কোয়ার্টারে স্পেন-জার্মানি মুখোমুখি
প্রকাশ: ০২ জুলাই ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
কাগজ ডেস্ক : ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপের শেষ ষোলোর লড়াইয়ে জর্জিয়ার জয়যাত্রা থামিয়ে কোয়ার্টার ফাইনাল নিশ্চিত করেছে স্পেন। এবারের টুর্নামেন্টের অন্যতম ফেভারিট দল স্পেন। শেষ আটে তারা প্রতিপক্ষ হিসেবে পেয়েছে জার্মানিকে। দুই হেভিওয়েটের লড়াই যে জমে উঠবে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। ইউরোর শেষ ষোলোয় হারের মুখে ছিল ইংল্যান্ড। পরে নাটকীয় এক প্রত্যাবর্তনে স্লোভাকিয়াকে ২-১ গোলে হারিয়ে কোয়ার্টার ফাইনালে জায়গা করে নিয়েছে। ম্যাচের পর ইংলিশ কোচ গ্যারেথ সাউথগেট জানিয়েছেন, অবিশ্বাস্য সেই জয়ের পেছনের গল্প। আসলে ১৯৬৬ সালের বিশ্বকাপ ক্যাম্পেইনের একটি ভিডিও হ্যারি কেইন ও জুড বেলিংহ্যামদের প্রেরণা হিসেবে কাজ করেছে।
স্পেনের বিপক্ষে গতকাল খুব একটা পাত্তা পায়নি প্রথমবারের মতো ইউরো খেলতে আসা জর্জিয়া। হ্যাঁ, প্রথমবার খেলতে এসেই শেষ ষোলোতে উঠে যাওয়া একটা বড় চমক। কিন্তু জর্জিয়ার পথচলা আসলে এখানে থামারই কথা, থামলও। দুর্দান্ত খেলেই স্পেন ম্যাচ জিতে নিল ৪-১ গোলে, উঠে গেল ইউরোর কোয়ার্টার ফাইনালে। তবে বিদায় নেয়ার আগে জর্জিয়াও উপহার দিয়ে গেল মুগ্ধ হওয়ার মতো কিছু মুহূর্ত।
চিরাচরিত টিকি-টাকা থেকে সরে গিয়ে এবার ইউরোতে স্পেন খেলছে গতিময় দৃষ্টিনন্দন ফুটবল। মুগ্ধ করে যাচ্ছে ফুটবলপ্রেমীদের। সেই মুগ্ধতা থাকল জর্জিয়ার বিপক্ষে ম্যাচেও। যদিও কোলনে গতকাল প্রথম গোলটা স্পেনই খেয়েছে এবং সেটা কিছুটা খেলার বিপরীত স্রোতেই। ১৮ মিনিটে রবিন লে নরমান্দের আত্মঘাতী গোলে পিছিয়ে পড়ার পর একে একে স্পেনের হয়ে চারটি গোল করেছেন রদ্রি, ফাবিয়ান রুইস, নিকো উইলিয়ামস ও দানি ওলমো।
আগামী ৫ জুলাই কোয়ার্টার ফাইনালে স্পেন খেলবে স্বাগতিক জার্মানির বিপক্ষে। গ্রুপ পর্বে সবচেয়ে ব্যস্ত গোলকিপার ছিলেন জর্জিয়ার জর্জি মামারদাশভিলি। তার সেই ব্যস্ততা থাকল এই ম্যাচেও এবং একেবারে শুরু থেকেই। ১০ মিনিটের মধ্যেই পেদ্রি ও দানি কারভাহালকে তিনি হতাশ করেন দারুণ দুটি সেভ করে।
এর কিছুক্ষণ পরেই খেলার ধারার বিপরীতে গিয়ে গোল খেয়ে যায় স্পেন। ১৮ মিনিটে জর্জিয়ার কাকাবাদজের ক্রস বিপদমুক্ত করতে গিয়ে উল্টো নিজেদের জালে বল পাঠিয়ে দেন রবিন লে নরমান্দ।
গ্রুপ পর্বে তিন ম্যাচে কোনো গোল না খাওয়া স্পেনের নকআউট পর্বে শুরুটা হলো আত্মঘাতী গোল খেয়ে। তবে ওই গোলটাই, এরপরে আর জর্জিয়াকে খুব একটা সুযোগ দেয়নি স্পেন। উইলিয়ামসের কাটব্যাক থেকে রদ্রি সমতা ফেরান ম্যাচের ৩৯ মিনিটে। ৫১ মিনিটে ইয়ামালের ক্রস থেকে স্পেনকে এগিয়ে দেয়া গোলটা করেন রুইস। ৭৫ মিনিটে স্পেনের এর পরের গোলটার পাস বাড়িয়েছেন রুইস নিজেই, এবার গোলদাতা উইলিয়ামস। আর ম্যাচের ৮৩ মিনিটে মিকেল ওইয়ারসাবালের পাস থেকে ৪-১ করেন দানি ওলমো।
উয়েফা ইউরোর শেষ ষোলোতে জার্মানির ভেলটিন্স অ্যারেনাতে গতকাল নির্ধারিত ৯০ মিনিটে ১-১ ব্যবধানে ড্র হওয়ার পর অতিরিক্ত সময়সহ ২-১ ব্যবধানে স্লোভাকিয়াকে হারায় ইংল্যান্ড। স্লোভাকিয়ার হয়ে একমাত্র গোলটি করেন ইভান স্রান্স। আর ইংলিশদের হয়ে গোল দুটি করেন বেলিংহ্যাম ও কেইন।
খেলার ২৫ মিনিটেই ইভান শ্রানজের গোলে পিছিয়ে পড়েছিল থ্রি লায়ন্স। তারপর তো জয়ের আশাতেই ছিল স্লোভাকিয়া। কিন্তু দ্বিতীয়ার্ধে যোগ করা সময়ের পঞ্চম মিনিটে ইংলিশদের সমতায় ফেরান জুড বেলিংহাম। তাতে ম্যাচটা চলে যায় অতিরিক্ত সময়ে। সেখানে শুরুতেই হ্যারি কেইন স্কোর ২-১ করে জয়ের সব আয়োজন সম্পন্ন করেছেন। শেষ পর্যন্ত রক্ষণ আগলে রেখে সুইজারল্যান্ডের বিপক্ষে কোয়ার্টার ফাইনাল নিশ্চিত করেছে গ্যারেথ সাউথগেটের দল। ম্যাচের পর নাটকীয় জয়ের পেছনের প্রেরণার গল্পটা তুলে ধরেন ইংল্যান্ড কোচ।
তিনি জানান টুর্নামেন্টের আগে সেন্ট জর্জেস পার্কে শিষ্যদের একটি ভিডিও দেখিয়েছিলেন। যে ভিডিওতে ইংল্যান্ডের একমাত্র বিশ্বকাপ জেতা দলের প্রতিটি সদস্যের গুরুত্ব সম্পর্কে তুলে ধরা হয়েছে, ‘আমরা ১৯৬৬ বিশ্বকাপের একটা ভিডিও ছেলেদের দেখিয়েছিলাম। তাতে ফাইনালের আগ পর্যন্ত দলটির কঠিন পথ পাড়ি দেয়ার অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরা হয়েছে। যেখানে জিওফ হার্স্ট, যে কিনা কোয়ার্টার ফাইনালের আগ পর্যন্ত খেলেনি এবং শেষ আটে তার হ্যাটট্রিকেই দল পশ্চিম জার্মানিকে হারিয়েছে। তার মতো এমন যারা খেলেছিল, প্রত্যেকে যার যার ভূমিকা গুরুত্বের সঙ্গে রেখেছিল- সেই গুরুত্বটাই শিষ্যদের বোঝানো হয়েছে’।
তিনি আরো বলেছেন, ‘আমরা আসলে ওই দলটার মূল্যকে উপযুক্ত স্বীকৃতি দিতে চেয়েছি, ওই মুহূর্তগুলো স্মরণ করতে চেয়েছি। কারণ এগুলোই আসলে টুর্নামেন্ট বিজয়ী দলের একটা অংশ। এখনো আমাদের অনেক দূর যেতে হবে।’
আগামী শনিবার রাতে সেমিফাইনালে ওঠার লড়াইয়ে বেলিংহাম-কেইনদের প্রতিপক্ষ গতবারের চ্যাম্পিয়ন ইতালিকে বিদায় করা সুইজারল্যান্ড।