×

পাঠকের কলাম

বজ্রপাত থেকে বাঁচতে সচেতন হই

Icon

প্রকাশ: ০৯ মে ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

বজ্রপাত থেকে বাঁচতে সচেতন হই
বজ্রপাত বলতে আকাশের আলোর ঝলকানিকে বোঝায়। এই সময় ওই এলাকার বাতাসের প্রসারণ এবং সংকোচনের ফলে আমরা বিকট শব্দ শুনতে পাই। এটি মহান আল্লাহর শক্তি নিদর্শনগুলোর মধ্যেও একটি। প্রাকৃতিক ঘটনাগুলোর মধ্যে বজ্রপাত খুব পরিচিত, সুন্দর, রহস্যময় এবং একই সঙ্গে আতঙ্কের। এলাকাভেদে গ্রামীণ পরিভাষায় এ বজ্রপাতকে ‘বাজ’ কিংবা ‘ঠাডা’ বলা হয়ে থাকে। লক্ষণীয় বিষয়, বজ্রপাতের সময় আগে আলো দেখা যায় এবং পরে শব্দ শোনা যায়! আলো এবং শব্দের বেগের পার্থক্যের কারণে এমনটা দেখা যায়। আলোর বেগ শব্দের বেগের চেয়ে অনেক অনেক বেশি। সাধারণত দেশে এপ্রিল-মে মাসে বজ্রপাত শুরু হয়। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় এবং বেসরকারি সংগঠন ডিজাস্টার ফোরামের তথ্যমতে, বাংলাদেশে প্রতি বছর গড়ে বজ্রপাতে ২৬৫ জনের মৃত্যু হয়। এর মধ্যে ৭০ শতাংশই মাঠে থাকা কৃষক, সাড়ে ১৪ শতাংশ বাড়ি ফেরার পথে আর ১৩ শতাংশ গোসল কিংবা মাছ শিকারের সময়। শহরের চেয়ে গ্রামাঞ্চলে প্রাণহানির সংখ্যা বেশি হয়। বিশেষজ্ঞদের মতে বায়ুদূষণ, জলবায়ু পরিবর্তন, বিশ্ব উষ্ণতা বৃদ্ধি, নির্বিচারে বৃক্ষনিধন, কৃষিতে ভারি ধাতব যন্ত্রাংশ ব্যবহারের কারণে বজ্রপাতের দুর্ঘটনা ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাই বজ্রপাতকে মোটেও হালকাভাবে নেয়ার সুযোগ নেই। বজ্রপাতের হাত থেকে রক্ষা পেতে সামাজিক সচেতনতার বিকল্প নেই। আসুন, জেনে নেয়া যাক বজ্রপাতে করণীয় : ১. এপ্রিল-মে মাসে বজ্রপাত বেশি হয়। তাই এ সময় নিরাপদ থাকার জন্য সতর্কতা অবলম্বন করুন। ২. আকাশে ঘন কালো মেঘ দেখা দিলে জরুরি প্রয়োজনে রাবারের জুতা পরে বাইরে বের হতে পারেন। ৩. বজ্রপাতের সময় খোলা জায়গা, খোলা মাঠ বা জলাশয়ের অতি নিকটে থাকবেন না। ৪. বজ্রপাতের সময় গাড়ির ভেতরে অবস্থান করলে, গাড়ির ধাতব অংশের সঙ্গে শরীরের সংযোগ ঘটাবেন না। সম্ভব হলে গাড়িটি নিয়ে কোনো কংক্রিটের ছাউনির নিচে আশ্রয় নিন। ৫. যত দ্রুত সম্ভব দালান বা কংক্রিটের ছাউনির নিচে আশ্রয় নিন। ৬. উঁচু গাছপালা, বৈদ্যুতিক খুঁটি, তার, ধাতব খুঁটি, মোবাইল টাওয়ার থেকে দূরে থাকুন। ৭. বজ্রপাতের সময় বাড়িতে থাকলে জানালার কাছাকাছি বা বারান্দায় থাকবেন না। ঘরের ভেতর বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম ব্যবহার থেকে বিরত থাকুন। ৮. বজ্রপাতের সময় জরুরি প্রয়োজনে প্লাস্টিকের বা কাঠের হাতলযুক্ত ছাতা ব্যবহার করুন। ৯. বজ্রপাতের সময় শিশুদের খোলা মাঠে খেলাধুলা থেকে বিরত রাখুন, নিজেও বিরত থাকুন। ১০. বজ্রপাতের সময় মাছ ধরা বন্ধ রেখে, নৌকার ছাউনির নিচে অবস্থান করুন। ১১. বজ্রপাতে আহতদের চিকিৎসকের মতো সিপিআর দিতে হবে। ১২. খোলা জায়গায় কোনো বড় গাছের নিচে অবস্থান করা যাবে না, গাছ থেকে অন্তত ৪ মিটার দূরে থাকতে হবে। ১৩. বজ্রপাতের সময় বাড়ির ধাতব কল/টেপ, সিঁড়ির ধাতব রেলিং, পাইপ ইত্যাদি স্পর্শ করবেন না। ১৪. প্রতিটি ভবনে বজ্র নিরোধক দণ্ড স্থাপন নিশ্চিত করুন। ১৫. খোলা স্থানে অনেকে একত্রে থাকাকালীন বজ্রপাত শুরু হলে প্রত্যেকে ৫০-১০০ ফুট দূরে দূরে অবস্থান করুন। ১৬. কোনো বাড়িতে যদি পর্যাপ্ত নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা না থাকে, তাহলে সবাই এক কক্ষে না থেকে ভিন্ন ভিন্ন কক্ষে অবস্থান করুন। ১৭. বৈদ্যুতিক খুঁটি ও ছেঁড়া তার থেকে দূরে থাকুন। বজ্রপাতের সময় বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি, লাইন থেকে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করুন। সরকারের উচিত বজ্রপাতকে গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করে এ ব্যাপারে গবেষণা ও জনসচেতনতা বাড়ানো। বজ্রপাতে ক্ষয়ক্ষতি হ্রাসে পরিবেশ দূষণ রোধ, তালগাছ ও খেজুর গাছ রোপণ, গণমাধ্যমে সতর্কবার্তা ঘন ঘন প্রচারের মাধ্যমে জনগণকে সচেতন করা এবং বজ্রপাত নিরোধক যন্ত্র তথা আর্থিং স্থাপনসহ কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন মনে করি। বজ্রপাত সম্পর্কে জানা এবং করণীয় বিষয়ে সচেতনতাই পারে বজ্রপাতের হাত থেকে প্রাণহানি কমাতে। মো. সাইমুন : লেখক, দোহাজারী, চট্টগ্রাম।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App