পেসারদের নিয়ে যা বললেন তামিম
প্রকাশ: ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
কাগজ প্রতিবেদক : পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে নজরকাড়া বোলিং করেছেন টাইগার পেসাররা। প্রথবারের মতো ইনিংসের সবগুলো উইকেট টাইগার পেসারদের ঝুলিতে যাওয়ার রেকর্ড হয়েছে। হাসান মাহমুদ পাঁচ, নাহিদ রানা চার ও তাসকিন অবশিষ্ট একটি উইকেট পান। টাইগার পেসারদের দুর্দান্ত বোলিংয়ের ছাপ পড়েছে তাদের বোলিং র্যাঙ্কিংয়েও। সম্প্রতি টাইগারদের পেস বিভাগের দারুণ ফর্ম নিয়ে নিয়ে আশাবাদী তামিম ইকবাল। এই উন্নতির কৃতীত্ব খেলোয়াড়দের পাশাপাশি কোচদেরও দিতে চান এই সাবেক অধিনায়ক।
পাকিস্তানের বিপক্ষে টাইগারদের ঐতিহাসিক জয়ের পর গতকাল বাঁ-হাতি ওপেনার তামিম ইকবালও প্রশংসায় ভাসিয়েছেন পেসারদের। দেশের বাইরে সিরিজ হলেও আমাদের পেসার নিয়ে প্রতিপক্ষের ভাবার সময় এসেছে বলেও জানান দেশসেরা ওপেনার। তিনি বলেন, ‘রাওয়ালপিন্ডিতে পুরো সিরিজে পেসাররা ছিলেন অবিশ্বাস্য। নিজেদের সেরাটা দিয়ে খেলেছে তারা। হাসান মাহমুদ এবং নাহিদ রানা দুর্দান্ত বল করেছেন। তাসকিন আহমেদ বেশি উইকেট না পেলেও বল হাতে পুরো সিরিজেই সাবলিল ছিলেন। হাসান বাড়তি কিছু করার চেষ্টা করেনি। তার সামর্থ্য অনুযায়ী বল করে গেছে এবং সে সফলও হয়েছে। আমাদের পেসারদের নিয়ে সবার ভাবনার সময় এসেছে এখন। এতদিন দেশের বাইরে খেললে প্রতিপক্ষ সেভাবে আমলে নিত না। এখন থেকে তাদের পরিকল্পনায় বাংলাদেশের পেসারদের রাখতে হবে।’
শেষ কয়েক বছরে বাংলাদেশের পেসাররা নতুন দিনের স্বপ্ন দেখেছেন। শুরু থেকেই স্পিনপ্রধান বাংলাদেশের উইকেটে পেসাররা তেমন আলোড়ন সৃষ্টি করতে পারেননি। তবে এখন ধারাবাহিকভাবে দেশে ও বিদেশের মাটিতে টেস্ট জিতিয়ে যাচ্ছেন। তাদের গড়ে তোলার পেছনে বড় কৃতিত্ব বাংলাদেশের সাবেক দুই পেস বোলিং কোচ ওটিস গিবসন এবং অ্যালান ডোনাল্ডের। তাদের রেখে যাওয়া কার্যক্রম, দেখানো পথে হেঁটে তাসকিন, শরিফুল, ইবাদত, খালেদরা আন্তর্জাতিক মঞ্চে নিজেদের মেলে ধরেছেন। তাদের দেখাদেখি উঠে এসেছেন নাহিদ রানার মতো তরুণ ও প্রতিভাবান পেসাররা। যিনি গতির ঝড় তুলে নাস্তানাবুদ করে দিচ্ছেন প্রতিপক্ষে ব্যাটিং লাইনআপকে। পাকিস্তানের বিপক্ষে নিয়মিত ১৪৮ গতিতে বল করেছেন নাহিদ। হাসানও ক্যারিয়ারের মাত্র তৃতীয় টেস্ট খেলতে নেমেই ৪৩ রান খরচে প্রথমবারের মতো পেয়েছেন ইনিংসে ৫ উইকেটের দেখা, যা বিদেশের মাটিতে টেস্টে বাংলাদেশের কোনো পেসারের তৃতীয় সেরা বোলিং। তবে একটা জায়গায় পেসারের মধ্যে হাসানই এখন সবার ওপরে। যে কোনো সংস্করণ মিলিয়ে এটিই পাকিস্তানের বিপক্ষে হাসানই ৫ উইকেট নেয়া প্রথম পেসার। তাই সাবেক দুই বোলিং কোচের অবদানকে সামনে এনে জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক তামিম ইকবাল বলেন, ‘রাওয়ালপিন্ডির উইকেটে পাকিস্তান পেসাররা যতটুকু সুবিধা আদায় করতে পেরেছে, তার চেয়ে বাংলাদেশের পেসাররা বেশি সুবিধা পেয়েছে। এটা নিয়ে পেসারদের গর্ব করা উচিত। এই পেস বোলিং ইউনিটকে এত দূরে নিয়ে আসতে অ্যালান ডোনাল্ড ও ওটিস গিবসন কঠোর পরিশ্রম করেছেন।’ সিরিজে শরিফুল, হাসান, নাহিদ ও তাসকিন মিলে ১৪ উইকেট পেয়েছেন, যা দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজে বাংলাদেশের পেসারদের সর্বোচ্চ সাফল্য। সাবেক এই বাঁ-হাতি ওপেনার আরো বলেন, ‘শরিফুল চোটে না পড়লে হয়তো আমরা দ্বিতীয় টেস্টে নাহিদ রানাকে দেখতে পেতাম না। ওর নির্ভেজাল গতি পাকিস্তানের সেরা ব্যাটসম্যানদের বিপদে ফেলেছে। অন্যদিকে হাসান নিজের সীমাবদ্ধতা জানত। ও অন্য কিছু চেষ্টা করেনি, লাইন টু লাইন বোলিং করেছে, তাতে ফলও পেয়েছে।’ তাসকিন উইকেটের দেখা না পেলেও তাকেও কৃতিত্ব দিতে ভোলেননি তামিম।
বাংলাদেশ ক্রিকেটে নাহিদ রানার মতো গতিদানব পেসারের অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিতভাবেই বড় এক অর্জন। নাহিদ রানার উত্থানটা চোখে না দেখলেও এই পেসারকে শুরুর দিনগুলোতে দেখেছিলেন দেশের সাবেক পেস বোলিং কোচ অ্যালান ডোনাল্ড। তিনি জানান, নাহিদ রানার টেকনিক্যাল দিকে কিছুটা উন্নতির দরকার, ‘আমি আসলে ইউটিউবে নাহিদ রানার বোলিং দেখছিলাম। কিছু বল ছিল ১৪৫ কিংবা ১৪৮ গতির। কিছু ১৫০ ছাড়িয়ে গিয়েছে। এটা আসলেই দারুণ বিষয়। তবে টেকনিক্যাল দিক থেকে বলতে হয়, আরো কিছু জায়গায় উন্নতি হতে পারে। খুব সামান্য পরিবর্তন আনলে, বড় কিছু না, একেবারেই ছোট পরিবর্তন আনলে তার হাতে দারুণ সাফল্য আসবে। বাতাসে কিছুটা বল ভাসানো, বল ধরে রাখা। কিন্তু সবমিলিয়ে দারুণ বোলিংটা করেছে তরুণ ছেলেটা।’ পাশাপাশি বাংলাদেশের এই পেস বোলিং গ্রুপকে আরো বড় আকারে দেখতে চান এই কিংবদন্তি পেসার। তিনি আরো বলেন, ‘বেশ কয়েক বছর ধরেই অসাধারণ সব তরুণ পেসার বাংলাদেশ দলে এসেছে। তবে আরো কিছু পেসারকে দলে যুক্ত করতে হবে। একটা পেস বোলিং গ্রুপকে আরো বড় হতে দেখা কিংবা আরো বড় সাফল্য অর্জন করতে দেখার বিষয়টা সত্যিই অসাধারণ হবে।’