×

পাঠক ফোরাম

পৃথিবীর শেষ মানুষ

Icon

অলোক আচার্য

প্রকাশ: ১৯ আগস্ট ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

পৃথিবীর শেষ মানুষ

ধাতব যন্ত্রপাতিতে ঠাসা এয়ার টাইট চমৎকার হলরুম। ভেতরে চমৎকার পরিবেশ। হলরুমের প্রতিটি চেয়ার পূর্ণ হয়েছে অনেক আগেই। কেউ কথা বলছে না। সবাই অপেক্ষা করছে। সবার ভেতরেই তীব্র উত্তেজনা বিরাজ করছে। কিন্তু কারো চোখে-মুখেই সেই উত্তেজনার লেশ মাত্র নেই। এ সময়ের মানুষরা উত্তেজনা সহজেই সহ্য করতে পারে। সেভাবেই তাদের মস্তিষ্ক তৈরি করা আছে। এই হলরুমে সাহিত্যে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় পুরস্কার বিজয়ীর নাম ঘোষণা করা হবে আজ। এখানে যারা উপস্থিত হয়েছেন তারা সবাই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন মানুষ। শুধু একজনই আছেন যিনি প্রকৃত মানুষ। যন্ত্রবিহীন পূর্ণাঙ্গ মানুষ। তিনি হলেন অ্যালান দিয়েল।

আজ থেকে বহু বছর আগেই পৃথিবীর সব মানুষের মস্তিষ্কের ভেতর কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার চিপ ঢুকিয়ে দেয়া হয়েছে। এখন জন্মের পরপরই বাধ্যতামূলকভাবে শিশুর মস্তিষ্কে অস্ত্রোপচার করে একটি চিপ বসিয়ে দেয়া হয়। এই চিপ শিশুর মস্তিষ্কের প্রধান বুদ্ধিমত্তার স্নায়ুকোষের সঙ্গে সংযুক্ত থাকে। এর আসলে প্রয়োজন হতো না, যদি না মানুষের তৈরি রোবট একসময় মানুষের বুদ্ধিমত্তাকে ছাড়িয়ে যেত। ফলে একরকম বাধ্য হয়েই পৃথিবীর মানুষকে এটা করতে হয়েছে। কেন্দ্রীয় কম্পিউটারের সঙ্গে প্রতিটি চিপের সংযোগ দেয়া থাকে। ফলে এখন আর ব্যক্তিগত বিষয় বলে কিছু নেই। প্রতিটি মানুষকে গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করতে পারে কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা বাহিনী।

আইন অনুযায়ী পৃথিবীর সব মানুষ স্বেচ্ছায় যার যার মস্তিষ্কে বসিয়েছে। যদিও সত্যিকার অর্থে এটাকে স্বেচ্ছায়ও বলা যায় না। শুধু একজন মানুষ আছেন যিনি এখনো তার মস্তিষ্কে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ঢোকাতে রাজি হননি। তাকে বহুবার বোঝানোর পরেও তিনি তা করতে রাজি হননি। ঠিক এই কারণে তাকে সরকারি উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার পদ হারাতে হয়েছে। পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন রাখা হয়েছে। কঠিন শারীরিক শাস্তি দেয়া হয়েছে। তাতে কোনো সমস্যা নেই। তিনি হাসিমুখে সবকিছু সহ্য করেছেন। কারণ তিনি এই গ্রহের সবচেয়ে বড় লেখক। প্রতি বছর এই পুরস্কার তিনিই পান। কারণ মানুষের পক্ষ থেকে তিনিই একমাত্র কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার বাইরে।

এতদিনও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহিত্য বিবেচনার জন্য নেয়নি কর্তৃপক্ষ। কিন্তু এবারের পরিস্থিতি ভিন্ন। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন একশ সাহিত্যিক এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়েছে। প্রতিবাদে তারা অ্যালানের সাহিত্য তাদের রচিত সাহিত্যের সঙ্গে একসঙ্গে প্রতিযোগিতায় রাখার অনুরোধ জানিয়েছেন। কর্তৃপক্ষ এবার তাদের সেই আবেদনে সাড়া দিয়েছেন। এ বছর যে অ্যালান সাহিত্য পুরস্কার পাচ্ছেন না সে খবর ইতোমধ্যেই ছড়িয়ে গেছে। তবুও তিনি এসেছেন। তাকে জায়গা দেয়া হয়েছে সামনের সারিতে। তিনি বেশ গম্ভীর মুখে বসে আছেন। এখন থেকে আর কোনো মানুষ তার লেখালেখির জন্য পুরস্কার পাবে না। সব চলে যাবে এসব যন্ত্র মানুষের হাতে! কি আশ্চর্য পৃথিবী! তিনি ভুলক্রমে হলরুমে একদলা থু থু ফেললেন। যদিও এটা মারাত্মক ধরনের অপরাধ। তবে তাকে কিছু বলা হলো না। তিনিই এখন শ্রেষ্ঠ সাহিত্যিক মানুষ। পৃথিবীর শেষ মানুষ।

একটু পরেই সুন্দর গোলগাল ধরনের একজন হাসি হাসি মুখ করে মঞ্চে উঠলেন। কথা বলার মাইক্রোফোনের দিকে এগিয়ে গেলেন। তারপর বলতে শুরু করলেন, ‘উপস্থিত পৃথিবীর সাহিত্যিকবৃন্দ, আপনাদের এই অনুষ্ঠানে স্বাগত। আপনাদের কাছে আমি প্রথমেই দুঃখ প্রকাশ করছি, কারণ অনুষ্ঠান শুরু করতে আমাদের শূন্য দশমিক পাঁচ তিন সেকেন্ড দেরি হয়েছে। প্রথমেই আপনাদের স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি যে প্রতিবছর সাহিত্যে পৃথিবীতে একজনকে শ্রেষ্ঠ সাহিত্যিককে সম্মানিত করা হয়। এতদিন এই পুরস্কার দেয়া হয়েছে শুধু একজন মানুষকে। কারণ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার এই যুগে সবাই অর্ধেক যন্ত্র অর্ধেক মানুষ। মানে আমরা কেউই পুরোপুরি অর্থে মানুষ নই। শুধু একজনই ছিলেন বা আছেন যিনি এখনো পুরোপুরি মানুষ।

এ কথা বলতে বলতে মনে হলো তার গলা একটু ধরে এলো! আশ্চর্য! এই আবেগ তো থাকার কথা না! অ্যালান অবাক হলেন। মাইক্রোফোনে আবার ভেসে আসতে লাগল, ‘সুতরাং এতদিন তার হাতেই এই পুরস্কার তুলে দেয়া হয়েছে। কিন্তু এ বছর একশ জন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন মানুষ যারা তুখোড় সাহিত্য চর্চা করছেন তারা একটি প্রতিবাদ জমা দিয়েছেন। যেখানে তারা দাবি করেছেন তাদের রচনা করা সাহিত্যও বিবেচনায় আনা উচিত। আমরা সবদিক খতিয়ে দেখে সিদ্ধান্ত নিয়েছি এ বছর আর একতরফাভাবে পুরস্কার দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হবে না। সাহিত্য তা যেই সৃষ্টি করুন আমরা তার সাহিত্য বিবেচনায় সেরা সাহিত্যিক নির্বাচিত করেছি। ইতোমধ্যেই আমরা সেই সাহিত্যিকের নাম পেয়ে গেছি। এবং আমরা আনন্দের সঙ্গে জানাচ্ছি যে, এবার শ্রেষ্ঠ সাহিত্যিকের মুকুট পরছেন একজন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন লেখক।’

এ কথা ঘোষণা হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই নীরব থাকা হলরুমে বিপুল শব্দ করে করতালি পড়তে লাগল। ঘোষক আবার বলতে লাগলেন, ‘আমরা এ কারণে মি. অ্যালান দিয়েলের কাছে আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করছি। তবে তার নাম ইতিহাসের পাতায় লেখা থাকবে। কারণ তিনিই হলেন পৃথিবীর মানব সভ্যতার ইতিহাসে শেষ সাহিত্যিক। আমরা তাকে সম্মান করি।’

ঘোষণা শেষ হতেই সবাই উঠে দাঁড়াল। পৃথিবীর শেষ মানুষকে সম্মান জানানোর জন্য এক মিনিট দাঁড়িয়ে থাকল।

তার কয়েক বছর পর অ্যানাল দিয়েল মারা যাওয়ার পর তার লেখাগুলো সব নষ্ট করা হলো। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার যন্ত্র মানুষগুলো সিদ্ধান্ত নিল তারা তাদের পৃথিবীতে কোনো মানুষের লেখা রাখবে না। সেখানে থাকবে শুধুই যন্ত্র মানুষের লেখা।

:: বেড়া, পাবনা

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

ফেনীতে ছাত্র হত্যা: ছাত্রলীগ নেতা রিফাত গ্রেপ্তার

ফেনীতে ছাত্র হত্যা: ছাত্রলীগ নেতা রিফাত গ্রেপ্তার

আসাদুজ্জামান নূর ও মাহবুব আলীকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ

আসাদুজ্জামান নূর ও মাহবুব আলীকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ

হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) জন্মদিন পালন নিয়ে যা ভাবছেন যুবকরা

হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) জন্মদিন পালন নিয়ে যা ভাবছেন যুবকরা

‘তুমি কে, আমি কে, রাজাকার রাজাকার’ স্লোগান বিকৃতির প্রতিবাদ

‘তুমি কে, আমি কে, রাজাকার রাজাকার’ স্লোগান বিকৃতির প্রতিবাদ

সব খবর

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App