন্ধু কালা নাসির গুলি করতে যান আজিজ মোহাম্মদ ভাইকে। এর পরের ঘটনা অনেকেরই জানা। 

সোহেলের বন্ধু গোলাম মোহাম্মদ বলেছিলেন, খুন হওয়ার আগে আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের সঙ্গে সোহেল চৌধুরীর ঝগড়া হয়। বিষয়টি তাঁর সামনে ঘটেছিল। এ ছাড়া ট্রাম্প ক্লাবের বান্টি ইসলামের সঙ্গে সোহেলের দুই থেকে তিনবার ঝগড়া হয়। পরে তা মিটেও যায়। তবে আশীষ রায় চৌধুরী ওরফে বোতল চৌধুরীর সঙ্গে কথা-কাটাকাটি ও হাতাহাতি এড়ানো যায়নি। আশীষ চৌধুরীই সোহেল চৌধুরীকে ক্লাব থেকে বের করে দেন। ভবিষ্যতে সোহেলকে ক্লাবে না আসার জন্য হুমকিও দেন।

এর আগে, সোহেল চৌধুরী হত্যা নিয়ে তাঁর মা নূরজাহান বেগমও আদালতকে বলেন, সোহেল খুন হওয়ার ১৫ থেকে ২০ দিন আগে টেলিফোনে আজিজ মোহাম্মদ ভাই ও বান্টি ইসলামের লোকজন হত্যার হুমকি দিয়েছিলেন। তাঁরা বলেছিলেন, সোহেলের মৃত্যুর দিন ঘনিয়ে আসছে।

চার্জশিটে আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের সঙ্গে সোহেল চৌধুরীর বিভিন্ন ইস্যুতে বাকবিতণ্ডা ও হাতাহাতির কথা উল্ল্যেখ করা হয়। এজন্য আজিজ মোহাম্মদ ভাই ও বান্টি ইসলাম সোহেল চৌধুরীকে ‘শিক্ষা দিতে’ চান। ২৪ জুলাই ছাড়াও কয়েকবারই সোহেল চৌধুরীর সঙ্গে ট্রাম্পস ক্লাবের অতিথি এবং কর্মীদের গোলমাল হয়েছিল বলে উল্লেখ করা হয়েছে চার্জশিটে। 

বিভিন্ন কারণে এই মামলার বিচারের দীর্ঘসূত্রিতা দেখা দেয়। যে কারণে ২০২২ সাল পর্যন্ত আটকে থাকে বিচার বিচার কার্যক্রম। তবে, ২০২২ সালের পর  নতুন করে শুরু হয় মামলার কার্যক্রম। তারই চূড়ান্ত পরিণতিতে অবশেষে হত্যাকারীদের বিরুদ্ধে শাস্তির রায় ঘোষিত হলো। 

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App