দশ বছর পর সালাহউদ্দিন চকরিয়ায়
‘আইনের শাসন কায়েম করা হবে’
প্রকাশ: ২৯ আগস্ট ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
মিজবাউল হক, চকরিয়া (কক্সবাজার) থেকে : বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, আমি আপনাদের সামনে ভাষণ দিতে আসিনি, বক্তব্য দিতে আসিনি, জুলুম নির্যাতন নিপাত করার ঘোষণা দিতে এসেছি। আজ থেকে এইদেশে জুলুমের অবসান হলো। কেউ নির্যাতন করতে পারবে না। এমনকি দলের নেতাকর্মীরাও অন্য দলের নেতাকর্মীদের অত্যাচার-নির্যাতন করতে পারবে না। আইনের শাসন কায়েম করা হবে।
দীর্ঘ দশ বছর পর সালাহউদ্দিন আহমদের নিজ জন্মভূমি কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলায় আগমন উপলক্ষে চকরিয়া উপজেলা বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের উদ্যোগে উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক এনামুল হকের সভাপতিত্বে গতকাল বুধবার বিকাল ৩টায় পৌরবাস টার্মিনালের বিশাল জনসভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ এসব কথা বলেন। তিনি আরো বলেন, এইদেশে আইনের শাসনের মাধ্যমে শত-সহস্র শহীদের স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করা হবে। বৈসষ্যহীন দেশ গড়ে তোলা হবে। যে দেশে বৈষম্য থাকবে না, সেই দেশে নাগরিকরা তাদের অধিকার ভোগ করবে।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ করে সালাহউদ্দিন বলেন, আজকে কথিত স্বৈরচার শেখ হাসিনা কোথায়? দিল্লীতে বসে আছে, যদি দেখার সুযোগ হয় কক্সবাজার এসে দেখে যান, এত আনন্দ, এত উল্লাস, এত আবেগ, কিসের জন্য, শুধু স্বৈরচার পতনের জন্য, প্রকৃত স্বাধীন গণতান্ত্রিক দেশের জন্য। এইদেশে যাতে আর কোনোদিন স্বৈরচারীর জন্ম না হওয়ার জন্য।
গণহত্যা করার পর আওয়ামী লীগের নামে কোনো রাজনীতি হবে না। গণহত্যার দায় স্বীকার করে ক্ষমতা প্রার্থনা করা হলে এরপরও তাদের বিচার নিশ্চিত করা হবে। আর্ন্তজাতিক মানবতাবিরোধী অপরাধ আদালতে শেখ হাসিনা ও ফ্যাসিবাদী সরকারের সহযোগীদের বিচার করা হবে। তিনি আরো বলেন, ১৯৭৫ সালে বাংলাদেশের জনগণ একটি বিচার দেখেছে? সেটা তাদের মনে রাখা উচিত ছিল। কিন্তু তারা মনে রাখে না। যারা বিগত সময়ে সংবিধানকে কাটছাঁট করে আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্র বানিয়েছিল, সেই সংবিধানকে জনগণের জন্য গণতান্ত্রিক সরকারের সংবিধান বানানো হবে। আপনারা বাংলাদেশি পরিচয়ে বসবাস করবেন। কিন্তু হিন্দু, মুসালমান, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান কাউকে ভেদাভেদ করব না। সবাই এই দেশের নাগরিক। কিন্তু কেউ সংখ্যালঘু হবে না। সবাই বাংলাদেশি। মুক্ত গণতান্ত্রিক বাংলাদেশে, স্বাধীনভাবে বসবাস করবে।
সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, আমাদের বিজয় চূড়ান্তভাবে অর্জিত হয়নি। যেদিন গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচনের মধ্যদিয়ে একটি রাজনৈতিক সরকার প্রতিষ্ঠা হবে, সেইদিন আমাদের চূড়ান্ত বিজয় অর্জন হবে।
তিনি হুঁশিয়ার করে বলেন, এখনো আর্ন্তজাতিক ও আভ্যন্তরীণ ষড়যন্ত্র চালু আছে, আওয়ামী লীগের দোসরা দেশে ষড়যন্ত্র করছে। শেখ হাসিনা দিল্লীতে বসে ষড়যন্ত্র করছে, তাকে টেনে হেঁচড়ে দেশে এনে বিচার করা হবে। প্রত্যেকটা গুলির বিচার হবে। কেউ আইন হাতে তুলে নেবেন না। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এতদিন স্বৈরচারীর দোসর হিসেবে কাজ করেছেন। আমরা আপনাদের ক্ষমা করে দিয়েছে। নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বলেন, আপনারা অধিকার প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত রাজপথে আন্দোলন চালিয়ে যাবেন। আপনাদের অধিকার যাতে ছিনিয়ে নিতে না পারে সেজন্য সজাগ থাকবে হবে। ভবিষ্যতের সরকার যাতে স্বৈরচার না হয় সেদিকে সজাগ থাকতে হবে।
এর আগে দীর্ঘ ১০ বছর পর নিজ জন্মভূমি কক্সবাজারে আসেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী সালাহউদ্দিন আহমেদ।
গতকাল বেলা ১১টা ৪২ মিনিটে কক্সবাজার বিমানবন্দরে এসে পৌঁছান তিনি। তার আগমনকে ঘিরে কক্সবাজার বিমানবন্দর থেকে রামু, চকরিয়া ও নিজ উপজেলা পেকুয়া পর্যন্ত সেজেছে নতুন সাজে।
এদিকে সালাউদ্দিন আহমেদকে একনজর দেখতে সকাল ৯টা থেকেই বিমানবন্দরে আসতে শুরু করে মানুষ। পুরুষের পাশাপাশি নারীদের উপস্থিতিও ছিল চোখে পড়ার মতো। এ সময় ফেস্টুন, ব্যানার ও বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে নেচে-গেয়ে সালাউদ্দিনকে শুভেচ্ছা জানাতে সেøাগান দিতে থাকেন তারা। প্রিয় নেতাকে বরণ করতে অসংখ্য মানুষ বিমানবন্দরে উপস্থিত ছিলেন। কোথাও যেন তীল ধরনের ঠাঁই ছিল না। বিমানবন্দর থেকে কলাতলী পর্যন্ত ১০ কিলোমিটার পর্যন্ত মানুষ আর মানুষ।
এরপর সেখান থেকে দুপুর ৪টায় চকরিয়া বাস টার্মিনালে চকরিয়া উপজেলা বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠন আয়োজিত সংবর্ধনা সভায় যোগ দেন। পরে বিকাল ৫টায় পেকুয়া চৌমুহনী চত্বরে পেকুয়া উপজেলা বিএনপি আয়োজিত সংবর্ধনা সভায় বক্তব্য রাখেন এই নেতা। দুটি জনসভায় সালাহউদ্দিন আহমদের সহধর্মীনী ও কেন্দ্রীয় বিএনপির সদস্য সাবেক সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট হাসিনা আহমদ ছাড়াও স্থানীয় বিএনপি ও অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের নেতারা বক্তব্য রাখেন।