কাগজ প্রতিবেদক : অস্ট্রেলিয়ায় লম্বা সফরের উদ্দেশে গতকাল দেশ ছেড়েছে বাংলাদেশের এইচপি (হাইপারফরম্যান্স) দল। সফরে চার দিনের ম্যাচের সঙ্গে রয়েছে টি-টোয়েন্টি এবং ওয়ানডে সিরিজও। যেখানে চার দিনের ম্যাচের জন্য বাংলাদেশ দলকে নেতৃত্ব দেবেন মাহমুদুল হাসান জয়। আইসিসির এফটিপি অনুযায়ী ২০২৭ সালে অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে টেস্ট খেলবে বাংলাদেশ। এবার হাইপারফরম্যান্স দলের হয়ে অস্ট্রেলিয়া সফরে যাওয়ার আগে ওই সিরিজের প্রস্তুতির কথা বলেছেন জয়। চার দিনের ম্যাচগুলোর অধিনায়ক তিনি, টেস্ট দলের নিয়মিত সদস্যও। প্রথমবার অস্ট্রেলিয়া সফরে যেতে পারার রোমাঞ্চ আছে তার। বিসিবির পাঠানো ভিডিওতে তিনি বলেন, ‘অবশ্যই এটা আমাদের জন্য খুব বড় সুযোগ আমরা অস্ট্রেলিয়ায় যাচ্ছি। কারণ আমি বলব, আমরা এখানে যে গ্রুপটায় আছি কারোরই অস্ট্রেলিয়া সফর করা হয়নি। এটা প্রথম সফর। এটা আমাদের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ সফর। ২০২৭ সালে একটা টেস্ট সিরিজ আছে, সেটার জন্যও ভালো একটা প্রস্তুতি হবে।’

বাংলাদেশের অস্ট্রেলিয়া সফর শুরু হবে পাকিস্তান শাহীনসের বিপক্ষে চার দিনের ম্যাচ দিয়ে। এরপর ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি খেলবে তারা। চার দিনের ম্যাচগুলোতে জয়ের লক্ষ্যের কথা জানিয়েছেন অধিনায়ক। দলের কম্বিনেশন ভালো বলেও জানান তিনি। মাহমুদুল বলেন, ‘ব্যক্তিগত লক্ষ্য অধিনায়ক হিসেবে দলে যে কম্বিনেশন আছে সিরিজ জেতার লক্ষ্য থাকবে। আমরা ছোট থেকে একসঙ্গে আছি। আমাদের অনূর্ধ্ব-১৯ এর কয়েকজন আছে। জাতীয় দলের কয়েকজন আছে। ওই হিসাব করলে আমাদের কম্বিনেশনটা খুব ভালো হবে। আমরা খুব উপভোগ করে ক্রিকেট খেলতে পারব।’

সাধারণত উঠতি ক্রিকেটারদের নিয়েই এইচপি দল গঠন করা হয়। তারপরও এই দলে আছেন টেস্ট দলের বেশ কয়েকজন ক্রিকেটারের পাশাপাশি অভিজ্ঞ বেশ কয়েকজনও। এই তালিকায় আছেন- সাদমান ইসলাম, মাহমুদুল হাসান জয়, আফিফ হোসেন, আবু হায়দার রনি। ৩৫ দিনের এই লম্বা সফরে দলের সঙ্গে থাকবেন নির্বাচক হান্নান সরকার। দেশ ছাড়ার আগে গতকাল গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি।

অস্ট্রেলিয়া সফরের দল নির্বাচন প্রসঙ্গে হান্নান বলেছেন, ‘এভাবে বললে আসলে অনেক কিছুই চিন্তা করা যেত। আমরা যখন তিন সিলেক্টর সিলেকশনে বসেছিলাম এটা নিয়ে বিস্তারিত আলাপ করি, তারপর সিলেকশনটা আপনারা দেখতে পাচ্ছেন। আপনারা দেখছেন কতদিন গ্যাপে সাদমান খেলছে। পাশাপাশি কন্ডিশনের সুযোগটা আমরা নেয়ার চেষ্টা করেছি। আফিফও নিকট অতীতে আন্তর্জাতিক ম্যাচ থেকে দূরে রয়েছে। বিশ্বকাপের দলের সঙ্গে গিয়েছিল কিন্তু ম্যাচ খেলার সুযোগ পায়নি।’

২০০৮ সালের সর্বশেষ অস্ট্রেলিয়ায় সিরিজ খেলতে গিয়েছিল বাংলাদেশ। এরপর বাংলাদেশের কোনো পর্যায়ের কেউ সেখানে আর সফর করেনি। হান্নানের কাছে এই সফরটি তাই বিশেষ কিছু, ‘এটা তো আমরা সবাই বিশ্বাস করি যে অস্ট্রেলিয়া নামটা শুনলেই মনে হয় চ্যাম্পিয়ন। সে জায়গা থেকে এই ধরনের দলের সঙ্গে খেলার পাশাপাশি ওই কন্ডিশনে খেলা এটা ভালো একটা অভিজ্ঞতা, যেটা আমাদের খেলোয়াড়রা নিতে যাচ্ছে একটা লম্বা সময় অপেক্ষার পর। ২০০৮ এ বাংলাদেশ দল শেষবার গিয়েছিল। আমি আশা করছি, এবারের অভিজ্ঞতা তাদের ভবিষ্যতের জন্য কাজে লাগবে।’

অস্ট্রেলিয়া সফরে বাংলাদেশের এইচপি দল অনেকগুলো ম্যাচ খেলবে। ডারউইনে পাকিস্তান শাহীনসের বিপক্ষে চার দিনের দুটি ম্যাচ খেলবে। এরপর শুরু হবে পাকিস্তান শাহীনস, নর্দার্ন টেরিটোরি ও বাংলাদেশ এইচপির মধ্যে ওয়ানডে সিরিজ। ওয়ানডে সিরিজ শেষে ৯টি দল নিয়ে ৯ থেকে ১৮ আগস্ট পর্যন্ত চলবে টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্ট। সেমিফাইনাল, ফাইনালের আগ পর্যন্ত ২০ ওভারের ৬টি ম্যাচ খেলবে এইচপি। টুর্নামেন্টের ৯টি দল হলো- পাকিস্তান শাহীনস, বাংলাদেশ এইচপি, নর্দার্ন টেরিটোরি, পার্থ স্করচার্স, মেলবোর্ন রেনেগার্ডস, মেলবোর্ন স্টার্স, তাসমানিয়া, অ্যাডিলেড স্ট্রাইকার্স ও এসিটি কোমেটস।

দেশ ছাড়ার আগে গতকাল সকালে মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেছেন ২০২২ সালের যুব বিশ্বকাপে বাংলাদেশের হয়ে খেলা রিপন মন্ডল। সেবার ভালো পারফর্ম করায় এরপর থেকেই রয়েছেন বিসিবির রাডারে। সবশেষ ঘোষিত বিসিবির এইচপি দলেও জায়গা হয়েছে এ তরুণ অলরাউন্ডারের। রিপন জানিয়েছেন, ‘আলহামদুলিল্লাহ, এটা আমার জন্য প্রথম ট্যুর। আমরা গিয়ে দেখি কন্ডিশনটা কী? উইকেটে যদি হেল্প থাকে কন্ডিশন অনুযায়ী যতটুকু ভালো করা যায়, আমরা চেষ্টা করব ইনশাল্লাহ ভালো করার। চেষ্টা করব উইকেট বুঝে বল করার। রিপন জানিয়েছেন নিজের লক্ষ্যের কথা। ভালো পারফর্ম করে আসতে চান সবার নজরে। এই অলরাউন্ডার বলছিলেন, ‘লক্ষ্য তো থাকবে টুর্নামেন্টসেরা হওয়ার। আমার মেইন ফোকাস হচ্ছে ম্যাচ বাই ম্যাচ খেলা। ভালো পারফরম্যান্স করলে অপর্চুনিটি আসবেই। আমি চেষ্টা করব যে বিগ ব্যাশ না ভেবে যে আমাদের টিম হিসেবে যাচ্ছি।

আমি চাই আমাদের দল যেন সর্বোচ্চ ভালো খেলে। যদি ভালো করতে পারি তাহলে সবার নজরে আসব।’

চার দিনের ম্যাচের দল : সাদমান ইসলাম, মাহমুদুল হাসান জয়, পারভেজ হোসেন ইমন, অমিত হাসান, শাহাদাত হোসেন দিপু, আরিফুল ইসলাম, মাহিদুল ইসলাম অঙ্কন, আইচ মোল্লা, রাকিবুল হাসান, শেখ পারভেজ জীবন, হাসান মুরাদ, রেজাউর রহমান রাজা, মুকিদুল ইসলাম মুগ্ধ, রিপন মন্ডল ও মারুফ মৃধা।

ওয়ানডে দল : তানজিদ হাসান তামিম, জিসান আলম, পারভেজ হোসেন ইমন, আফিফ হোসেন, শামীম হোসেন পাটোয়ারী, আরিফুল ইসলাম, আকবর আলী, ওয়াইসি সিদ্দিকি, রাকিবুল হাসান, শেখ পারভেজ জীবন, মাহফিজুর রহমান রাব্বি, আবু হায়দার রনি, মুকিদুল ইসলাম মুগ্ধ, রিপন মন্ডল ও মারুফ মৃধা।

টি-টোয়েন্টি দল : তানজিদ হাসান তামিম, জিসান আলম, পারভেজ হোসেন ইমন, আফিফ হোসেন, শামীম হোসেন পাটোয়ারী, আরিফুল ইসলাম, আকবর আলী, ওয়াইসি সিদ্দিকি, রাকিবুল হাসান, আলিস আল ইসলাম, মাহফিজুর রহমান রাব্বি, আবু হায়দার রনি, মুকিদুল ইসলাম মুগ্ধ, রিপন মন্ডল ও মারুফ মৃধা।