বড় জয়ে অ্যান্ডারসনের বিদায় রাঙাল ইংল্যান্ড
প্রকাশ: ১৩ জুলাই ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
কাগজ ডেস্ক : উদযাপনের তালে আগের দিন জেমস অ্যান্ডারসনকে গার্ড অব অনার দিতে ভুলে গিয়েছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। অবশ্য সেদিনই বোঝা গিয়েছিল এই টেস্ট তিন দিনের বেশি গড়াবে না। তাই গতকাল দিনের শুরুতেই টেস্ট ইতিহাসের সবচেয়ে সফল পেসারকে গার্ড অব অনার দিল দুদল।
বিদায়ী মঞ্চে আবেগ ছুঁয়ে গেলেও কোনোরকমের হতাশা কাজ করেনি অ্যান্ডারসনের মনে। কেননা ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ইনিংস ও ১১৪ রানে হারিয়ে তাকে জয় উপহার দিয়েছে ইংল্যান্ড।
গতকাল লর্ডসের গ্যালারি থেকে থেকে ভেসে আসছে করতালির কলতান, সতীর্থরাও যোগ দিলেন তাতে। যে বাইশ গজে এতদিন রাজ করেছেন, বিদায়বেলায় একটু আবেগী হয়েছেন অ্যান্ডারসনও! ভেজা চোখ আর সেই মাথার ক্যাপটা উঁচিয়ে ধরে যেন বলেছেন, মনে রেখো, আমিও ছিলাম তোমাদেরই মাঝে।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ গ্রেট গ্যারি সোবার্স ও দক্ষিণ আফ্রিকার লিজেন্ডারি অলরাউন্ডার জ্যাকস ক্যালিসের পর দারুণ এক কীর্তি গড়লেন ইংল্যান্ডের অলরাউন্ডার বেন স্টোকস। বিশ্বের তৃতীয় ও ইংল্যান্ডের প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে টেস্ট ক্রিকেটে ৬ হাজার রান ও দুইশ উইকেট নিয়েছেন তিনি।
লর্ডসে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে টেস্টে নিজের প্রথম ওভারে কার্ক ম্যাককেঞ্জিকে ফিরিয়ে দুইশ উইকেট নেন স্টোকস। ১০৩ টেস্ট খেলে এই মাইলফলক স্পর্শ করেছেন পেসার। তারও আগে ব্যাট হাতে ৩৫.৩০ গড়ে ১৩ সেঞ্চুরি ও ৩১ ফিফটিতে ৬৩২০ রান করেন।
এছাড়া আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সব মিলিয়ে ষষ্ঠ ও প্রথম ইংলিশ খেলোয়াড় হিসেবে ১০ হাজার রান ও ৩০০ উইকেটেরও মালিক হলেন স্টোকস। ২৬০ আন্তর্জাতিক ম্যাচে স্টোকসের রান ১০ হাজার ৩৬৮ এবং উইকেট ৩০০টি। এই তালিকায় আছেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের অলরাউন্ডার কার্ল হুপার, শ্রীলঙ্কান লিজেন্ড সনাথ জয়াসুরিয়া, ক্যালিস, পাকিস্তানের শহীদ আফ্রিদি ও বাংলাদেশের অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান।
দ্বিতীয় দিনের খেলা শেষেই বোঝা যাচ্ছিল, লর্ডস টেস্টে ইংল্যান্ডের জয়টা সময়ের ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। সেই সময়ের ব্যাপারটা ইংল্যান্ড গতকাল তৃতীয় দিন সকালে ১ ঘণ্টার একটু বেশি সময়ের মধ্যেই সেরে ফেলল। ইনিংস ও ১১৪ রানের জয়ে জেমস অ্যান্ডারসনের বিদায় রাঙালেন বেন স্টোকসরা।
লর্ডস টেস্টকে অনেকেই বলছেন অ্যান্ডারসনের টেস্ট। ৪১ বছর বয়সি ইংলিশ ফাস্ট বোলার আগেই ঘোষণা দিয়ে রেখেছিলেন, ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে লডর্সের এই টেস্টটি তার ক্যারিয়ারের শেষ। তাই প্রথম দিন থেকেই ম্যাচটি হয়ে যায় অ্যান্ডারসনের টেস্ট।
নিজের টেস্টের শেষ মুহূর্তটাও অ্যান্ডারসনও তার মতো করে রাঙিয়ে নিয়েছেন। ওয়েস্ট ইন্ডিজ তৃতীয় দিনের খেলা শুরু করে ৬ উইকেটে ৭৯ রান নিয়ে। দিনের ১৪তম ওভারেই উইকেট হারায় তারা। সেই উইকেটটি নেন অ্যান্ডারসন নিজেই। জসুয়া ডি সিলভাকে বলটি অ্যান্ডারসন করেছিলেন কল্পিত চতুর্থ স্টাম্প বরাবর। সেই বল ব্যাটের কানা ছুঁয়ে চলে যায় জেমি স্মিথের গøাভসে। এটা নিয়ে দ্বিতীয় ইনিংসে তার উইকেট দাঁড়ায় ৩টি। প্রথম ইনিংসে পেয়েছেন ১ উইকেট।
এরপর দ্রুতই আলজারি জোসেফ ও সামার জোসেফকে তুলে নেন গাস অ্যাটকিনসন। পরে জেইডেন সিলসের উইকেট নিয়ে প্রথম ইনিংসের পর দ্বিতীয় ইনিংসে ৫ উইকেট নিয়েছেন তিনি। অভিষেক টেস্টে সব মিলিয়ে ১২ উইকেট হয়েছে অ্যাটকিনসনের। প্রথম ইনিংসে ৪৫ রানে নিয়েছেন ৭ উইকেট, দ্বিতীয় ইনিংসে ৫ উইকেট ৬১ রানে।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের টেস্ট ক্রিকেট ঘিরে যে সংকট, শুধু বেশি বেশি অর্থ বিনিয়োগ করলেই যে সেটি মিটবে, তা মনে করেন না ব্রায়ান লারা। ক্যারিবীয় কিংবদন্তির মতে, প্রতিভাবান ক্রিকেটারদের যথাযথ পরিচর্যা ও সঠিকভাবে কাজে লাগানো দরকার, যা এখন দেখা যাচ্ছে না।
ক্রিকেট দুনিয়ায় একসময়ের প্রতাপশালী ওয়েস্ট ইন্ডিজ বহুদিন ধরেই নিজেদের হারিয়ে খুঁজছে।
বর্তমানে আইসিসি টেস্ট র?্যাঙ্কিংয়ের আট নম্বরে অবস্থান করছে ক্যারিবীয় টেস্ট দল। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে চলমান টেস্ট সিরিজের প্রথমটিতে তৃতীয় দিনেই ইনিংস ব্যবধানে হারের মুখে দাঁড়িয়ে দলটি।
১৯৮০’র দশকে টানা ১১ টেস্ট জয়ের রেকর্ড গড়া ওয়েস্ট ইন্ডিজ সা¤প্রতিক সময়ে দুর্দিন কাটাচ্ছে। ২০২৩ সালে তিনটি টেস্ট সিরিজ খেলে একটিতেও জিততে পারেনি দলটি। অনেকের ধারণা, টেস্টের প্রতি খেলোয়াড়দের অনাগ্রহ এক্ষেত্রে বড় কারণ। নিকোলাস পুরান, শাই হোপসহ ওয়েস্ট ইন্ডিজের অনেক ক্রিকেটারই শুধু সাদা বলের ক্রিকেট খেলতে আগ্রহী। বিশ্বজুড়ে ফ্র্যাঞ্চাইজি টি-টোয়েন্টি খেলার জন্য তারা টেস্ট খেলতে চান না।
সাবেক অধিনায়ক জেসন হোল্ডারসহ অনেকে মনে করেন, ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেটে বিনিয়োগের পরিমাণ বাড়ানো দরকার। তবে লন্ডনে থাকা লারা বিবিসির পডকাস্ট ‘স্টাম্পড’-এ বিষয়টি নিয়ে খানিকটা ভিন্নমত পোষণ করেছেন, ‘আপনি যদি ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেটের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ১০-২০ কোটি ডলার দেন, এতে কি আমাদের খেলা বদলে যাবে? আমি নিশ্চিত নই। আমাদের যে সব প্রতিভা আছে, সে সবই তো কাজে লাগানো হয় না।’
সংক্ষিপ্ত স্কোর
ওয়েস্ট ইন্ডিজ : ১২১ ও ৪৭ ওভারে ১৪৭
(মোতি ৩১, অ্যাথানেজ ২২, হোল্ডার ২০, লুইস ১৪, অ্যান্ডারসন ৩/৩১, অ্যাটকিনসন ৫/৬১, স্টোকস ২/২৫)।
ইংল্যান্ড ১ম ইনিংস : ৯০ ওভারে ৩৭১
(ক্রলি ৭৪, স্মিথ ৭০, রুট ৬৮, পোপ ৫৭, ব্রুক ৫০, সিলস ৪/৭৭, মোতি ২/৪১, হোল্ডার ২/৫৮)।
ফল : ইংল্যান্ড ইনিংস ও ১১৪ রানে জয়ী।
ম্যাচসেরা : গাস অ্যাটকিনসন