স্থায়ী কমিটির বৈঠকের পর মির্জা ফখরুল
ছাত্রদের ওপর পূর্ণ আস্থা আছে
প্রকাশ: ০৭ আগস্ট ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
কাগজ প্রতিবেদক : বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ছাত্রদের প্রতি আমাদের সম্পূর্ণ আস্থা আছে, তাদের সঙ্গে একাত্মবোধ করছি। তারা নিশ্চয়ই বুঝবেন, সর্বদলীয় ব্যাপারটা গুরুত্ব দেয়া উচিত। গতকাল মঙ্গলবার গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকের পর বিএনপি মহাসচিব এক সংবাদ সম্মেলনে এই আহ্বান জানান। বৈঠকে লন্ডন থেকে স্কাইপে যুক্ত হয়ে সভাপতিত্ব করেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। বৈঠকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের রূপরেখা এবং এর প্রধান নিয়ে ফখরুল দলের অবস্থান তুলে ধরেন।
নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রধান উপদেষ্টা করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের যে রূপরেখা আন্দোলনকারীরা দিয়েছে তাতে বিএনপির সমর্থন আছে কিনা জানতে চাইলে ফখরুল বলেন, এখানে আমাদের সমর্থন করার ব্যাপার নয়। এটা হচ্ছে যে, যখনই প্রেসিডেন্ট আমাদের কাছে প্রস্তাব দেবেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নামের জন্য আমরা সেই সময়ে রাষ্ট্রপতির কাছে নাম দেব।
তিনি বলেন, কনস্টিটিউশনাল হেড অব স্টেট প্রেসিডেন্ট। তিনি হচ্ছে রাষ্ট্রের প্রধান। তারই একমাত্র এখতিয়ার আছে এই ধরনের ব্যবস্থাগুলো নেয়ার জন্য। সুতরাং, যখন রাষ্ট্রপতি আমাদের ডাকবেন তখনই আমাদের যেটা নামের প্রস্তাব, আমরা দেব। তবে একটা কথা বলে দিই, ছাত্রদের প্রতি আমাদের সম্পূর্ণ আস্থা আছ, তাদের আন্দোলনের প্রতি একাত্মবোধ করেছি, তাদের সঙ্গে একাত্মবোধ করছি। এখানে বলব, সর্বদলীয় ব্যাপারটা গুরুত্ব দেয়া উচিত, যে জিনিসটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
তিন সপ্তাহ পর খুলল বিএনপির অফিস : স্থায়ী কমিটির বৈঠকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারপ্রধানের কোনো নাম স্থির হয়েছে কিনা- প্রশ্নে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘না হয়নি।’
সোমবার টানা ১৬ বছরের শাসনের অবসান ঘটিয়ে শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছাড়ার কয়েক ঘণ্টা পর রাতে সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানসহ তিন বাহিনীর প্রধানদের নিয়ে বঙ্গভবনে যান ফখরুল ও বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে থাকা দলগুলোর নেতারা।
বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, সংসদ ভেঙে দিয়ে ‘অতি দ্রুত’ একটি অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করা হবে। সেই সরকার তিন মাসের মধ্যে নির্বাচন দেবে। সেখানে তিনি বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে ‘কোনো কালক্ষেপণ না করেই’ মুক্ত করা হবে।
গণমাধ্যমের প্রতি কৃতজ্ঞতা : গণঅভ্যুত্থানে সরকার পতনের প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, আমি আজকে আপনাদের শুভেচ্ছা জানাচ্ছি ফ্যাসিবাদমুক্ত বাংলাদেশে। শুভেচ্ছা জানাচ্ছি একটি গণতান্ত্রিক দেশের প্রত্যাশায় এবং একই সঙ্গে আপানাদের ধন্যবাদ জানাতে চাই, শত প্রতিকূলতা সত্ত্বেও আপনারা এই গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠাতার জন্য কাজ করেছেন। দুঃখ প্রকাশ করছি, এই বিজয়ের পরে কিছুসংখ্যক দুষ্কৃতকারী কয়েকটি টেলিভিশন স্টেশনে অগ্নিসংযোগ করেছে, ভাঙচুর করেছে। আমরা সব সময় ফ্রিডম অব প্রেসে বিশ্বাস করি, আমরা বিশ্বাস করি ব্যক্তি, মানুষ, সংগঠন- বিশেষ করে সাংবাদিকরা; তারা তাদের মত একদম স্বাধীনভাবে প্রকাশ করবেন। সেই বিশ্বাসে আমরা মনে করি যে, যারা এই সমস্ত কর্মকাণ্ডে লিপ্ত থেকেছেন তারা এসব থেকে বিরত থাকবেন এবং সংবাদপত্রের যে মুক্ত ধারা তা অব্যাহত রাখবেন।
কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে তৈরি হওয়া সরকার পতনের এই আন্দোলনে নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে ফখরুল বলেন, ছাত্র- জনতা যারা দীর্ঘ ১৫/১৬ বছর গণতান্ত্রিক সংগ্রামে প্রাণ দিয়েছেন তাদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাই। আমরা অভিবাদন জানাতে চাই, স্যালুট জানাতে চাই, আমাদের ছাত্রদের, আমাদের সন্তানদের, যারা তাদের মেধা বৃদ্ধিমত্তা সাহস নিয়ে এই ফ্যাসিবাদী সরকারের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে বুকের রক্ত দিয়ে বিজয় অর্জন করেছেন, আমরা তাদের স্যালুট জানাই।
হামলা-লুটপাট বন্ধের আহ্বান : বিএনপি মহাসচিব বলেন, আপনাদের কাছে অনুরোধ করব আপনাদের মাধ্যমে এই বার্তা দেশবাসীর কাছে পৌঁছে দিতে চাই, এখন কোনো প্রতিশোধ গ্রহণের স্থান নেই। এখন প্রয়োজন ধৈর্যের সঙ্গে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে পরিস্থিতি মোকাবিলা করে এই অর্জিত স্বাধীনতাকে সুসংহত করা। এখনো যারা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে প্রতিশোধমূলকভাবে অগ্নিসংযোগ করছেন, লুটপাট করছেন, বাড়িঘরে হামলা করছেন- দয়া করে এটা এই মুহূর্ত থেকে বন্ধ করুন।