লাগামহীন বাজার
সবজি পেঁয়াজ চাল ডিম মাছ ঊর্ধ্বমুখী
প্রকাশ: ১৩ জুলাই ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
কাগজ প্রতিবেদক : নিত্যপণ্যের ঊর্ধ্বমূল্যে নিত্যদিনের ভোগান্তি যেন কমছেই না। এবার নতুন করে বেড়েছে চালের দাম। সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি কেজি চালে ৪ থেকে ৫ টাকা বাড়তি দাম গুনতে হচ্ছে ভোক্তাদের। এছাড়া সবজি, পেঁয়াজ, রসুন, ডিম ও মাছের বাজারের অস্থিতিশীলতা তো রয়েছেই। এতে নাজেহাল নি¤œ ও নি¤œ-মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষ। বিক্রেতাদের বরাবরের মতো একই সুর- বাড়তি দামে কিনতে হয় বলেই বাড়তি দামে বিক্রি করতে হয়। তবে ক্ষোভের শেষ নেই ভোক্তাদের। গতকাল শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।
বাজার ঘুরে দেখা যায়, সপ্তাহের ব্যবধানে প্রায় সব ধরনের চালের দাম বেড়েছে। এখন মিনিকেট ৭০ থেকে ৭২ টাকা, নাজিরশাইল ৭০ টাকা ৭৫, পাইজাম ৫৮ থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা আগের চেয়ে কেজিতে ৪-৫ টাকা বেশি। চাল বিক্রেতারা জানান, মোকামে প্রতি বস্তা চালে ২০০ টাকা বেড়েছে। আমরা যেভাবে কিনছি, সেভাবেই বিক্রি করছি।
এদিকে, বাজারে সবজির দাম যেন কমছেই না। সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিতে ১০ থেকে ২০ টাকা পর্যন্ত সবজির দাম বেড়েছে। ৬০ টাকার নিচে কোনো ধরনের সবজি নেই বললেই চলে। এর মধ্যে করলা ও বরবটি বিক্রি হচ্ছে ১৪০ টাকায়। আর বেগুন, কচুর মুখি ও কাঁকরোলের কেজি সেঞ্চুরিতে গিয়ে ঠেকেছে। এছাড়া প্রতি কেজি টমেটো বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকায়। পেঁপে প্রতি কেজি ৬০ টাকা, ঝিঙে প্রতি কেজি ৬০ টাকা, ধুন্দল প্রতি কেজি ৭০ টাকা, পটল প্রতি কেজি ৬০ টাকা, শসা প্রতি কেজি ৮০ টাকা, ঢ্যাঁড়স প্রতি কেজি ৭০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া প্রতি কেজি ৪০ টাকা ও কাঁচা মরিচ প্রতি কেজি ৩২০? টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এদিকে, গত সপ্তাহের তুলনায় বেড়েছে ডিম ও পেঁয়াজের দামও। তবে আগের মতোই আছে আলুর দাম। বাজারে ডিমের ডজন ১৫০ টাকা ও গলির দোকানে ডিমের হালি ৫২ টাকা। যদিও গত সপ্তাহজুড়ে ডিমের ডজন ছিল ১৪৫ টাকা। অন্যদিকে বাজারের সব ধরনের পেঁয়াজের দাম ১০০ টাকার বেশি। দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকা করে। যদিও গত রাতেই এই পেঁয়াজের দাম ছিল ১১০ টাকা। এছাড়া বাজারে লাল আলু ৬০ টাকা, সাদা আলু ৬০ টাকা, বগুড়ার আলু ৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। প্রতি কেজি দেশি রসুন ২০০ টাকা, চায়না রসুন ১৮০ টাকা, চায়না আদা ৩০০ টাকা, ভারতীয় আদা ৩০০ দরে বিক্রি হচ্ছে।
সবজি, পেঁয়াজ ও ডিমের পাশাপাশি বাজারের সব ধরনের মাছের দামও চড়া। বাজারে প্রতি কেজি পাঙাশ মাছ ২২০ থেকে ২৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তেলাপিয়া প্রতি কেজি ২২০ থেকে ২৫০ টাকা, রুই প্রতি কেজি ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা, কাতল প্রতি কেজি ৩৮০ থেকে ৪০০ টাকা ও শিং প্রতি কেজি ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া টেংরা প্রতি কেজি ৬০০ থেকে ৬৫০ টাকা, পাবদা প্রতি কেজি ৫০০ টাকা, চিংড়ি প্রতি কেজি ৭০০ টাকা, কই প্রতি কেজি ২৪০ থেকে ২৬০ টাকা ও বোয়াল প্রতি কেজি ৭০০ থেকে ৮০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
মাছের মতো মাংসের দামও ঊর্ধ্বমুখী। দুই সপ্তাহের ব্যবধানে ব্রয়লারের দাম বাড়ল ৩০ টাকা। বাজারে গরু-খাসির তুলনায় ব্রয়লার মুরগির চাহিদা তুলনামূলক বেশি, যে কারণে দামও অনেকটা বাড়তি। গতকাল প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হয়েছে ১৯০ থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত। এর আগে গত সপ্তাহে ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হয়েছিল প্রতিকেজি ১৮০ টাকায় এবং তার আগের সপ্তাহে ১৭০ কেজিতে ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হয়েছিল। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দুই সপ্তাহের ব্যবধানেই কেজিপ্রতি ব্রয়লার মুরগির দাম বেড়েছে ২০ থেকে ৩০ টাকা পর্যন্ত। এছাড়া সোনালি মুরগি প্রতিকেজি ৩২০ টাকা, কক প্রতি কেজি ৩৫০ টাকা, লেয়ার প্রতিকেজি ৩৩০ থেকে ৩৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। অন্যদিকে আগের বাড়তি দামেই প্রতি কেজি গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৭৮০ টাকায় এবং খাসির মাংস বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ১১০০ টাকায়।
মালিবাগ বাজারে বাজার করতে আসা বেসরকারি চাকরিজীবী মনির হোসেন বলেন, বাজারে এসে দেখলাম সবজির বাজার অনেক গরম। এমন কোনো সবজি নেই যার দাম বাড়তি নয়, এত দাম হলে সাধারণ মানুষ কীভাবে কিনে খাবে? তিনি বলেন, মাছ মাংসের কথা তো বাদই দিলাম, এত দাম দিয়ে সবজি কেনাই কঠিন হয়ে যাচ্ছে। এই যদি হয় সবজির দাম, তাহলে কি সাধারণ ক্রেতা সবজি কিনে খেতে পারে?
শান্তিনগর বাজারের সবজি বিক্রেতা আহমদ উল্লাহ বলেন, এখন বেশিরভাগ সবজির মৌসুম শেষ হয়ে গেছে। যে কারণে বাজারে সরবরাহ কম। নতুন সবজি ওঠার আগ পর্যন্ত দাম বাড়তি থাকবে। এছাড়া টানা কিছুদিনের বৃষ্টিতে সবজির গাছের ক্ষতি হয়েছে, ফলে বাজারে সরবরাহ কমেছে। আরেকটি দিক হলো, কয়েকদিন ধরে টানা ছাত্র আন্দোলনের কারণে যানচলাচল বাধাগ্রস্ত হয়েছে, ফলে সবজি পরিবহনেও প্রভাব পড়েছে। সব মিলিয়ে বর্তমানে সবজির দাম বাড়তি যাচ্ছে।