আকাশি-সাদা জার্সি পরে ফাইনাল খেলবে মেসিরা
প্রকাশ: ১৪ জুলাই ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
কাগজ ডেস্ক : দীর্ঘ একমাসের উন্মাদনা শেষে অবশেষে পর্দা নামতে যাচ্ছে কোপা আমেরিকার ২০২৪ সালের আসরের। ১৬ দলের লড়াই শেষে আগামীকাল সোমবার বাংলাদেশ সময় ভোর ৬টায় ফাইনালে মুখোমুখি হবে আর্জেন্টিনা-কলম্বিয়া।
১৯৯০ সালের বিশ্বকাপের ফাইনাল হেরে ম্যারাডোনার সেই কান্না এখনো চোখে ভাসে ফুটবল অনুরাগীদের। ২০১৪ বিশ্বকাপের ফাইনালেও মেসি-ডি মারিয়াদের হতাশাময় চেহারা এখনো পীড়া দেয় ভক্তদের। এই দুই ফাইনালে আর্জেন্টিনা এওয়ে জার্সি অর্থাৎ নীল জার্সি পরে খেলেছিল।
আর্জেন্টাইনদের কাছে ফাইনালের জন্য এই এওয়ে জার্সি অনেকটা অপয়া জার্সির মতোই। ২০২১ কোপা আমেরিকার ফাইনাল এবং ২০২২ বিশ্বকাপের ফাইনালে সেই অপয়া জার্সি থেকে সরে এসে চিরাচরিত হোম জার্সি আকাশি-সাদা জার্সি পরে খেলে সাফল্য পেয়েছিল।
আরো একবার ফাইনালের সামনে আর্জেন্টিনা। ভক্তদের মনে প্রশ্ন আর্জেন্টিনা কোন জার্সি পরে খেলবে। তবে আর্জেন্টাইনদের জন্য সুসংবাদ। ২০২১ ও ২০২২ ফাইনালের মতোই এই ফাইনালেও আকাশি-সাদা জার্সি ও সাদা রঙের শর্টস পরে খেলবে দলটি। দলটির পক্ষ থেকে এমনটাই জানানো হয়েছে।
আর্জেন্টিনা-কলম্বিয়ার ফাইনাল ম্যাচের ‘হাফটাইম শো’তে থাকছেন কলম্বিয়ার পপ তারকা শাকিরা।
ইতোমধ্যে তিনটি ফুটবল বিশ্বকাপ ও যুক্তরাষ্ট্রের জনপ্রিয় প্রতিযোগিতা ‘সুপার বোল’ এ তিনি পারফর্ম করেছেন। এবার শাকিরার আবেগ কিছুটা বেশিই থাকবে। কারণ ফাইনালে অন্যতম প্রতিযোগী তার দেশ কলম্বিয়া। প্রথমবারের মতো কোপার কোনো আসরে এমন কোনো সাংস্কৃতিক আয়োজন থাকছে। তবে শাকিরার সংগীতায়োজনে সুখস্মৃতি নেই আর্জেন্টিনার। ব্রাজিলে অনুষ্ঠিত ২০১৪ বিশ্বকাপের ফাইনালে সংগীত পরিবেশন করেছিলেন শাকিরা, সেই ম্যাচে আলেজান্দ্রো সাবেলার আর্জেন্টিনা ১-০ গোলে হেরে হৃদয় ভাঙে জার্মানদের কাছে।
বিশ্বফুটবলের জমজমাট আসরটিতে চ্যাম্পিয়নও হয়েছিল জার্মানি। তার আগে ‘ইন্ডিং শো’তে শাকিরার সঙ্গে মঞ্চ মাতিয়েছিলেন কার্লিনহোস ব্রাউন, আলেক্সান্দ্রে পিরেস ও কার্লোস সান্তানার মতো ব্রাজিল ও আমেরিকান প্রখ্যাত গায়করা। মারাকানা স্টেডিয়ামের সেই অনুষ্ঠান রোমাঞ্চ ছড়িয়েছিল লাখো সমর্থকের মাঝে। সঙ্গে ছিল স্থানীয়দের ঐতিহ্যবাহী নাচ। এবার মায়ামির হার্ডরক স্টেডিয়ামে আরেকটি মঞ্চ প্রস্তুত শাকিরার জন্য। এবারের আসরটা মেসি ও রদ্রিগেজ দুজনের জন্যেই বিশেষ। মেসির কোপার শেষ আসর এবং রদ্রিগেজের জন্য নিজেকে ফিরে পাওয়ার মঞ্চ। দুজন দুই মেরুরু। ফাইনাল মহারণের আগে দুজনের অতীতের গল্পটা ঘুরে আসা যাক।
মহাদেশীয় শ্রেষ্ঠত্বের এবারের আসরটা আর্জেন্টিনার জন্য বিশেষ কিছু। এবার তারা চ্যাম্পিয়ন হলেই ১৬তম শিরোপার উৎসবে মেতে উঠবে, যা তাদের এককভাবে শীর্ষে তুলে দিবে, উরুগুয়ে নেমে যাবে দুইয়ে। এই কোপার মঞ্চ দিয়েই ক্যারিয়ারের প্রথম শিরোপার আক্ষেপ ঘুচিয়েছেন মেসি। এরপর বিশ্বকাপ জয়ের পর এখন আবার সেই একই মঞ্চে দ্বিতীয় শিরোপার সামনে।
দেশকে বিশ্বকাপ জেতানোর মঞ্চে মেসি ফর্মের চূড়ায় ছিলেন। তবে সময়ের সঙ্গে তাকে ঘিরে ধরেছে ইনজুরি আর অফফর্ম। তবে এখনই খেলা ছাড়ার চিন্তা নেই আর্জেন্টিনা অধিনায়কের বরং দুই সতীর্থ নিকোলাস ওতামেন্ডি এবং অ্যাঞ্জেল ডি মারিয়ার বিদায়ের মঞ্চটাই রাঙাতে চান আরেকবার।
সেই লক্ষ্যে শুরু থেকে মাঠে নামলেও মেসি নিজেকে খুঁজে পাননি। অবশেষে সেমিফাইনালে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে কানাডার বিপক্ষে গোল করে অবদান রাখেন আটবারের বর্ষসেরা তারকা। দুই সতীর্থকে বিদায়ের মঞ্চটাই তার শেষ কোপা জানিয়ে ম্যাচের পর মেসি বলেন, ‘আমি খেলাটি খুব উপভোগ করছি। তবে এটা আমার শেষ আসর। যেমন ফিদেও (ডি মারিয়া) এবং ওতার (ওতামেন্ডি) এটি শেষ লড়াই।’
এমন একটি মহামঞ্চে দাঁড়িয়ে আছেন মেসি, যেখানেই ২০১৬ সালে চিলির বিপক্ষে হেরে যাওয়ার পর ফুটবল থেকে অবসরের ঘোষণা দিয়েছিলেন। এটা যদি সত্যিই মেসির শেষ কোপা হয়, তাহলে সবাই চাইবেন মেসি যেন নিজের স্টাইলেই শিরোপাটা উঁচিয়ে ধরেন।
কলম্বিয়ার অধিনায়ক রদ্রিগেজের গল্পটা অন্যরকম। তিনি প্রথম পাদপ্রদীপের আলোয় আসেন ২০১৪ সালে। ১০ বছর আগে ব্রাজিল বিশ্বকাপে ঝলক দেখিয়ে আসরে সর্বোচ্চ গোলের মালিক বনে গেছিলেন রদ্রিগেজ। তবে উরুগুয়ের সঙ্গে হেরে শেষ ষোলোতে বিদায় নিতে হয় তার দলকে।
বিশ্বকাপে দুর্দান্ত পারফর্ম্যান্স করে স্পেনের সেরা ক্লাব রিয়াল মাদ্রিদে ডাক পান রদ্রিগেজ। রিয়াল তাদের ইতিহাসের চতুর্থ সর্বোচ্চ দামি খেলোয়াড় হিসেবে সাইন করিয়েছিল কলম্বিয়ার অধিনায়ককে। তবে নামের প্রতি সুবিচার করতে পারেননি রদ্রিগেজ। বাধ্য হয়ে তাকে ছেড়ে দেয় রিয়াল।
এরপর বায়ার্ন মিউনিখ এবং অলিম্পিয়াকোস ঘুরে নাম লিখিয়েছেন ব্রাজিলিওয়ান ক্লাব সাও পাওলোতে। ফর্ম পড়তির কারণে আগের কোপায় সুযোগ না পাওয়া রদ্রিগেজ এবার একাই দলকে টেনে তুলেছেন ফাইনালে। গোল করেছেন দুটি, সহায়তা করেছেন ৬টিতে।
আর্জেন্টিনার বিপক্ষে ফাইনালের পর দিন নাগরিক দিবস হিসেবে ঘোষণা করেছেন কলম্বিয়া প্রেসিডেন্ট গুস্তাভো পেত্রো। শিরোপা জিতে বিভাজন ভুলে সেদিন সবাই একসঙ্গে উল্লাসে মাতবেন সবাই সেই প্রত্যাশা তার। আর শিরোপা ধরে রাখার মিশনে ঐতিহ্যবাহী আকাশি-সাদা জার্সিতে খেলবে আর্জেন্টিনা। অপরিবর্তিত থাকতে পারে আলবিসেলেস্তে একাদশ।
২০০১ সালে সবশেষ কোপা আমেরিকার ফাইনাল খেলেছিলো কলম্বিয়া। মহাদেশীয় শ্রেষ্ঠত্বের মঞ্চে সেবারই শেষ শিরোপা জিতেছিলো দেশটি। ২৩ বছর পর আবারো চ্যাম্পিয়নের হাতছানি কলম্বিয়ার। বিশ্বসেরা আর্জেন্টিনাকে হারিয়ে উৎসবে মাতার অপেক্ষায় গোটা দেশ। আর সেজন্য সোমবারকে নাগরিক দিবস হিসেবে ঘোষণা করেছেন প্রেসিডেন্ট গুস্তাভো পেত্রো। সেদিন চাইলে ছুটি কাটাতে পারবেন সরকারি চাকরিজীবীরা। তবে সে সুযোগ থাকছে না বেসরকারি চাকরিজীবীদের জন্য।