সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের
পশ্চিমবঙ্গের মমতাই তিস্তাচুক্তি সমাধানের মূল প্রতিবন্ধকতা
প্রকাশ: ০২ জুলাই ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
কাগজ প্রতিবেদক : পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির সরকারই তিস্তার পানি বণ্টনের ক্ষেত্রে ‘মূল সমস্যা’ উল্লেখ করে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, যখন শেখ হাসিনা সরকারের সঙ্গে আলোচনা হচ্ছিল, তখনই গর্জে উঠেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কলকাতা থেকে বলেছেন, কোনোদিনও বাংলাদেশকে এই পানি দেব না। এখন যদি মমতা ‘না’ বলেন, তাহলে কেন্দ্রীয় সরকারকে রাজি করাতে হবে। তাকে ‘হ্যাঁ’ করাতে হবে। গতকাল সোমবার দলের ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদ?যাপনের অংশ হিসেবে তেজগাঁওয়ে ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের অফিসে সামনে এক সমাবেশে ক্ষমতাসীন দলের নেতা এসব কথা বলেন।
তিস্তাসহ অভিন্ন নদীর পানি নিয়ে আলোচনা অনেক দূর অগ্রগতি হয়েছে জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, ভারতের নতুন সরকার আমাদের প্রধানমন্ত্রীকে আশ্বস্ত করেছেন, যেসব সমস্যা বাস্তবায়ন হয়নি সেগুলোর ইতিবাচক অগ্রগতি হয়েছে এবং সমাধানের জন্য ইতিবাচক চেষ্টা আছে। ভারত একটি ফেডারেল দেশ। সেখানে কেন্দ্রীয় সরকার ইচ্ছা করলে রাজ্য সরকারের অধীনে থাকা পানি অন্য দেশকে দিতে পারে না। এটা ভারতের সংবিধানে লেখা আছে। এর আগে গঙ্গার পানি দিতে পশ্চিমবঙ্গের জ্যোতি বসু সরকারের সম্মতি ছিল বলেই আমরা বুঝে পেয়েছি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরে সই হওয়া ১০ সমঝোতায় দেশের ‘স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব দুর্বল হয়ে যাবে’ বলে বিএনপির পক্ষ থেকে যে বক্তব্য এসেছে তাকে কটাক্ষ করে সেতুমন্ত্রী বলেন, ৫৩ বছর ধরেই স্বাধীনতা নিয়ে টিকে আছে বাংলাদেশ। গেল রে গেল, সব নাকি ইন্ডিয়া হয়ে গেল। গেল রে গেল, স্বাধীনতা গেল; গেল রে গেল সার্বভৌমত্ব গেল। কোথায় গেল? ৫৩ বছর আমরা স্বাধীনতা নিয়ে টিকে আছি। কোথায় যাবে (স্বাধীনতা)? ভারত আমাদের বন্ধু। বঙ্গবন্ধু ভারতের সঙ্গে ২৫ বছরের মৈত্রী চুক্তি করে গিয়েছেন বলেই আজকে ৬৮ বছরের সীমান্ত সমস্যার সমাধান হয়।
তিনি বলেন, আরেকটা বাংলাদেশের সমান সমুদ্রসীমা আমরা ভারতের কাছ থেকে আদায় করতে পেরেছি, শান্তিপূর্ণভাবে ছিটমহল বিনিময় হয়েছে।
ফখরুল ইসলাম কি পড়াশোনা করেন না : প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরে এবার কোনো চুক্তি হয়নি জানিয়ে কাদের বলেন, মির্জা ফখরুল সাহেব, সমঝোতা স্মারক আর চুক্তি, এই দুইটা কি এক? পড়াশোনা করেন না? ডিপ্লোম্যাসি ভাষা জানেন না? জেনে নিন, সমঝোতা স্মারক আর চুক্তি এক কথা নয়। বিএনপিও ভারতের দাসত্ব চেয়েছিল মন্তব্য করে তিনি বলেন, মনে আছে, নরেন্দ্র মোদি যখন ক্ষমতায় আসেন, প্রথম দিন সকাল বেলায় ঘুম থেকে উঠে বিএনপি নেতারা ভারতের হাইকমিশনের সামনে হাজির। হাইকমিশন বন্ধ, মিষ্টি আর ফুল নিয়ে হাজির। এই হচ্ছে বিএনপি। এরা ভারত বিরোধিতা করে কিন্তু ভারতের কাছে ওয়াশিংটনের ইচ্ছায় গ্যাস বিক্রি করার অঙ্গীকার করে ২০০১ সালে ক্ষমতায় এসেছে।
আপনারা তো ভুলে যান : ’৯০-এর দশকে খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী থাকার সময় তার ভারত সফরের কথাও মির্জা ফখরুলকে স্মরণ করান ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, ওই যে ফিরে এলেন ঢাকা বিমানবন্দরে, সাংবাদিকরা জিজ্ঞেস করল, গঙ্গা চুক্তির কী হলো? খালেদা জিয়া কী বলল, আরে আমি তো গঙ্গা চুক্তির কথা বলতে ভুলেই গেছি। আপনারা সব কিছুই ভুলে যান।
বিএনপিতে অশান্তির আগুন : বিএনপি সরকারের বিরুদ্ধে আবার আন্দোলনের হুমকি দিলেও দলটি নিজেরাই স্বস্তিতে নেই বলেও দাবি করেন কাদের। তিনি বলেন, বিএনপির চোখে ঘুম নেই, ঘুম হারাম হয়ে গেছে। মির্জা ফখরুলের চোখে ‘অশান্তির আগুন’ মন্তব্য করে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে আন্দোলন করবে কখন? তারা নিজেরা নিজেদের বিশ্বাস করে না। কেউ কাউকে পছন্দ করে না, বলে ‘সরকারের এজেন্ট’। একেকজন আরেকজনকে বলে সরকারের এজেন্ট। তাদের আন্দোলন ভুয়া।
আলোচনা সভায় আরো বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম, ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান প্রমুখ। আলোচনা সভা পরিচালনা করেন সাধারণ সম্পাদক এস এম মান্নান কচি।