সেমির লক্ষ্যে আজ মাঠে নামছে চার জায়ান্ট
প্রকাশ: ০৬ জুলাই ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
কাগজ ডেস্ক : ইউরোপ ফুটবলের শ্রেষ্ঠত্বের লড়াই উয়েফা ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপের গ্রুপ পর্বের ও রাউন্ড অব সিক্সটিন পর্ব শেষ হয়েছে আরো আগেই। ৩২ দল থেকে মুকুটের লড়াইয়ে টিকে ছিল আট দল। ইতোমধ্যে গতকাল কোয়ার্টার ফাইনালের হাইভোল্টেজ দুটি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়েছে এবং ছিটকে গেছে আরো দুই দল। আজ রাতে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে কোয়ার্টার ফাইনালের বাকি দুটি ম্যাচ যেখানে ডুসেলডর্ফে রাত ১০টায় সেমিফাইনালে ওঠার লড়াইয়ে মুখোমুখি হবে ইংল্যান্ড ও সুইজারল্যান্ড এবং বার্লিনে রাত ১টায় মুখোমুখি হবে নেদারল্যান্ডস ও তুরস্ক।
চলতি আসরে ইংল্যান্ডের অবস্থা এককথায় হযবরল। গ্রুপ পর্বের প্রথম ম্যাচে সার্বিয়ার বিপক্ষে কোনোমতে ১-০ গোলের ব্যবধানে জেতে হ্যারি কেইনের দল। এরপর ডেনমার্কের বিপক্ষে ১-১ গোলের ড্র হলেও শেষ ম্যাচে স্লোভেনিয়ার জালে বলই জড়াতে পারেনি তারা। শেষ ষোলোয় স্লোভাকিয়ার বিপক্ষে তো হেরেই বসেছিল ইংল্যান্ড। নেহাত বেলিংহাম শেষ মুহূর্তে বাঁচিয়ে দেয় তাদের। শেষ আটে পৌঁছালেও ইংল্যান্ডের খেলা নিয়ে হতাশ তাদের সমর্থকরা। ইউরোতে যতক্ষণ টিম টিকে থাকছে, ইংল্যান্ড কোচ গ্যারেথ সাউথগেটের মেয়াদও যেন ততক্ষণই। কোয়ার্টার ফাইনালে ইংল্যান্ডের জন্য যে কঠিন পরিস্থিতি অপেক্ষা করছে, বলার প্রয়োজন পড়ে না। অপরদিকে, নিজেদের যোগ্যতার প্রমাণ দিয়েই কোয়ার্টার ফাইনালে উঠেছে সুইজারল্যান্ড। এ পর্যন্ত আসতে তাদের পথটাই সবচেয়ে কঠিন ছিল। গ্রুপ পর্বে হাঙ্গেরিকে হারানোর পর জার্মানির সঙ্গে ড্র করে ইয়াকিনের দল এখন টুর্নামেন্টের ডার্ক হর্স হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। এ নিয়ে ইউরোতে টানা দ্বিতীয়বার সুইসরা কোয়ার্টার ফাইনালে খেলার যোগ্যতা অর্জন করল। কিন্তু কোনো সময়ই বড় টুর্নামেন্টে এর থেকে বেশি দূর যেতে পারেনি সুইসরা। ইংল্যান্ডের এবারের দলের পারফরম্যান্স সুইসদের কিছুটা হলেও আশাবাদী করে তুলেছে। সব ধরনের প্রতিযোগিতায় ইয়াকিনের দল এখনো পর্যন্ত টানা আট ম্যাচে অপরাজিত রয়েছে। ২০২২ বিশ্বকাপের পর ১৮ ম্যাচের মধ্যে মাত্র একটিতে পরাজিত হয়েছে, ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপের বাছাই পর্বে রোমানিয়ার বিপক্ষে ১-০ গোলে পরাজিত হয়েছিল সুইজারল্যান্ড। সুইসদের বিপক্ষে ইংল্যান্ড তাদের শেষ পাঁচটি ম্যাচে জয়ী হয়েছে। ২০০৪ ইউরোর গ্রুপ পর্বে ইংল্যান্ডের কাছে ৩-০ গোলের পরাজয়ের ম্যাচটিতে বর্তমান কোচ ইয়াকিন সুইস দলের সদস্য ছিলেন। তবে টুর্নামেন্টজুড়ে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে কৌশলী দল সুইসরাই। নিজেদের শক্তি সম্পর্কে তারা যেমন জানে, তেমনি শক্তিশালী প্রতিপক্ষের সামনে নিজেদের দুর্বলতার দিকগুলোও মাথায় রাখে তারা। আর এভাবেই ‘অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা’ নিয়ে প্রতিটি শক্ত চ্যালেঞ্জ উতরে গেছে তারা। এই সাফল্যের নেপথ্যে কেভিন এমেস। সুইস টিমের ডেটা অ্যানালিস্ট। তাকে বলা হয় ডেটা-ম্যান। প্রতিপক্ষ টিমের শক্তি-দুর্বলতা তার তীক্ষè নজরে আটকায় না। এবার তাদের সামনে ইংল্যান্ড। গত ম্যাচগুলোতে নিজেদের মেলে ধরতে না পারলেও যে কোনো সময় জ্বলে ওঠার মতো প্রতিভা যে দলটির আছে- তা মাথায় নিয়েই মাঠে নামবে সুইজারল্যান্ড। ফলে ডাগআউটে গ্যারেথ সাউথগেট ও মুরাত ইয়াকিনের ‘স্নায়ুযুদ্ধ’ দেখার অপেক্ষায় রয়েছে ফুটবল বিশ্ব।
এদিকে দিনের আরেক ম্যাচে নেদারল্যান্ডসের মুখোমুখি হবে ১৬ বছর পরে ইউরো কাপের কোয়ার্টার ফাইনালে ওঠা তুরস্ক। ২০০৮ সালে ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে পেনাল্টিতে জিতে ইউরোর ইতিহাসে মাত্র একবার সেমিফাইনালে ওঠে তুরস্ক। এবার ডাচ বাধা পেরোতে পারলে ১৬ বছর পর ফের সেমিফাইনালে উঠবে তারা। অন্যদিকে, ১৯৮৮ সালের ইউরো চ্যাম্পিয়ন নেদারল্যান্ডস সর্বশেষ সেমিফাইনাল খেলে ২০০৪ সালে। এবার তুর্কিজয় করতে পারলে ২০ বছরের সেমির আক্ষেপ ঘুচবে তাদের। এর আগে সাতবারের মুখোমুখিতে নেদারল্যান্ডস জয় পেয়েছে ৪ বার এবং তুরস্ক ২টিতে জয় পায়। বাকি ১ ম্যাচের ফলাফল ড্র।
এবারের ইউরোয় জর্জিয়াকে গ্রুপের প্রথম ম্যাচে ৩-১ গোলে হারানোর পর পর্তুগালের কাছে ৩-০ ব্যবধানে বিধ্বস্ত হয় তুরস্ক। এরপর চেক প্রজাতন্ত্রকে ২-১ ব্যবধানে হারানোর পর সমশক্তির অস্ট্রিয়াকেও ২-১ ব্যবধানে কাবু করেছে ভিনসেন্সো মনতেল্লার শিষ্যরা। ফলে একপ্রকার মিশ্র অভিজ্ঞতার ভেতর দিয়ে কোয়ার্টার ফাইনালে উঠেছে দলটি। শেষ দুই ম্যাচে স্পষ্ট ফেভারিট প্রতিপক্ষের সামনে পরিষ্কারভাবে ভুগতে দেখা গেছে তুরস্ককে। তবে মাঠে অসাধারণ ধৈর্যের সাক্ষর রেখে শেষ পর্যন্ত জয় ছিনিয়ে নিয়েছে তারা।
এদিকে সর্বশেষ ম্যাচে রোমানিয়াকে ৩-০ গোলে উড়িয়ে শেষ আটের মঞ্চে এসেছে নেদারল্যান্ডস। তবে তুরস্ক ম্যাচের আগে ডাচশিবিরে ঘুরেফিরে আসছে গ্রুপ পর্বে অস্ট্রিয়ার কাছে হেরে যাওয়া ম্যাচটি। বার্লিনের অলিম্পিক স্টেডিয়ামেই পাঁচ গোলের রোমাঞ্চ ছড়ানো ম্যাচে ডাচরা হেরেছিল ৩-২ ব্যবধানে। গ্রুপ পর্বে সেটিই ছিল নেদারল্যান্ডসের প্রথম হার। সেই তেতো স্মৃতির প্রসঙ্গে ডামফ্রিস বলেছেন, ‘অস্ট্রিয়া ম্যাচে আমরা শিক্ষা পেয়েছিলাম। এ নিয়ে গত সপ্তাহে আমাদের মধ্যে অনেক আলোচনা হয়েছে। আমি মনে করি, আমরা খুবই ভালো খেলেছিলাম, বিশেষ করে প্রতিপক্ষকে চাপ দেয়ার ক্ষেত্রে, বল পজিশন ধরে রাখার ক্ষেত্রে।’ রোমানিয়ার বিপক্ষেও বল পজিশন ধরে রেখে খেলার ছকে ছিল নেদারল্যান্ডস। অন্যদিকে, অস্ট্রিয়ার পায়ে বল দিয়ে প্রতি-আক্রমণের ছকে বাজিমাত করে তুরস্ক। ডাচদের বিপক্ষে তুরস্ক কোচ কোন ছকে থাকবেন, তা আগেভাগে বলা কঠিন।