লিটন-মিরাজের বিশ্বরেকর্ড
প্রকাশ: ০২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
কাগজ প্রতিবেদক : রাওয়ালপিন্ডিতে পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টের তৃতীয় দিনে স্বাগতিকদের দেয়া ২৭৫ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে ২৬ রান তুলতেই ৬ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে টাইগাররা। ব্যাটিং বিপর্যয় কাটিয়ে সেখান থেকে লিটন দাস ও মিরাজ দারুণ সব শটের পসরা সাজিয়েই গড়েন ১৬৫ রানের রেকর্ড জুটি। ১৪৭ বছরের টেস্ট ইতিহাসে ৫০ রানের কমে ষষ্ঠ উইকেট পতনের পর সপ্তম উইকেটে সবচেয়ে বড় জুটির ইতিহাস গড়েন তারা। ব্যক্তিগত ৭৮ রান করে মিরাজ সাজঘরে ফিরে গেলেও দীর্ঘ ২৭ মাস পর সেঞ্চুরির দেখা পান টাইগার উইকেটরক্ষক লিটন দাস। তার ব্যাট থেকে আসে ১৩৮ রান। এরই সুবাদে ২৬২ রানের পুঁজি সংগ্রহ করে লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা।
বিনা উইকেটে ১০ রানে দিন শুরু করা টাইগাররা ১১ ওভারের মধ্যেই টপ অর্ডারের প্রথম ছয় উইকেট হারিয়ে বিপদে পড়েন। সপ্তম উইকেটে লিটন-মিরাজের ১৬৫ রানের জুটি দলকে শুধু খাদের কিনারা থেকে টেনে তোলেনি, দলকে এনে দিয়েছেন পাকিস্তানের দলীয় সংগ্রহের অনেক কাছাকাছি। মাত্র ১২ রানের লিড নিয়ে ব্যাট করতে নামা পাকিস্তান তৃতীয় দিন শেষে সংগ্রহ করেছে ২ উইকেটে ৯ রান। এর আগে ৫০ রানের কমে ৬ উইকেট হারানোর সপ্তম উইকেটে সর্বোচ্চ জুটিটা ছিল ১১৫ রানের। সেই রেকর্ডটিও হয়েছিল পাকিস্তানের মাটিতে।
২০০৬ সালে করাচিতে ভারতের বিপক্ষে প্রথম ইনিংসে ৩৯ রানে প্রথম ৬ উইকেট হারায় পাকিস্তান। এরপর সপ্তম উইকেটে ১১৫ রানের জুটি গড়েন স্পিনার আবদুল রাজ্জাক ও উইকেটরক্ষক কামরান আকমল। রাজ্জাক ৪৫ রান করে বিদায় নিলে ভাঙে সেই জুটি। উইকেটকিপার ব্যাটসম্যান কামরান ফিরেছিলেন শোয়েব আখতারকে নিয়ে অষ্টম উইকেটে ৮২ রানের জুটি গড়ার পর ১১৩ রান করে। ৫০ রানের কমে ৬ উইকেট খোয়ানোর পর সপ্তম উইকেটে আর একবারই ১০০ রানের জুটি দেখেছে। ২০২১ সালে গলে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে যেটি গড়েছিলেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের এনক্রুমা বোনার ও জশুয়া ডি সিলভা। ক্যারিবীয়রা ১৮ রানে প্রথম ৬ উইকেট হারানোর পর ঠিক ১০০ রানই যোগ করেন দুজন। এছাড়া রঙ্গিন পোশাকেও ওয়ানডেতে ৫০ রানের কমে প্রথম ৬ উইকেট হারানোর সপ্তম উইকেটে সর্বোচ্চ জুটিতে আছে মিরাজের নাম। ২০২২ সালে চট্টগ্রামে আফগানিস্তানের বিপক্ষে বাংলাদেশ ৪৫ রানে ৬ উইকেট হারানোর পর আফিফ হোসেনকে নিয়ে ১৭৪ রানের জুটি গড়েন মিরাজ। এর আগে মিরাজের ঘূর্ণিতে বাংলাদেশের বিপক্ষে প্রথম ইনিংসে ২৭৪ রানে অলআউট হয়েছে স্বাগতিক পাকিস্তান। ৬১ রানে ৫ উইকেট নিয়েছেন মিরাজ। এ নিয়ে টানা দুই ম্যাচে পাঁচ উইকেটের দেখা পেয়েছেন এই ডানহাতি অফস্পিনার। ৪৫ ম্যাচের টেস্ট ক্যারিয়ারে দশম এবং পাকিস্তানের বিপক্ষে ইনিংসে প্রথমবারের মতো পাঁচ উইকেট নিলেন মিরাজ।
এদিকে দীর্ঘ ২৭ মাস পর সেঞ্চুরির দেখা পেয়েছেন লিটন। ২০২২ সালের মে মাসে সর্বশেষ লঙ্কানদের বিপক্ষে শতক হাঁকিয়েছিলেন। ১১ চার ও ১ ছক্কায় ১৭১ বলে রাওয়ালপিন্ডিতে সেঞ্চুরি স্পর্শ করেন লিটন। ৪৩ ম্যাচের ক্যারিয়ারে এটি তার চতুর্থ সেঞ্চুরি, পাকিস্তানের বিপক্ষে দ্বিতীয়। পাকিস্তানের বিপক্ষে আগের সেঞ্চুরিটি ২০২১ সালে চট্টগ্রামে, সেবার করেছিলেন ১১৪ রান। বাংলাদেশের প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে পাকিস্তানের বিপক্ষে একাধিক টেস্ট সেঞ্চুরি করার কৃতিত্ব শুধুই লিটনের। দলের প্রয়োজনে যে কোনো সময় জ¦লে উঠতে পারেন লিটন, সেটি আবারো প্রমাণ করেছেন তিনি। টেস্টে লিটনের চার সেঞ্চুরির তিনটিই এসেছে দলের বিপর্যয়ে উজ্জ্বল উদ্ধার হয়ে। রেকর্ডও হয়ে গেছে একটা। দলীয় রান পঞ্চাশের কম থাকা অবস্থায় ব্যাটিং অর্ডারে পাঁচের নিচে নেমে তিনটি সেঞ্চুরি করা বিশ্বের প্রথম ব্যাটসম্যান লিটন। ২০২১ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে চট্টগ্রাম টেস্টের ওই ১১৪ রানের ইনিংসটি খেলেছিলেন ৪৯ রানে চতুর্থ উইকেট পড়ে যাওয়ার পর নেমে। লিটনের ক্যারিয়ার সর্বোচ্চ ১৪১ রানের ইনিংসটি ২০২২ সালে, শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে মিরপুরে সেবারও নেমেছিলেন ২৪ রানে পঞ্চম উইকেট পড়ে যাওয়ার পর। এদিকে লিটনের ব্যাটে সেঞ্চুরির হাসি ফুটতেই নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে একটি পোস্ট করেন তার স্ত্রী দেবশ্রী বিশ্বাস সঞ্চিতা। সেখানে মেয়ের সঙ্গে লিটনের একটি ছবি শেয়ার করে লিখেছেন, অভিনন্দন আনায়রার বাবা। আমরা তোমাকে ভালোবাসি।
এদিকে ১২ রানের এগিয়ে থেকে ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই ধাক্কা খায় স্বাগতিক পাকিস্তান। হাসান মাহমুদের বলে উইকেটের পেছনে লিটনকে ক্যাচ দিয়ে সাজঘরে ফেরেন আবদুল্লাহ শফিক। তার ব্যাট থেকে আসে ৩ রান। দিনশেষে পাকিস্তানের সংগ্রহ দাঁড়ায় ২ উইকেট হারিয়ে ৯ রান, লিড ২১ রানের।