×

সাময়িকী

নজরুলের সাহিত্য

Icon

মো. মহসিন মিঞা

প্রকাশ: ৩০ আগস্ট ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

কবি-সাহিত্যিক ও দার্শনিকরা দিব্যদৃষ্টিসম্পন্ন। তারা তাদের সাধনা ও অভিজ্ঞতা দ্বারা জাতির ভবিষ্যতের পথনির্দেশনা দিয়ে থাকেন। বাঙালি জাতির তেমনই একজন বিখ্যাত কবি হলেন আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম। তিনি ছিলেন বাংলা সাহিত্যের অন্যতম যুগ-স্রষ্টা কবি ও গীতিকার। বাংলা সাহিত্যের বিচিত্র সব ক্ষেত্রে তিনি সাবলীল আর গতিশীল সৃষ্টিকর্মের মাধ্যমে এক উজ্জ্বল-অমøান দৃষ্টান্ত রেখেছেন। তিনি বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে এক আলোকরশ্মি। অন্যদিকে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মনন গঠিত হয়েছিল বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কবি কাজী নজরুল ইসলাম, লালন ও হাসনসহ অনেক কবি-সাহিত্যিক-লেখক-শিল্পীদের প্রাণস্পর্শীয় লেখনী দ্বারা। তাই তার বিশ্বাস ও কাজকর্মে বাংলার জনমানুষ ও প্রকৃতি প্রাধান্য পেয়েছিল। বাংলার মানুষের মুক্তিই ছিল তার ধ্যান-জ্ঞান। সেই মুক্তিই অর্জন করেছিলেন বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্র বিশ্বসভায় প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে।

বাংলাদেশের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম (১৮৯৯-১৯৭৬) ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান (১৯২০-১৯৭৫) দুজনের জন্ম একুশ বছরের ব্যবধানে। দুজনই সর্বকালের শ্রেষ্ঠ বাঙালি। দুজনই স্বপ্নদ্রষ্টা- একজন সাহিত্যে, অন্যজন রাজনীতিতে। দুজনই দ্বিধাহীনচিত্তে স্বদেশের স্বাধীনতা ও মুক্তির কথা বলেছেন। বিদ্রোহী কবি নজরুল বাংলা সাহিত্যে প্রবর্তন করলেন নতুন ধারা, সৃষ্টি করলেন নতুন যুগ। শেখ মুজিব তার সমগ্র জীবনের সংগ্রামের মাধ্যমে ১৯৭১ সালে সৃষ্টি করেন নতুন ইতিহাস। শেখ মুজিব নতুন ইতিহাসের স্রষ্টা। সুতরাং জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম স্বাধীন বাংলার স্বপ্নদ্রষ্টা আর সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীন বাংলাদেশের বাস্তব স্রষ্টা।

নজরুল ছিলেন দেশপ্রেমিক ও মানবপ্রেমিক কবি। পরাধীন দেশকে স্বাধীন করার জন্য তিনি হিন্দু-মুসলমান ও নারী-পুরুষের সমবেত শক্তির কথা তার সাহিত্যে উল্লেখ করেছেন। মানবজীবনের বিভিন্ন দিক ও মানবমনের সূ² অনুভূতি, স্বপ্ন-কল্পনা, আশা-আকাক্সক্ষা, উদ্দীপনা, দেশপ্রেম ও প্রেম-ভালোবাসাকে যেমন তিনি সাহিত্যে রূপ দিয়েছেন, তেমনি জাতির আশা-আকাক্সক্ষার ভাবরূপ ও সাংস্কৃতিক অন্বেষা তার সাহিত্যে মূর্ত হয়ে উঠেছে। বাঙালি জাতির মানস গঠনে তার অবদান অনন্য ও অবিস্মরণীয়। তিনি নিঃসন্দেহে আমাদের জাতীয় জাগরণের অগ্রদূত। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কবি নজরুল সম্পর্কে বলেছেন, ‘নজরুল বাংলার বিদ্রোহী আত্মা ও বাঙালির স্বাধীন ঐতিহাসিক সত্তার রূপকার।’ অর্থনীতিতে নোবেল জয়ী অমর্ত্য সেন কবি নজরুল সম্পর্কে বলেছেন, ‘বাঙালির জাতীয় চেতনার বিকাশে যারা সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রেখেছেন, তাদের অন্যতম কাজী নজরুল ইসলাম।’ তার রচিত সাহিত্য আমাদের জাতীয় চেতনাকে নানাভাবে উজ্জীবিত করেছে এবং জাতীয় জাগরণকে করেছে ত্বরান্বিত। তিনি মূলত কবি হলেও সমগ্র বাঙালি সমাজ, সাহিত্য ও সংস্কৃতির ক্ষেত্রে গভীরভাবে আমাদের সচেতন করেছিলেন।

কবি নজরুলের প্রধান পরিচিতি ‘বিদ্রোহী কবি’ হিসেবে। তার রচিত ‘বিদ্রোহী’র মূল কথা ছিল সব অন্যায়-অবিচার-অত্যাচার-শোষণের অবসান ঘটিয়ে একটি মানবিক ও অসাম্প্রদায়িক সমাজ গঠন। তিনি মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করে কুরআন পাঠ ও অনুবাদ করেছেন। কিশোর বয়সে মাজারের খাদেমগীরি ও মসজিদে ইমামতি করেছেন তিনি। পবিত্র কুরআন থেকে তিনি জেনেছেন, ‘তোমাদের জন্য তোমাদের ধর্ম আর আমার জন্য আমার ধর্ম’ (সুরা কাফেরুন)। অর্থাৎ ধর্মে জোরজবদস্তি নেই।

নজরুল ব্যক্তিগত জীবনে অসাম্প্রদায়িকতার বীজ বপন করেছিলেন। তিনি বিয়ে করেছিলেন এক সনাতনধর্মী নারী আশা লতা সেনগুপ্তাকে; অর্থাৎ প্রমিলা দেবীকে। তিনি কখনো তার স্ত্রীকে নিজ ধর্ম ত্যাগ করতে বলেননি, বরং তিনি তার পুত্রদের নাম রেখেছিলেন- কৃষ্ণ মোহাম্মদ, বুলবুল ওরফে অরিন্দম খালেদ, কাজী সব্যসাচী ও কাজী অনিরুদ্ধ। এগুলো তার ধর্মীয় সহিষ্ণুতা ও অসাম্প্রদায়িক চেতনাকে ধারণ করার ফল। মধ্যযুগের কবি বড়– চণ্ডিদাসের উক্তি, ‘সবার উপরে মানুষ সত্য, তাহার উপরে নাই’ কথারই প্রতিফলন। তিনি সাম্প্রদায়িকতার ঊর্ধ্বে ওঠে মানবিকতাকে বড় করে দেখেছেন। তার আগে কোনো কবি-সাহিত্যিক সুস্পষ্টভাবে অসাম্প্রদায়িক চেতনার কথা উচ্চারণ করেননি।

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান উভয়েই যৌবনকাল থেকেই অন্যায়ের প্রতিবাদ ও মানবসেবায় ছিলেন নিবেদিত প্রাণ। তাদের চারিত্রিক সহজাত বৈশিষ্ট্য ছিল সব ধরনের অন্যায়-অবিচারের প্রতিবাদ করা।

তৎকালীন ভারতের হিন্দু-মুসলমান দুটি প্রধান ধর্মীয় সম্প্রদায় স্বাধীনতার প্রশ্নে ছিল দ্বিধান্বিত। ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গ কার্যকর হওয়ার পর বিষয়টি আরো স্পষ্ট হয়ে ওঠে। কবি নজরুল তার অগ্নি-বীণা কাব্যগ্রন্থে এই সংকট থেকে হিন্দু-মুসলমানকে মুক্তির একটা পথের সন্ধান দেবার চেষ্টা করেছিলেন। তার ‘রণ-ভেরী’, ‘শাত-ইল-আরব’, ‘খেয়া-পারের তরণী’ ও ‘মোর্হরম’-এ কবিতাগুলোতে ইসলামের ইতিহাস ও ঐতিহ্য অনুষঙ্গ হিসেবে এসেছে। এতে ইসলাম ধর্মের শাশ্বত বৈশিষ্ট্য ও মহিমাকীর্তন প্রকাশ পেয়েছে- যা মুসলমানদের আত্মজাগরণের পথ প্রসারিত হয়েছে। অন্যদিকে ‘আগমনী’ ও ‘রক্তাম্বরধারিণী মা’- এ কবিতা দুটিতে হিন্দু ধর্মের পুরাণ-মিথসহ শাশ্বত ধর্মের মহিমাকীর্তনের প্রকাশ ঘটেছে। এর মাধ্যমে হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষদের স্বদেশপ্রেমে উজ্জীবিত করা প্রয়াস পেয়েছেন। ভারতবর্ষের দুটি প্রধান ধর্মীয় সম্প্রদায়ের মানুষের কাছে তাদের স্ব স্ব ধর্মীয় অনুষঙ্গগুলো উপস্থাপনের মাধ্যমে একটি সহাবস্থানের যে দৃষ্টান্ত কবি নজরুল অগ্নি-বীণা-য় প্রকাশ করলেন, একই জীবন ও রাজনৈতিক দর্শন ছিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের। তাই বঙ্গবন্ধু তার ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণে বলেছিলেন, ‘এই বাংলায় হিন্দু-মুসলমান, বাঙালি-অবাঙালি- যারা আছে, তারা আমাদের ভাই।’ একটি দেশের শান্তি-শৃঙ্খলা ও উন্নতির প্রয়োজনে জাতিগত ও রাষ্ট্রীয় সৌভ্রাতৃত্বের জন্য ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবার পারস্পরিক সহাবস্থান নিশ্চিত করা আবশ্যক। স্বাধীন বাংলাদেশে ১৯৭২ সালে প্রণীত সংবিধানের প্রস্তাবনাতেই সব নাগরিক একই আইন দ্বারা পরিচালনার বিষয়টি এবং সংবিধানের দ্বিতীয় ভাগের ১২(ঘ)-তে লিপিবদ্ধ করা হয় ধর্মীয় বৈষম্য বিলোপের ঘোষণা। ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি করলে সম্প্রীতি নষ্ট নয় এবং স্ব স্ব ধর্মের স্বাভাবিক অনুশীলনের মাধ্যমেই শান্তিময় জীবন গঠন করা যায়, এই দর্শনই ছিল বিদ্রোহী কবি নজরুল ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের জীবনদর্শন।

কবি নজরুলের সাহিত্যকর্মে ধর্মের শাশ্বত স্বাভাবিক অনুশীলন ও বিশ্লেষণই প্রতিফলিত হয়েছে। তার কাছে মানব ধর্মই ছিল শাশ্বত ধর্ম, যাতে জাতি-ধর্ম-বর্ণনির্বিশেষে সবাই সমমর্যাদায় অধিষ্ঠিত। কারণ কবি নজরুল উপলব্ধি করেছিলেন, নারী-পুরুষ সবাই একই স্রষ্টার সৃষ্টি। অগ্নি-বীণা কাব্যগ্রন্থের প্রথম কবিতা ‘প্রলয়োল্লাসে’ কবি নজরুল চির-সুন্দরের জয়গান গেয়েছেন। তিনি গভীর প্রত্যয়ের সঙ্গে লিখেছেন, চির-সুন্দরের আগমন ঘটবে এবং সেই অসুন্দরকে ভেঙে নতুন করে গড়বে। কবির ভাষায় : ‘ভেঙে আবার গড়তে জানে সে চির-সুন্দর! তোরা সব জয়ধ্বনি কর!’ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের একনিষ্ঠ ভক্ত ও অনুরাগী ছিলেন। বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে কবি নজরুলের বহুবার সাক্ষাৎ হয়েছিল, কিন্তু কথা হয়নি কখনো। তিনি কবি নজরুলের বহু কবিতা, গান ও প্রবন্ধ-নিবন্ধ পাঠ করেছিলেন। তার কবিতা ও গান বঙ্গবন্ধুর মনন গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল। কবি নজরুল সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠার জন্য পুরাতন-জীর্ণতাকে ভেঙে নতুন করে গড়তে চির-সুন্দরের আহ্বান করেছেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানই ছিলেন সেই চির-সুন্দর। বঙ্গবন্ধুই বিদ্রোহী কবি নজরুলের বহু আকাক্সিক্ষত ও প্রত্যাশিত সেই ‘চির-সুন্দর’, যিনি পাকিস্তানি শাসন-শোষণের নাগপাশ ছিন্ন করে ১৯৭১ সালে আমাদের বাংলাদেশ নামক একটি দেশ উপহার দিয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধু যেই সেøাগানটি দিয়ে প্রতিটি বাঙালিকে স্বদেশের স্বাধীনতার জন্য জীবন উৎসর্গ করতে উদ্বুদ্ধ করেছিলেন, সেই ‘জয় বাংলা’ ধ্বনিটির বীজমন্ত্র ছিল বিদ্রোহী কবি নজরুলের ‘প্রলয়োল্লাস’ কবিতায়। কবির ভাষায় : ‘তোরা সব জয়ধ্বনি কর!’ এই কবিতাটি আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় কবিতা ও গান হিসেবে উপস্থাপিত হয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের অনুপ্রেরণা জুগিয়েছিল। ‘পূর্ণ-অভিন্দন’ কবিতায় মাদারীপুরের পূর্ণচন্দ্রকে নিবেদন করে তিনি লিখেছেন, ‘স্বাগত ফরিদপুরের ফরিদ, মাদারীপুরের মর্দ বীর, বাংলা মায়ের বুকের মানিক, মিলন পদ্মা-ভাগীরথীর।... জয় বাংলার পূর্ণচন্দ্র, জয় জয় আদি-অন্তহীন।’ এখানে পদ্মা আর ভাগীরথী নদীর কথা বলা হলেও এটি মূলত দুটি নদীর তীরে বসবাসকারী ভিন্নধর্মী মানুষের মিলনের আকাক্সক্ষার কথাই বলেছেন। আবার জয় আদি-অন্তহীন বলতেও তিনি সব যুগের সব মানুষের জয়ধ্বনির আশা ব্যক্ত করেছেন। সাংবাদিক ও প্রখ্যাত নজরুল গবেষক অনুপম হায়াতের মতে, স্বাধীন বাংলাদেশের জাতীয় স্লোগান ‘জয় বাংলা’ শব্দটি বঙ্গবন্ধুকে গ্রহণে উদ্বুদ্ধ করেছিল নজরুলের ‘পূর্ণ-অভিন্দন’ কবিতার এই চরণটি থেকে। এভাবেই নজরুল বাঙালি জাতিকে পূর্ব থেকেই অসাম্প্রদায়িক চেতনায় সমৃদ্ধ করেছিলেন। এছাড়াও কবি নজরুলের ‘বাঙালির বাংলা’ প্রবন্ধে বাংলা ও বাঙালির যে জয়সূচকতার কথা লেখা হয়েছিল, সেটিও বঙ্গবন্ধুকে ‘জয় বাংলা’ সেøাগানটি গ্রহণে আগ্রহী করে তুলেছিল। কবি নজরুলের ‘এই আমাদের বাংলাদেশ’ গানটি বঙ্গবন্ধুর মনন গঠনে দারুণভাবে কাজ করেছিল।

আমরা যে স্বাধীনতা লাভ করেছি তার মূলে কোনো সামরিক শক্তি ছিল না, এর মূলে ছিল আমাদের মধ্যকার সামগ্রিক জাতীয় চেতনা এবং এই জাতীয় চেতনা সৃষ্টির মূলে ছিল নজরুলের সাহিত্যকর্ম। বাংলাদেশের সৃষ্টিও ছিল একটি গণবিপ্লবের ফল। অন্যসব গণবিপ্লবের মতোই বাংলাদেশ-বিপ্লবের শক্তির উৎস ছিল গণমানসের জাগরণ ও সচেতনতা। বাংলার জনমনে এই জাগরণ ও সচেতনতার প্রেরণা দিয়েছিল নজরুলের সংগীত, কবিতা ও সাহিত্য। যেমন তিনি বলেছেন, ‘এই পবিত্র বাংলাদেশ, বাঙালির- আমাদের।... বাঙলা বাঙালির হোক! বাঙলার জয় হোক! বাঙালির জয় হোক।’ এরই প্রতিধ্বনি পাওয়া যায়, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১৯৭১ সালের ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণে ‘...প্রত্যেক ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোল, ...সাত কোটি মানুষকে দাবায়ে রাখতে পারবা না।’ বঙ্গবন্ধুর এই ভাষণটি আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় নজরুলের সেই বিখ্যাত ‘বিদ্রোহী’ কবিতার উক্তিটি, ‘বল বীর, চির উন্নত মম শির,/শির নেহারি আমারি নত শির ঐ শিখর হিমাদ্রির।’ বিদ্রোহী কবির চির উন্নত শির-এর জীবন্ত চিত্রকল্প ১৯৭১ সালের ৭ মার্চের জনসভায় বঙ্গবন্ধুর উন্নত শির, উদ্যত হস্ত ও তর্জনী এবং বিদ্রোহীর জীবন্ত প্রতিকল্প সেই সিংহ গর্জন ‘...রক্ত যখন দিয়েছি, রক্ত আরো দেবো, এই দেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়ব, ইনশাআল্লাহ। এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম। জয় বাংলা।’ ৭ মার্চের জনসভায় বঙ্গবন্ধু কবি নজরুলের কবিতার মহাবিদ্রোহীর প্রতিমূর্তি। নজরুল ব্যক্তিকেন্দ্রিক জাগরণের আহ্বান জানালেন, অন্যদিকে বঙ্গবন্ধু সামষ্টিকভাবে জাতিকে জাগরণের আহ্বান জানালেন। উভয়েরই লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য এক ও অভিন্ন- মুক্তি এবং স্বাধীনতা।

১৯৭১ সালের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের অন্যতম স্লোগান ছিল ‘জয় বাংলা’। কবি নজরুলের ‘বাংলার জয়’ আর বঙ্গবন্ধুর ‘জয় বাংলা’ এক ও অভিন্ন উৎস থেকে উৎসারিত। এই জয় বাংলা স্লোগানটি সমস্ত বাঙালির মূলমন্ত্র এবং মুক্তিযুদ্ধের অনুপ্রেরণা ছিল। নজরুলের স্বপ্ন শেখ মুজিবে এসে বাস্তব রূপ লাভ করেছে। অর্থাৎ আমরা একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র বাংলাদেশ পেয়েছি। মূলত নজরুল-সাহিত্যে ‘বাঙলা বাঙালির হোক! বাঙলার জয় হোক! বাঙালির জয় হোক।’ আর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের ভাষণে ‘জয় বাংলা’র সূত্রে নজরুল ও শেখ মুজিব যেন এক অভিন্ন সত্তা। তাদের এই দুটি উক্তি আমাদের জাতীয় চেতনাকে জাগরিত করে তুলতে সক্ষম হয়েছিল।

সুতরাং তারা উভয়েই চেয়েছিলেন মানুষের সহজাত অধিকার ও মর্যাদা। মানুষের অর্থনৈতিক, সামাজিক ও রাজনৈতিকসহ সব ধরনের মুক্তি।

অতএব, এ কথা নির্দ্বিধায় বলা যায়, কবি নজরুলের সাহিত্যকর্ম উজ্জীবিত ও প্রেরণা জুগিয়েছিল সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। কারণ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুরও স্বপ্ন ছিল অসাম্প্রদায়িক, বৈষম্যহীন, শোষণমুক্ত ও শান্তিপূর্ণ সমাজ প্রতিষ্ঠার। বঙ্গবন্ধুর সে স্বপ্নের গোড়া পত্তন হয়েছিল স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশে।

পরিশেষে, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম ও সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবনে মানুষ ও দেশের প্রতি যে অপরিসীম ত্যাগের মহিমা তা সব বাঙালির মাঝে সঞ্চারিত হোক- এটি আমাদের একান্ত কামনা।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে সক্রিয় ডিএমপি ট্রাফিক বিভাগ

সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে সক্রিয় ডিএমপি ট্রাফিক বিভাগ

প্রকল্পের সব তথ্য ওপেন থাকবে: প্রধান উপদেষ্টা

প্রকল্পের সব তথ্য ওপেন থাকবে: প্রধান উপদেষ্টা

একনজরে বাংলাদেশ-ভারত সিরিজের পূর্ণাঙ্গ সূচি

একনজরে বাংলাদেশ-ভারত সিরিজের পূর্ণাঙ্গ সূচি

কমতে শুরু করেছে পেঁয়াজের দাম

কমতে শুরু করেছে পেঁয়াজের দাম

সব খবর

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App