গোলটেবিল বৈঠক
আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব ভিত্তিক নির্বাচন পদ্ধতির দাবি সুজনের
প্রকাশ: ৩০ আগস্ট ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
কাগজ প্রতিবেদক : রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বভিত্তিক নির্বাচন পদ্ধতি প্রবর্তন, নারীদের জন্য এক-তৃতীয়াংশ আসন সংরক্ষণ এবং দ্বি-কক্ষ বিশিষ্ট পার্লামেন্ট গঠনের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়ার দাবি জানিয়েছে সুজন- সুশাসনের জন্য নাগরিক। একই সঙ্গে নির্বাচন কমিশন গঠনের আইন যথাযথ করা ও সেনাবাহিনীকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংজ্ঞায় অন্তর্ভুক্ত করারও প্রস্তাব দিয়েছে সুজন।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর দ্য ডেইলি স্টার ভবনে ‘বাংলাদেশ নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কারে করণীয়’ শীর্ষক এক গোলটেবিল বৈঠক থেকে এই দাবি জানানো হয়।
সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদারের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার বিচারপতি আব্দুর রউফ, সুজন নির্বাহী সদস্য তোফায়েল আহমেদ, সুজনসহ সম্পাদক জাকির হোসেন, নির্বাহী সদস্য অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস, ইসির সাবেক কর্মকর্তা জেসমিন টুলী, ফেমার সাবেক প্রেসিডেন্ট মুনিরা খান, সাংবাদিক আবু সাঈদ খান, নির্বাচন বিশেষজ্ঞ ড. আব্দুল আলীম, সাংবাদিক ও কবি সোহরাব হোসেন, প্রযুক্তিবিদ ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সুজনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী দিলীপ কুমার সরকার।
বিচারপতি আব্দুর রউফ বলেন, স্থানীয় ভোটারদের কাছে নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্ব অর্পণ করলে অবশ্যই নির্বাচন সুষ্ঠু হবে। তবে রাজনৈতিক দলগুলোর দল পরিচালনায় গণতান্ত্রিক কর্মকাণ্ড অনুসরণের বাধ্যবাধকতা থাকতে হবে। দলের ভেতরে গণতন্ত্র চর্চা না থাকলে, মাঠপর্যায়ে নির্বাচনে গণতান্ত্রিক ধারা বহাল রাখা সম্ভব হবে না। নির্বাচনে যতদিন পর্যন্ত নমিনেশন বাণিজ্য বজায় থাকবে ততদিন এদেশে কোনো সুষ্ঠু নির্বাচন হবে না বা হতে পারে না। তিনি বলেন, তৃণমূল পর্যায়ে ভোটাররা দলকে ভোট দেবে, তাদের মনোনীত প্রার্থীকে নয়। প্রাপ্ত ভোটের আনুপাতিক হারে তারা সংসদের জন্য তাদের মনোনীত ব্যক্তিকে পাঠানোর ব্যবস্থা করবেন। ভোট না দেয়ার জন্য জরিমানার ব্যবস্থা করা যেতে পারে।
ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, একতরফা নির্বাচন কোনো নির্বাচন নয়। কারণ নির্বাচন মানেই বিশ্বাসযোগ্য বিকল্প থেকে বেছে নেয়া। লেজুড়বৃত্তির ছাত্র রাজনীতি বন্ধ করা এবং ভোটার তালিকায় জেন্ডার গ্যাপ কমানোর ব্যাপারে যথাযথ পদক্ষেপ নেয়া দরকার বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
ড. তোফায়েল আহমেদ বলেন, আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বভিত্তিক নির্বাচন পদ্ধতির কিছু দুর্বলতা থাকলেও এটিই তুলনামূলক ভালো পদ্ধতি। পৃথিবীর ৯৭টি দেশে এই পদ্ধতিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। জবাবদিহির কাঠামো প্রতিষ্ঠার জন্য দ্বি-কক্ষবিশিষ্ট সংসদীয় কাঠামো প্রতিষ্ঠিত করার দাবি জানান তিনি। তিনি বলেন, নির্বাচন আয়োজনে কমিশনের ভূমিকা সর্বোচ্চ ২০ শতাংশ। তাই যতই শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন গঠন করা হোক না কেন, নির্দলীয় সরকার ও নিরপেক্ষ প্রশাসন ছাড়া সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়।
আবু সাঈদ খান বলেন, বর্তমানে ওয়েস্টমিনস্টার পদ্ধতিতে অনুষ্ঠিত নির্বাচনের কার্যকারিতা নেই। তাই জনআকাক্সক্ষার ভিত্তিতে আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বভিত্তিক নির্বাচন পদ্ধতি প্রবর্তনের কথা চিন্তা করতে হবে।
মুনিরা খান বলেন, রাজনৈতিক দল ও ভোটারদের মধ্যে যদি সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যাপারে সদিচ্ছা না থাকে, তাহলে সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন করা যায় না। নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন এবং প্রয়োজনীয় সংস্কারের পরই নির্বাচন আয়োজন করা দরকার। অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন না করলে তার কী করুণ পরিণতি হয় তা রাজনৈতিক দলগুলোর ভেবে দেখা দরকার। ক্ষমতার ভারসাম্য রক্ষার জন্য জবাবদিহির কাঠামো প্রতিষ্ঠা করা দরকার। জেসমিন টুলী বলেন, ১৯৯১ সালে এখনকার মতো নির্বাচনী আচরণবিধি ছিল না। কিন্তু সেই নির্বাচন সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য হয়েছিল। সরকার ও প্রশাসন নিরপেক্ষ না হলে সুষ্ঠু নির্বাচন করা সম্ভব হয় না।
ড. আব্দুল আলীম বলেন, আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বভিত্তিক নির্বাচন পদ্ধতি প্রবর্তন করা হলে প্রার্থীর গুণগত মান বাড়বে।
মূল প্রবন্ধে দিলীপ কুমার সরকার বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে জনগণের প্রত্যাশা রাষ্ট্রব্যবস্থার গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার তথা রাষ্ট্র সংস্কারের পর একটি অবাধ, নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন করে নির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমতা অর্পণ করা।
সুজনের দেয়া নির্বাচন ব্যবস্থার গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার প্রস্তাবগুলোর মধ্যে আছে- আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বভিত্তিক নির্বাচন পদ্ধতি প্রবর্তন, নারীদের জন্য এক-তৃতীয়াংশ আসন সংরক্ষণ এবং উক্ত আসনে প্রত্যক্ষ নির্বাচনের ব্যবস্থা করা। মনোনয়ন বাণিজ্য বন্ধে কঠোর আইন, ভোটাররা অপছন্দের প্রার্থীদের বর্জনের জন্য ‘না’ ভোটের বিধান পুনঃপ্রবর্তন, সংরক্ষিত আসনের প্রার্থীদের হলফনামা দিতে বাধ্যবাধকতা সৃষ্টি ও প্রকাশ করা, ভোটার তালিকা নিখুঁত ও জেন্ডার গ্যাপ কমানো ইত্যাদি।