×

সাময়িকী

গোলাম মুরশিদের উজানস্রোতে বাংলাদেশ

অন্তর্গত অঙ্গীকার ও অন্তরস্থিত স্বপ্নের ব্যঞ্জনা

Icon

গোলাম কিবরিয়া পিনু

প্রকাশ: ৩০ আগস্ট ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

অন্তর্গত অঙ্গীকার ও অন্তরস্থিত স্বপ্নের ব্যঞ্জনা

গত ২২ আগস্ট লন্ডনের কুইন্স হাসপাতালে ড. গোলাম মুরশিদ শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন। ১৯৩৯ সালের ৮ এপ্রিল বরিশাল জেলার ধামুরা গ্রামে তিনি জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তিনি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস লিখেছেন, বাংলা ভাষার অভিধান প্রণয়ন করেছেন, রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, মধুসূদন ও বিদ্যাসাগর সম্পর্কে ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি ও পর্যবেক্ষণে উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ রচনা করেছেন। মুক্তিযুদ্ধ ও রাজনীতি বিষয়ে বেশ কয়েকটি বই লিখেছিলেন গোলাম মুরশিদ। গোলাম মুরশিদের বেশি প্রচারিত বইটির নাম ‘হাজার বছরের বাঙালি সংস্কৃতি’। এটি আসলে গত এক হাজার বছরের বাংলাদেশের সামগ্রিক ইতিহাস।

গোলাম মুরশিদের লেখার সঙ্গে পাঠক হিসেবে বহু আগে থেকে আমার একান্ত পরিচয় রয়েছে, আমি যখন বিশ্বদ্যিালয়ের ছাত্র তখন থেকে, তাও হয়ে গেছে- তিন দশকের বেশি। একজন বিশিষ্ট লেখক হিসেবে, চিন্তক হিসেবে, গবেষক হিসেবে, সমাজ ও সময়ের অনন্য পর্যবেক্ষক হিসেবে তার লেখার একজন অংশীদার হয়ে তিনি এখনো আমার অন্তর্গত। তাই তিনি অনির্বাপিত।

তার প্রায় সব প্রকাশিত গ্রন্থ পড়েছি, শুধু পড়িনি- নিজের কিঞ্চিৎ গবেষণার কাজের ক্ষেত্রেও তার লেখার কাছে ঋণী হয়ে আছি, তার অসামান্য যুক্তিবাদী বিবেচনাবোধের বিভিন্ন দিগন্ত নিয়ে নিজের বিবেচনাকে করেছি কখনো কখনো শানিত। তার লেখার অন্তরস্থিত অভিব্যঞ্জনা নিয়ে আমিও অনেক পাঠকের মতো পরিব্যাপ্ত হয়েছি।

দুই.

গোলাম মুরশিদের লেখা ‘উজান স্রোতে বাংলাদেশ’ বইটির কথা আজ শুধু উল্লেখ করি। এই বইয়ের বিভিন্ন প্রবন্ধ পড়তে পড়তে মনে হয়েছে- তিনি তো একজন নিছক লেখক নন, তার একটি লেখক-সত্তা আছে, যার উৎসভূমির সঙ্গে যুক্ত হয়ে আছে- আধুনিক দৃষ্টিভঙ্গিনির্ভর একজন মানুষ, অগ্রসরমান গণতান্ত্রিক মূল্যবোধসম্পন্ন একজন নাগরিক, গভীর পর্যবেক্ষণ নিয়ে দেশ ও পৃথিবীর বিভিন্ন ঘটনার একজন বিশ্লেষক, মানবিকতার অতলস্পর্শী অসাম্প্রদায়িক ও যুক্তিবাদী একজন মানুষ।

‘উজান স্রোতে বাংলাদেশ’ বইটি প্রকাশিত হয়েছে ২০০৩ সালে, ঢাকার মাওলা ব্রাদার্স থেকে। বইটিতে রয়েছে সাতটি প্রবন্ধ। প্রবন্ধগুলোর শিরোনাম- ‘বাঙালিত্ব’, ‘স্বরূপের সংকট, না নব্য-সাম্প্রদায়িকতা’, ‘উজান স্রোতে বাংলাদেশ’, ‘ব্যক্তিপূজা বনাম গণতন্ত্র’, ‘আদর্শবাদ ও মানুষের সংকট’, ‘জানার অধিকার ও সৎ সাংবাদিকতা’ ও ‘মহিলারা ইদানীং’। বইটির পৃষ্ঠা সংখ্যা ২৩৫, বইয়ের শুরুতে এক পৃষ্ঠায় লেখক গোলাম মুরশিদ ‘সূচনা’ বক্তব্যে বলেছেন- ‘মুক্তিযুদ্ধে কিছু ত্যাগ স্বীকার করেনি, এমন লোক খুঁজে পাওয়া সহজ নয়, রাজাকার ছাড়া। আমিও মূল্য দিয়েছি বই কি, যদিও মুক্তিযোদ্ধাদের মতো নয়, যে মা-বোনেরা ইজ্জত দিয়েছিলেন, তাদের মতোও নয়। স্বাধীনতার লাল সূর্য উঠতে দেখে সাত কোটি লোকের মতো আমারও মনে অনেক স্বপ্ন বাসা বেঁধেছিল। ভেবেছিলাম, যার জন্যে লাখ-লাখ লোক প্রাণ দিলেন, লাখ-লাখ মা-বোন ধর্ষিতা হলেন, এবারে সেসব পাবে সাধারণ লোকেরা। বাঙালি সংস্কৃতির ভিত্তিভূমির ওপর গড়ে উঠবে নতুন দেশ। দুধে-ভাতে না হোক, দুবেলা দুমুঠো খেয়ে বেঁচে থাকবে মানুষ। কথা বলার স্বাধীনতা থাকবে। নিজের ভাবনা প্রকাশ করার স্বাধীনতা থাকবে। ধর্মীয় হানাহানির ঊর্ধ্বে উঠে মুসলমান-অমুসলমান ভালো প্রতিবেশীর মতো, বন্ধুর মতো বাস করবে। এই প্রত্যাশাই তো স্বাভাবিক। কিন্তু এত ত্যাগের বিনিময়ে যে দেশ স্বাধীন হয়েছিল, অচিরেই সেই দেশকে যেতে দেখেছিলাম উল্টো পথে। তাই ব্যথিত না হয়ে পারিনি। ব্যথিত হয়েছি, সেই সঙ্গে আলোর কোনো চিহ্ন না দেখে হতাশ হয়েছি। সেই গভীর ব্যথা এবং এবং নিরঙ্কুশ হতাশা এই বই লেখার প্রেরণা জুগিয়েছে।’’

লেখকের উল্লিখিত সূচনা-বক্তব্য থেকে দেশের প্রতি তার অন্তর্গত অঙ্গীকার ও অন্তরস্থিত স্বপ্নের অভিব্যঞ্জনা খুঁজে পাই, এরই কণ্ঠলগ্ন হয়ে যেন এই গ্রন্থের প্রবন্ধগুলো লেখা হয়েছে। এটাও মনে হয়েছে- লেখক তো অরণ্যজীবী বা দূরালোকের কোনো বাসিন্দা নন। সে কারণে পাঠক হিসেবে অকপটে তার লেখার অংশীদার হয়ে উঠতে পারি।

তিন.

বইয়ের প্রথম প্রবন্ধটি ‘বাঙালিত্ব’, এই প্রবন্ধে লেখক প্রথমে ‘বঙ্গদেশ’ ও ‘বাংলাভাষা’র ধারণা কীভাবে গড়ে উঠেছে, সে বিষয়ে আলোচনা করেছেন। এর পর বাংলা ভাষার বৈশিষ্ট্য কীভাবে স্তর থেকে স্তরে পরিব্যাপ্ত হয়, সেই যুক্তি ও উপাত্ত লেখক তুলে ধরেছেন। তিনি লিখেছেন- ‘বাংলা ভাষার বৈশিষ্ট্য আরও স্পষ্ট হয়ে ওঠে চতুর্দশ-পঞ্চদশ শতকে। তখনকার বাংলা ভাষার যে নমুনা শ্রীকৃষ্ণকীর্তন-এ পাওয়া যায়, তা বিশ্লেষণ করলেও এটা বোঝা যায়। তার মানে যখন গৌড়, বঙ্গ, বরেন্দ্র ইত্যাদি একত্রিত হয়ে বৃহত্তর বাঙ্গালাহ জন্ম নেয়, তার সমকালে এই অঞ্চলের ভাষাও সত্যিকার বাংলা হয়ে ওঠে, যদিও নিচের আলোচনা থেকে দেখা যাবে যে তখনো এ ভাষার নাম বাংলা হয়নি। বাংলা অক্ষরও সত্যিকার বাংলা চেহারা পেতে আরম্ভ করে কমবেশি এ সময়ে। তবে কোনো কোনো পণ্ডিতের মতে, বাংলা অক্ষরের বয়স তার চেয়ে বেশি।’

১৮০১ সাল থেকে ফোর্ট উইলিয়াম কলেজের নেতৃত্বে যখন থেকে বাংলা বই লেখার কাজ শুরু হয় অথবা শ্রীরামপুর প্রেস থেকে বাংলা বই প্রকাশিত হতে থাকে, তখন থেকে ‘বাঙ্গালা’ শব্দটি প্রামাণ্য শব্দ হিসেবে দাঁড়িয়ে যায় বলে লেখক উল্লেখ করেন।

১৭৫৭ সালে বাংলায় যে ইংরেজ শাসন শুরু হয়, তার ফলে শুধু ব্যবসা-বাণিজ্য নয়, রাজকার্যেও ইংরেজদের সঙ্গে বাঙালিদের যোগাযোগ বেড়ে যায়, বিশেষত কলকাতাকেন্দ্রিক উচ্চবর্ণের হিন্দুদের- সেই প্রেক্ষাপট তুলে ধরে লেখক কৌতূলহলোদ্দীপক এক অধ্যায় তুলে ধরে সুলুকসন্ধান করেন এভাবে- ‘‘উনিশ শতকে কলকাতা এবং পশ্চিমবঙ্গের শহরবাসী সাধারণ লোকেরা যে অর্থে এই শব্দ ব্যবহার করতে আরম্ভ করেন, তা হলো : বাংলাভাষী শিক্ষিত হিন্দু, মুসলমান নয়। এর কারণ শহরে তখন খুব কম মুসলমানই বাস করতেন এবং যারা বাস করতেন এবং যারা করতেন তারা বেশির ভাগই বাংলায় কথা বলতেন না। সুতরাং বাংলাভাষী লোক হিসেবে শহরবাসী শিক্ষিত হিন্দুরা যাদের দেখতেন, তারা সবাই হিন্দু, মুসলমান নন। সেই থেকেই বাঙালি ও মুসলমান প্রতিতুলনা হিসেবে দাঁড়িয়ে যায়। বিশ শতকের গোড়ার দিকে শরৎচন্দ্রের লেখাতেও ‘বাঙালি’ আর ‘মুসলমান’- প্রতিশব্দ হিসেবে দেখতে পাই।’’

লেখক মুক্তিযুদ্ধের সময় ও তার পরবর্তীতে কলকাতায় তার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার উদাহরণ টেনে নিয়ে বাঙালি বলতে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোককে বোঝানো হতো বলে বর্ণনা করেছেন। প্রবন্ধের পরবর্তীতে ‘বাঙ্গাল’ শব্দের অভিধা কী ছিল, তাও লিখেছেন। ১৯৪৭ সালের দেশ বিভাগের পর বাঙালি নামের প্রায় একচেটিয়া মালিক হন পশ্চিমবঙ্গের লোকেরা, এমন অভিমত তিনি ব্যক্ত করেন। অনেক লেখক বাঙালি বলতে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকদের শুধু চিহ্নিত করলেও অন্নদাশঙ্কর, শিবনারায়ণ বায়, সুনীল গাঙ্গুলি, শ্যামল গাঙ্গুলিসহ অনেকে ব্যতিক্রম ছিলেন বলে গোলাম মুরশিদ অভিমত ব্যক্ত করেছেন। অসাম্প্রদায়িক ও সাম্প্রদায়িক দৃষ্টিভঙ্গির লেখকদের মধ্যে ‘বাঙালি’ বিষয়ে ভিন্ন ভিন্ন অভিব্যক্তির পরিচয় লক্ষ করা যায়।

মুক্তিযুদ্ধের মধ্যে দিয়ে অর্জিত বাংলাদেশের স্বাধীনতা এক ধরনের বাস্তবিকতা তৈরি করেছে- বিভিন্ন দিক থেকেই, যার ফলে ‘বাঙালি’ অভিধাও সেই বাস্তবিকতার ভিত্তিমূলে হয়েছে আরো সংহত। লেখক উল্লেখ করেছেন- ‘রাজনৈতিক এবং স্থানিক দিক থেকে বাংলাদেশের অধিবাসীদের বাঙালি পরিচয় আরো জোরদার হয় ১৯৭২ সালে- শেখ মুজিবের নেতৃত্বে বাংলাদেশের সংবিধানে বাংলাদেশের নাগরিকদের বাঙালি নামে আখ্যায়িত করা হয়েছে। কেবল জোরদার নয়, এই সংবিধানের সংজ্ঞা অনুযায়ী এ শব্দের অভিধাও আরেকবার বদলে যায়।’

‘বাঙালি’ শব্দের অর্থ রাজনৈতিক ও ভৌগোলিক কারণে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন পর্যায়ে বিভিন্ন অর্থে ব্যঞ্জনা লাভ করতে দেখা যায়। সামাজিক চৈতন্য স্থির ও একরৈখিক থাকে না বলে আমরা জানি, সামাজিক-রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক-অর্থনৈতিক অভিঘাতে তা পরিবর্তনের মুখে শুধু পড়ে না, তার অবয়রও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পরিবর্তিত হয়, ‘বাঙালি’ অভিধার ক্ষেত্রে তা হয়েছে বলে এই লেখকের লেখায় আমরা তা আবিষ্কার করতে পারি।

চার.

দ্বিতীয় প্রবন্ধ ‘স্বরূপের সংকট, না নব্য-সাম্প্রদায়িকতা’, এই প্রবন্ধে লেখক তার দৃষ্টিভঙ্গি, পর্যবেক্ষণ ও সংবেদন দিয়ে বাংলাদেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক ঘটনা ও সামাজিক অভিঘাত শুধু বিশ্লেষণ করেননি, অবলোকনের মধ্যে দিয়ে তার মতামত তুলে ধরেছেন। পাঠক হিসেবে তার সকল মতামতের সঙ্গে একমত না হয়েও তার লেখায় আমরা যে বাস্তবিকতা খুঁজে পাই, তা তো আমাদেরই দেশসংলগ্ন-জনসংলগ্ন দৃশ্যপট ও স্বদেশের মুখ।

তিনি প্রশ্ন তুলেছেন, আমরা সাম্প্রদায়িক পরিচয়ে পরিচিত হব নাকি ভাষা দিয়ে পরিচিত হব। কয়েক দশক ধরে এমন ছিন্নভিন্ন বিবেচনাবোধ কখনো কখনো ‘বাঙালি’ ও ‘বাংলাদেশি’ বিভাজন তৈরি করে সংকীর্ণ রাজনৈতিক স্বার্থ সংরক্ষণে ক্ষমতাশালীরা নিমগ্ন থেকেছেন। ধর্মনিরপেক্ষতা থেকে ধর্মীয় পরিচয়ে বাংলাদেশের নাগরিকদের পরিচয়কে মুখ্য করে তোলার খণ্ডিত প্রয়াসও চলেছে। তার ধারাবাহিক ইতিহাসলগ্ন ঘটনা ও বিবরণ লেখক বিশ্বস্তার সঙ্গে তুলে ধরেছেন।

গোলাম মুরশিদ তার এই প্রবন্ধে বলেছেন- ‘‘শেখ মুজিবুর রহমান কেবল জাতির জনক ছিলেন না, নেতা হিসেবে তিনি ছিলেন অসাধারণ প্রভাবশালী এবং জনপ্রিয়। তিনি ছিলেন একমাত্র নেতা যিনি যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশকে সমৃদ্ধির দিকে এগিয়ে নিতে পারতেন। কিন্তু প্রশাসক হিসেবে তাঁর সেই ব্যর্থতা সব আশাকে ধুলিসাৎ করে। তদুপরি, যে বিরাট নেতা গণতন্ত্রের জন্যে নিজে জেল খেটেছিলেন এবং অপরিসীম ত্যাগ স্বীকার করেছিলেন, সেই নেতাই যখন একদলীয় শাসন পদ্ধতি প্রবর্তনের মাধ্যমে গণতন্ত্রের কণ্ঠরোধ করলেন, তখন তিনি জনগণ থেকে অনেকটা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়লেন। তবু তিনি যতদিন জীবিত ছিলেন, ততদিন অন্তত সংবিধান অনুযায়ী ধর্মনিরপেক্ষতা তত্ত্ব বজায় ছিল। আইনত আমাদের পরিচয় ছিল আমরা ‘বাঙালি’। কিন্তু তিনি যখন ফৌজি বাহিনীর বিদ্রোহী কিছু কর্মকর্তার হাতে নিহত হন, তখন ধর্মনিরপেক্ষতা থেকে ধর্মীয় পরিচয়ে যাওয়ার প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ হয়।’’

এই প্রবন্ধের মূল বিষয় হিসেবে সাম্প্রদায়িকার ভেদবুদ্ধি কীভাবে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর জোরালো হচ্ছিল, তা গভীর পর্যবেক্ষণে তুলে ধরা হয়েছে।

পাঁচ.

‘উজান স্রোতে বাংলাদেশ’বিষয়ক এই প্রবন্ধের মূল বিষয় হিন্দু-মুসলমানের সম্পর্ক, তাদের মধ্যে টানাপড়েন ও সংঘাত। আগের আগের প্রবন্ধের মতো আওয়ামী লীগ ও মুজিবের ভূমিকা, এরশাদ, জিয়া ও বিএনপির শাসনামলের কথা পাঠকের ইন্দ্রিয়গোচরে লেখক এনেছেন।

শতাব্দীর পর শতাব্দী পাশাপাশি বাস করলেও নিজেদের মধ্যে ঘৃণার বাস্তবতা ছিল, এখনো রয়েছে- তারই ফলে হিন্দু-মুসলমানের বিরোধ কখনো কখনো দাঙ্গা হিসেবেও দেখা দিয়েছে। এর বিভিন্ন উদাহরণ, কারণ ও রাজনৈতিক দলগুলোর ব্যর্থতা, ধর্মকে ক্ষমতা পাকা করার হাতিয়ার হিসেবে তা ব্যবহারের দিকগুলো লেখক তুলে ধরেছেন।

ছয়.

‘ব্যক্তিপূজা বনাম গণতন্দ্র’ নামের এই প্রবন্ধটিতে ব্যক্তিপূজা কেন দুর্বল না হয়ে এই সময়েও লোপ না পেয়ে জোরালো হয়েছে, তার ব্যাখ্যা যুক্তিযুক্তভাবে দেয়ার চেষ্টা করেছেন, তার এই অনুচিন্তা থেকে পাঠক হিসেবে আমরাও চিন্তার খোরাক পেয়ে যাই, আমাদেরও চৈতন্যোদয় হয়। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন- ‘রেনেসাঁর সূচনা থেকে যখন ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্য জোরদার হতে থাকে, তখন এর প্রভাব অনেকটা কমে যায়। ব্যক্তিপূজা আরো দুর্বল হয়ে যায় উদারনৈতিকতা, যুক্তিবাদ এবং গণতন্ত্রের বিকাশের ফলে। আধুনিককালে সেটা লোপ পাওয়ারই কথা ছিল। কিন্তু দুর্ভাগ্যক্রমে লোপ পায়নি। কারণ রেনেসাঁ, উদারনৈতিকতা, যুক্তিবাদ এবং গণতন্ত্র সর্বত্র সমানভাবে ছড়িয়ে পড়েনি। বরং যোগাযোগ ব্যবস্থা এবং গণসংযোগের উন্নতির দরুন কোনো কোনো ক্ষেত্রে অতীতের তুলনায় ব্যক্তিপূজা আরো প্রবল হয়েছে। আগে যে ব্যক্তি পূজা হয়তো সীমাবদ্ধ থাকতো কেবল তার নিজের অঞ্চলে অথবা দেশে, এখন তা সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ার সুযোগ পাচ্ছে। স্তালিন অথবা মাওয়ের মতো হিটলার অথবা মুসোলিনির মতো রাজনীতিককে ঘিরে যে পার্সোনালিটি কাল্ট একালে গড়ে উঠেছে, তার কথা সহজেই মনে পড়ে। এমনকি ধর্মীয় নেতাদের নিয়ে এখনো যে পার্সোনালিটি কাল্ট তৈরি হচ্ছে তার কথাও এ প্রসঙ্গে স্মরণ করা যেতে পারে- যেমন, খোমেনি। তবে সৌভাগ্যক্রমে সবাই স্তালিন, হিটলার, মুসোলিনি অথবা মাওয়ের মতো বিরাট রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব হতে পারেন না। তা সত্ত্বেও কাল্ট তৈরির প্রয়াস বন্ধ হয় না।’

লেখক কাল্ট তৈরির প্রয়াস বন্ধ হচ্ছে না বলে আমাদের সংকেত দিয়েছেন, সেটা ঠিক। তবে সোভিয়েত ইউনিয়ন আর চীনের রাজনৈতিক ধারাক্রম পশ্চিম ইউরোপের মতো ছিল না, ছিল না সেখানে সেভাবে গণতান্ত্রিক ঐতিহ্য, যার ফলে এই দুটি দেশ জোরালো পরিবর্তনের ধারায় উপনীত হয়- বিপ্লবের মধ্যে দিয়ে। এরই পটভূমিতে স্তালিন ও মাওয়ের ভূমিকাকে বিভিন্ন দিক থেকে উন্মোচন করে বিবেচনা করতে হবে। স্তালিন ও মাওয়ের বিভিন্ন সীমাবদ্ধতা থাকার পরও, স্তালিনের নেতৃত্বে দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের মিত্রশক্তির বিজয়ের মধ্য দিয়ে মানবজাতি যুদ্ধের গভীর সংকট থেকে উত্তরণ পেয়েছিল, অন্যদিকে চীনের জনগণ তাদের দীর্ঘদিনের বিভিন্নমুখী সংকট থেকে মুক্তি পেয়েছিল, জনগণ দ্বারা তা সমর্থিত হয়েছিল। আমরা জানি, ২০১৭ সালের অক্টোবর বিপ্লব ও চীনের বিপ্লব অনেক পুরনো ধারণা শুধু ভেঙে দেয়নি, নতুন বাস্তবতা তৈরি করে রাজনীতি, অর্থনৈতিক, সামাজিক ও শিল্প-সাহিত্যসহ সংস্কৃতির বিভিন্ন পরিধিতে সুদূরপ্রসারী পরিবর্তনের সূচনা করেছিল, যার প্রভাব সূ² ও মোটাদাগে এখনো প্রবহমান। লেখকের এই প্রবন্ধটি পড়তে পড়তে এসবও মনে হলো। স্তালিন ও মাওয়ের ভূমিকাকে সমালোচনা ও পর্যালোচনার পাশাপাশি তাদের অন্যান্য ঐতিহাসিক ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকাকেও বাজিয়ে দেখা দরকার।

লেখক এই প্রবন্ধের মধ্যে আরো অনেক বিষয় অবতারণা করেছেন, যা আমাদের বিবেচনায় অনেক ক্ষেত্রে যুক্তিযুক্ত মনে হয়- তিনি সংসদ, বিচার বিভাগ ও সংবাদমাধ্যমের দুর্বলতার কারণে একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হতে পারে বলে অভিমত ব্যক্ত করেছেন। তিনি মুজিব ও জিয়া নিয়ে যে এ দেশে কাল্টচর্চা বেড়েছে, তা ব্যাখ্যা করেছেন, সেই সঙ্গে উপমহাদেশে গান্ধীজি, সুভাষ বসু, জিন্নাহ প্রমুখ বড় নেতাকে নিয়ে কাল্ট তৈরি হয়- তাও আলোচনা করেছেন। কাল্টচর্চার ফলে- অন্ধভক্তি, মোসাহেবি, মুনাফা করার সীমাহীন প্রলোভন, আত্মসম্মান-মূল্যবোধ বিসর্জন ও লজ্জাহীন হয়ে ওঠার পটভূমি তিনি উন্মোচন করেছেন।

সাত.

গোলাম মুরশিদের এই গ্রন্থে আর একটি উল্লেখযোগ্য প্রবন্ধ- ‘আদর্শবাদ ও মানুষের সংকট’। এই প্রবন্ধে তিনি বলেছেন, ‘শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে নিজের প্রজ্ঞা দিয়ে আদর্শ গড়ে তুললেও মানুষ আদর্শ মানুষ হয়ে উঠতে পারেনি।’ এই অবলোকন দিয়ে লেখক ‘ধর্মীয় আদর্শবাদ’, ‘মৌলবাদ’, ‘জাতীয়বাদ, সাম্রাজ্যবাদ ও মার্কসবাদ’ আলোচনা করেছেন। এসব আলোচনায় উল্লিখিত মতবাদের মূলত সীমাবদ্ধ হয়ে ওঠার দিকগুলো তুলে ধরেছেন। আদর্শের নামে দ্ব›দ্ব, সংঘাত ও হত্যাকাণ্ড হিংস্রতায় সমস্ত জন্তুকে হারিয়ে দিয়েছে- তারই প্রতিভাস এই প্রবন্ধে গভীরভাবে তুলে ধরেছেন।

‘ধর্মীয় আদর্শবাদ’ শিরোনামের অংশে তিনি উল্লেখ করেছেন- ‘যিশু খ্রিস্ট প্রেমের বাণী প্রচার করলেও, এবং হজরত মুহাম্মদ তাঁর ধর্মের নাম শান্তি রাখলেও, ধর্মের নামে খ্রিস্টান ও মুসলমানদের যুদ্ধ বহু শতাব্দীর। এখনো উভয় ধর্মের অনুসারীরা একে অন্যকে সন্দেহের চোখে দেখে। আর মুসলমান ও ইহুদিদের চরম বিরোধ এখনো বর্তমান। হিন্দু এবং মুসলমানের নিত্য কলহ চলছে উপমহাদেশে। এমনকি সাম্প্রতিককালে ভারতে হিন্দু আর খ্রিস্টানদের মধ্যে তীব্র হানাহানি দেখা দিয়েছে। অপরপক্ষে পড়শি দেশ পাকিস্তানে সহিংসতা দেখা দিয়েছে মুসলমান আর খ্রিস্টানদের মধ্যে।’

উল্লিখিত ভাষ্য তো আমাদের চোখের সামনে ঘটছে, এই সত্যকে তো অস্বীকার করা যাবে না। ধর্মের নামে তালেবানরা, মধ্যপ্রাচ্যের দেশসমূহে মৌলবাদী গোষ্ঠীর লোকেরা আত্মঘাতী হয়ে নিজের ধর্মীয় সম্প্রদায়ের নিরীহ লোকদের প্রতিনিয়ত হত্যা করছে- যুক্তিহীন আর অন্ধভাবে- কী এক অসূয়া নিয়ে!

তবে গণতন্ত্রের নামেও অমানবিক অবস্থা চাপিয়ে দিয়ে আমাদের চোখের সামনে কী ঘটানো হচ্ছে, সেই বিবেচনাবোধ তুলে ধরা জরুরি, না হলে তা শুধু একরৈখিক হয়ে যায় না, পর্যবেক্ষণের দুর্বলতা নিয়ে তা সত্যকে খণ্ডিত করবে। আমেরিকা, ইংল্যান্ড, ফ্রান্সসহ পাশ্চাত্যের দেশগুলো গণতান্ত্রিক কাঠামোর মধ্যেও চললেও, তাদের সরকার প্রধানরা বৈদেশিক নীতিতে শুধু অগতান্ত্রিক নয়; অস্বচ্ছ ও উন্নাসিকভাবে ইচ্ছেমতো ভূমিকা পালন করেছে, যার ফলে আজ আইএসসহ জঙ্গিদের উত্থান হয়েছে। আফগানিস্তান-ইরাক-লিবিয়া ও সিরিয়ায় যুদ্ধ চাপিয়ে দিয়ে গোটা বিশ্বে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি শুধু সৃষ্টি করা হয়নি, দীর্ঘস্থায়ী এক যুদ্ধের মধ্যে গোটা পৃথিবীকে ঠেলে দিয়েছে। উল্লিখিত দেশগুলোর আগ্রাসনের বিরুদ্ধে নিজ দেশে ও দেশের বাইরে জনমত ও বিক্ষোভ থাকলেও, তা তোয়াক্কা না করে লুণ্ঠন আর আগ্রাসনের উদ্দেশ্যে অমানবিক ভূমিকা পালন করেছে তথাকথিত গণতান্ত্রিক দেশগুলোর রাষ্ট্রপ্রধানরা। কিছু দিন আগে সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ার ২০০৩ সালে মার্কিন বাহিনীর নেতৃত্বে ইরাকে সামরিক অভিযান চালানোর সময় যেসব ‘ভুল’ হয়েছিল, তার জন্য তিনি দুঃখ প্রকাশ করেছেন। ওই যুদ্ধের পরিণামেই জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেটের (আইএস) উত্থান হয় বলে তিনি স্বীকার করেন। তিনি আরো বলেন, ‘যে গোয়েন্দা তথ্য আমরা পেয়েছিলাম, তা ভুল ছিল। এ জন্য আমি দুঃখ প্রকাশ করছি। কারণ তিনি (সাদ্দাম) নিজ দেশের জনগণের বিরুদ্ধে ব্যাপকভাবে এবং অন্যদের বিরুদ্ধে রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহার করলেও সেটার মাত্রা আমরা যে রকম ভেবেছিলাম, ঠিক সে রকম ছিল না।’ তাহলে মিথ্যা অজুহাতে ভিন্ন দেশ আক্রমণ করা গণতান্ত্রিক লেবাসে কতটুকু জায়েজ ছিল? এ প্রশ্ন আমাদের। এরই পরিণতিতে আজও হত্যা চলছে, মানবিক বিপর্যয় নেমে আসছে! এর কি কোনো বিচার হবে না? কারা বিচার করবে! এদের হাতে শক্তি ও জাতিসংঘের মতো প্রতিষ্ঠানও। এরা যা করবে, তা জায়েজ হবে!

আট.

এই গ্রন্থের আর একটি উল্লেখযোগ্য ও দীর্ঘ প্রবন্ধ : ‘জানার অধিকার ও সৎ সাংবাদিকতা’। এই প্রবন্ধে সংবাদপত্রের আদিযুগের কথা, উনিশ শতকে সংবাদপত্র ও তার স্বাধীনতার উত্থান, পত্রিকার প্রসার, শিকলে বাঁধা সংবাদপত্র, বাংলা সংবাদপত্র এবং তার খণ্ডিত স্বাধীনতার ইতিহাস, বিভাগোত্তরকালে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা, সংবাদপত্রের স্বাধীনতার ওপর নতুন হুমকি, স্বাধীন সাংবাদিকতা ও বর্তমানে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা- শিরোনামে আলোচনা করা হয়েছে। অনেক তথ্য, অনেক পরিসংখ্যান, বিভিন্ন ঘটনার বিবরণ এই লেখায় রয়েছে। একজন গবেষকের প্রজ্ঞান, কৌতূহল, অনুসন্ধান ও মননশীলতা দিয়ে এই লেখার গভীর তাৎপর্য পাঠকের নিকট উপস্থিত হয়েছে। এটি আর একটি আলাদা গ্রন্থ হয়ে উঠতে পারে।

এই লেখার শেষের কথাটি আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ও প্রাসঙ্গিক, তিনি যথার্থ বলেছেন, আমরাও লেখকের সঙ্গে একমত- কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে : সর্বশক্তিমান সরকারই যদি সংবাদপত্রের শত্রæতা করে, তা হলে তার স্বাধীনতা রক্ষা করবে কে? অথবা সংবাদপত্রের স্বাধীনত কেড়ে নিলে সরকারকে পদস্খলন থেকে রক্ষা করবে কে? সরকার সহযোগিতা না করলে পেন্টাগন অথবা সিআইএও গোপন কেলেঙ্কারি কোন সাহসে পত্রিকায় তুলে ধরবে জনসমক্ষে? এর উত্তরে বলা যায়, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা আইন-আদালত অথবা সংসদের ওপর নয়, তা নির্ভরশীল সচেতন এবং বিবেকবান নাগরিকদের ওপর। সমালোচনার মাধ্যমে, জনমত গঠনের মাধ্যমে তারাই ব্যক্তি-স্বাধীনতা এবং মত-প্রকাশের স্বাধীনতার মতো সংবাদপত্রের স্বাধীনতাকেও সরকারি সঙ্গিনের মুখ থেকে রক্ষা করবেন। কারণ তারা জানেন, যে সমাজ সংবাদপত্রের স্বাধীনতা রক্ষা করতে পারে না, সে সমাজে কেবল সংবাদপত্রের স্বাধীনতা নয়, প্রতিটি মৌল অধিকারই ব্যাহত এবং খর্ব হয়।

নয়.

এই গ্রন্থের শেষ প্রবন্ধটির শিরোনাম ‘মহিলারা ইদানীং’। গোলাম মুরশিদ নারীদের নিয়ে উল্লেখযোগ্য গবেষণা করেছেন। তার এ বিষয়ে দুটি গ্রন্থ হলো ‘সংকোচের বিহ্বলতা’ ও ‘রাসসুন্দরী থেকে রোকেয়া : নারী প্রগতির একশো বছর’। নারীদের নিয়ে তার আধুনিক দৃষ্টিভঙ্গি ও অনুকূলতা ভবিষ্যৎকালের মানবিক সমাজ নির্মাণে প্রেষণা জোগাতে সাহায্য করে, সমাজে মাথা উঁচু করে টিকে থাকার জন্য- নিজের পায়ের ওপর ভর দিয়ে চলার সাহসও জোগায়- নারীদের। তার ভাষ্য থেকে জেনে নিই- ‘গত তিন দশকে বাংলাদেশের মহিলাদের যে অগ্রগতি হয়েছে, তার সংক্ষিপ্ত মূল্যায়ন করতে হলে এ কথা স্বীকার করতেই হবে যে, একটা ঐতিহ্যিক সমাজে যতটা দ্রুত গতিতে মহিলাদের অগ্রগতি হওয়া সম্ভব, বাংলাদেশে তার চেয়ে কম হয়নি। বরং কার্যকারণে কোনো কোনো ক্ষেত্রে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ অনুকূল ঘটনা ঘটায় মহিলাদের পক্ষে তুলনামূলকভাবে সহজে এতটা পথ এগিয়ে আসা সম্ভব হয়েছে।’

প্রবন্ধটি এই গ্রন্থের সবচেয়ে ছোট কলেবরে হলেও আশাজাগানিয়া সামাজিক পরিবর্তনের চিত্র পরিস্ফুট হয়েছে, যা থেকে একটি ভূখণ্ডের জনগোষ্ঠীর অগ্রগতিতে সংবেদী হয়ে উঠতে পারি।

দশ.

গোলাম মুরশিদের ‘উজান স্রোতে বাংলাদেশ’ বইটি দেশলগ্ন ও কালসচেতন শুধু নয়, গভীর সুচিন্তা ও ধীশক্তি নিয়ে বোধ উসকে দেয়ার মতো একটি গ্রন্থ, প্রশ্ন ও সংশয় নিয়েও ইন্দ্রিয়জ্ঞান সমৃদ্ধ করার মতো এই বইয়ের প্রবন্ধসমূহ- বলা যায় নিঃসংশয়ে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

পেশাদার সাংবাদিকতা করেছি, আমি সরকারের সুবিধা নেইনি

রিমান্ড শুনানিতে শ্যামল দত্ত পেশাদার সাংবাদিকতা করেছি, আমি সরকারের সুবিধা নেইনি

১৭ সেপ্টেম্বর: সারাদিন যা যা ঘটলো

১৭ সেপ্টেম্বর: সারাদিন যা যা ঘটলো

শেখ হাসিনার পদত্যাগপত্র কতটা গুরুত্ব বহন করে, কী বলছেন বিশেষজ্ঞরা?

শেখ হাসিনার পদত্যাগপত্র কতটা গুরুত্ব বহন করে, কী বলছেন বিশেষজ্ঞরা?

কবির, নূরুল, তৌফিকসহ আরো যারা গ্রেপ্তার হলেন

কবির, নূরুল, তৌফিকসহ আরো যারা গ্রেপ্তার হলেন

সব খবর

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App