×

ভিডিও

ঈদের শপিং করা হলো না ৩ বন্ধুর

Icon

কাগজ ডেস্ক

প্রকাশ: ০৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৪:৩৭ পিএম

ঈদ উপলক্ষে কেনাকাটা করতে ১১ বন্ধু ট্রেনে করে যাচ্ছিলেন চট্টগ্রামে। ট্রেনে ওঠার আগে সবাই মিলে রেলস্টেশনে একটি সেলফি তুলেন ও সেটি ফেসবুকে পোস্ট করেন। কিন্তু তারা কি কখনো ভেবেছিলো এটিই হবে তাদের জীবনের শেষ ছবি ও শেষবারের মতো ট্রেনে চড়া? ইদের কেনাকাটার জন্য তাদের আর চট্টগ্রামে যাওয়া হয়নি। পথেই ট্রেন দুর্ঘটনায় মারা গেছেন তিন বন্ধু। ঈদের কেনাকাটার পরিবর্তে তিন বন্ধুর লাশ নিয়ে গ্রামে ফেরেন অন্য বন্ধুরা।


শুক্রবার (৫ এপ্রিল) সকাল সোয়া ৮টার দিকে ফেনীর ফাজিলপুর রেলস্টেশন ও মুহুরীগঞ্জ রেলস্টেশনের মধ্যবর্তী স্থানে এ দুর্ঘটনা ঘটে।


ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা একটি মেইল ট্রেন মুহুরীগঞ্জ রেলসেতু এলাকায় পৌঁছালে রেলক্রসিংয়ে বালুবাহী একটি ট্রাককে ধাক্কা দেয়। এ ঘটনায় ছয়জন মারা যান। 


নিহতরা হলেন- বরিশালের উজিরপুর উপজেলার কাউয়ারাকা গ্রামের আবুল হাওলাদারের ছেলে ট্রাকচালক মো. মিজান, কুমিল্লার লাকসামের মনোহরপুর এলাকার আমির হোসেনের ছেলে আবুল খায়ের, তার ছেলে আশিক, চৌদ্দগ্রাম উপজেলার চিওড়া ইউনিয়নের শাকতলা গ্রামের তিন বন্ধু ইয়াসিনের ছেলে সাজ্জাদ, রুহুল আমিনের ছেলে রিফাত এবং আমেরুন্নেসার ছেলে দ্বীন মোহাম্মদ।


তাদের মধ্যে নিহত তিন বন্ধু কুমিল্লার হাসানপুর স্টেশন থেকে ট্রেনটিতে উঠেছিলেন।


নিহতদের এক বন্ধু কেফায়েত উল্যাহ বলেন, ঈদের কেনাকাটা করতে চট্টগ্রাম যাওয়ার জন্য সেহেরি খাওয়ার পর আমরা সবাই হাসানপুর ষ্টেশনে একত্রিত হই। সকাল সাড়ে সাতটায় ট্রেনে উঠে আমরা ১১ জন চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হই। ফেনী ষ্টেশনে যাওয়ার পর আমরা ট্রেনের সীটে বসি। ষ্টেশন ছাড়ার পর দীন মোহাম্মদ, রিফাত ও সাজ্জাদ ট্রেনের ইঞ্জিনের সামনে গিয়ে বসে। ফেনীর ফাজিলপুর এলাকায় একটি বালুর ট্রাকের সাথে ট্রেনের ধাক্কা লাগে এতে আমাদের তিন বন্ধুসহ কয়েকজন নিহত হয়। পরে ট্রেনটি একটু সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকলে আমরা নেমে পড়ি এবং স্থানীয়দের সহযোগিতায় একটি মাইক্রোবাসে করে তিন বন্ধুর লাশ বাড়িতে নিয়ে আসি।


শাকতলা গ্রামের বাসিন্দা আবদুল মালেক বলেন, ট্রেনে ওঠার সময় হাসানপুর স্টেশনে ১১ বন্ধু ছবি তোলেন। সেই ছবি ফেসবুকে পোস্ট করেন। সেই ছবি এখন কেবলই স্মৃতি। ফেনীর ফাজিলপুর রেলক্রসিংয়ে ট্রেনটি একটি বালু বোঝাই ট্রাককে ধাক্কা দিলে সব লণ্ডভণ্ড হয়ে যায়। 


চিওড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবু তাহের জানান, সকালের দিকে গ্রামের ১১ জন বন্ধু মিলে ঈদের শপিং করতে চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছিলো। তাদের মধ্যে নিহত তিনজন ট্রেনের সামনে বসেছিলেন। একপর্যায়ে মুহুরীগঞ্জ এলাকায় পৌঁছালে ট্রেনটি একটি ট্রাকের সঙ্গে ধাক্কা লাগে। এতে ঘটনাস্থলেই মারা যান  তারা । পরে ওইদিন বিকেলে শাকতলা আজিজিয়া মাদ্রাসার মাঠে জানাজা শেষে পাশাপাশি কবরে তাদের দাফন সম্পন্ন হয়েছে তিন বন্ধুর।


দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধান ও কারও গাফিলতি ছিলো কি না, জানতে চট্টগ্রামের পূর্বাঞ্চলীয় পরিবহন কর্মকর্তাকে আহ্বায়ক করে ৫ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। এ ছাড়া গতকাল রাতেই এ ঘটনায় ওই রেলগেটের দুই গেটম্যানকে আসামি করে লাকসাম জিআরপি থানায় একটি মামলা হয়েছে।


ফেনীর পুলিশ সুপার জাকির হাসান বলেন, ঘটনার সময় দায়িত্বরত গেটম্যান অনুপস্থিত ছিলেন বলে রেল পুলিশ থেকে জানতে পেরেছেন। এ বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App