×

খবর

ভুবন হত্যা মামলা

৬ মাস পেরোলেও তদন্ত কাজে অগ্রগতি নেই

Icon

প্রকাশ: ০১ মে ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

কাগজ প্রতিবেদক : রাজধানীর তেজগাঁও শিল্পাঞ্চলের বিজি প্রেস এলাকায় অ্যাডভোকেট ভুবন চন্দ্র শীল নিহতের ঘটনায় হওয়া মামলার ৬ মাস পেরোলেও তদন্তকাজে অগ্রগতি নেই তেমন। এ ঘটনায় মারুফ বিল্লাহ হিমেল নামে একজনকে গ্রেপ্তার করা হলেও জিজ্ঞাসাবাদে তিনি এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত নয় বলে দাবি করেছেন। এখন পর্যন্ত মামলার কার্যক্রম এক প্রকার স্থবির পর্যায়েই রয়েছে। এদিকে নিহতের পরিবারও হত্যার বিচারের আশা ছেড়ে দিয়েছেন। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি মারা যাওয়ায় তার পরিবার তীব্র আর্থিক সংকটে দিন পার করছেন। নিহতের পরিবারের দাবি, বিচারকার্য পরিচালনার জন্যেও অর্থের প্রয়োজন। বিনা দোষে ভুবন মারা গেলেও রাষ্ট্রের কোনো সংস্থাই তাদের সহায়তায় এগিয়ে আসেনি। ভুবনের বাড়ি ফেনীর পরশুরামে। বাবা কৃষ্ণ কুমার শীল মারা গেছেন ২৩ বছর আগে। ভুবনের ৭৫ বছর বয়সি বৃদ্ধ মা গিরিবালা শীল নোয়াখালীতে ভুবনের স্ত্রী রতœা রানী শীলের সঙ্গে থাকেন। তিনিও বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত। স্মৃতিশক্তি ক্ষীণ, কথা বলতে পারেন না। নিহত ভুবন মা-বাবার একমাত্র সন্তান। ভুবন চন্দ্র শীল গুলশানে গোমতী টেক্সটাইল লিমিটেড নামের একটি প্রতিষ্ঠানের আইনি পরামর্শক ছিলেন। রতœা রানী শীল নোয়াখালীর মাইজদীর একটি উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক। দুজনের কর্মস্থল আলাদা হওয়ায় ভুবন ঢাকায় থাকতেন। রতœা সদ্য এসএসসি পাস করা একমাত্র সন্তান ভূমিকাকে নিয়ে থাকেন মাইজদীতে। পরিবারের মূল উপার্জনকারী ছিলেন ভুবন। তিনি ১৫ দিন পর পর নোয়াখালীতে গিয়ে সংসারের খরচ দিয়ে আসতেন। নিহত ভুবন চন্দ্র শীলের স্ত্রী রতœা রানী শীল ভোরের কাগজকে বলেন, সঞ্চয় বলে তেমন কিছু ছিল না ভুবনের। যা ছিল, সব খরচ হয়ে গেছে চিকিৎসায়। আহত অবস্থায় তাকে বেসরকারি পপুলার হাসপাতালে এক সপ্তাহ রেখে চিকিৎসা করানো হয়েছিল। সে সময় হাসপাতালের প্রায় ৬ লাখ টাকা বিল পরিশোধ করেছি ধার করে। ভুবনের কর্মস্থল গোমতী টেক্সটাইল লিমিটেড থেকে ১ লাখ টাকা দেয়া হয়েছে। কেউ আমাদের পাশে দাঁড়ায়নি। তিনি বলেন, এখন আমরা ফেনীতে গ্রামের বাড়িতে থাকছি। মেয়ে ভূমিকা চন্দ্র শীল পড়াশোনা করছে। চরম সমস্যায় পড়েছেন ভুবনের মা শাশুড়ি বৃদ্ধ গিরিবালা শীলকে নিয়ে। তিনি প্রায়ই অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হয়। শাশুড়ির চিকিৎসার পেছনে অনেক ব্যায়। আর পাড়ছি না। মামলার তদন্ত প্রসঙ্গে রতœা রানী শীল বলেন, মামলা পরিচালনায়ও খরচ হয়। আমার স্বামী বিনা দোষে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছে। এ দ্বায় কার? রাষ্ট্র আমাদের কোনো সহায়তায় এগিয়ে আসেনি। এখন পর্যন্ত কোনো পুলিশ কর্মকর্তা ফোন করে মামলার তদন্ত সংক্রান্ত কোনো কিছুই সেভাবে জানায়নি। মামলায় অনেক বড়-বড় সন্ত্রাসীদের নাম এসেছে। বোঝা গেছে তেমন কিছুই হবে না। মেয়ে ও অসুস্থ শাশুড়িকে নিয়ে টিকে থাকতে এখন তার প্রচণ্ড আর্থিক সহায়তা প্রয়োজন বলে জানান তিনি। গত বছরের ১৮ সেপ্টেম্বর রাত ৯টার দিকে জেল থেকে জামিনে মুক্তি পাওয়া তারিক সাঈদ মামুনকে টার্গেট করে সন্ত্রাসীরা। মামুন মগবাজারের পিয়াসী বার থেকে বের হয়ে উবারের গাড়িতে করে তার দুই বন্ধুসহ শুক্রাবাদের বাসার উদ্দেশে যাচ্ছিলেন। পথিমধ্যে বিজি প্রেসের সামনে ৫টি মোটরসাইকেলে সন্ত্রাসীরা তার গাড়ির গতিরোধ করে। সন্ত্রাসীরা মামুনকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে আহত করে। মামুনও তখন সন্ত্রাসীদের লক্ষ্য করে পিস্তল উঁচিয়ে ধরলে, সন্ত্রাসীরা ফাঁকা গুলি ছোড়ে। প্রায় ১৫-২০ রাউন্ড গুলির শব্দ শোনা যায়। এ সময় গুলশানের অফিস থেকে মোটরসাইকেলে বাড়িতে যাওয়ার পথে ভুবন চন্দ্র শীল গুলিবিদ্ধ হন। ঘটনার এক সপ্তাহ পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় ভুবনের মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় ভুবনের স্ত্রী রতœা রানী শীল বাদী হয়ে তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। ঘটনার পর পুলিশ মারুফ বিল্লাহ ওরফে হিমেল নামে একজনকে গ্রেপ্তার করে দুই দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে। জিজ্ঞাসাবাদে, রাজধানীর তেজগাঁও শিল্পাঞ্চলের বিজি প্রেস এলাকার সড়কে এলোপাতাড়ি গুলির সময় ঘটনাস্থলে থাকলেও এর সঙ্গে জড়িত নন বলে দাবি করেন তিনি। হিমেলের দাবি, শীর্ষ সন্ত্রাসী তারেক সাঈদ মামুনের সঙ্গে তার পরিচয় ছিল। এটা ব্যবহার করে মামুনের প্রতিপক্ষ তাকে জিম্মি করে। এরপর তাকে দিয়ে মামুনের অবস্থান নিশ্চিত করে ওই রাতে হামলা চালানো হয়। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায় যে, দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী তারিক সাঈদ মামুন ১৯৯৭ সালে খিলক্ষেতে হারিস আহমেদ ও জোসেফের বড় ভাই সাঈদ আহমেদ টিপু হত্যা মামলা, ১৯৯৪ সালে জিগাতলায় খায়রুল হত্যা ও ১৯৯৭ সালে গুলশান ট্রাম্প ক্লাবে চিত্রনায়ক সোহেল চৌধুরী হত্যা মামলার চার্জশিটভুক্ত আসামি। এর মধ্যে সোহেল চৌধুরী হত্যা মামলায় ১৯৯৮ সালে মামুন গ্রেপ্তার হন। ওই মামলায় ২৫ বছর কারাবন্দি থাকার পর গত বছরের আগস্ট মাসে হাইকোর্টের জামিনে তিনি মুক্তি পান। আরো জানা যায় যে, শীর্ষ সন্ত্রাসী তারিক সাঈদ মামুন হত্যাচেষ্টার মিশনে অংশ নেয়া ৯ জনের টিমের নেতৃত্ব দেয় ‘ছোট’ নামে এক সন্ত্রাসী। রায়েরবাজারের ছোট নামে এই সন্ত্রাসী হাল আমলে অত্যন্ত ভয়ংকর কিলার গ্রুপের নেতৃত্ব দেয়। তাদের গ্রুপের অন্যরা হলেন- কিলার কামাল, তপু, রায়েরবাজারের মুন্না, জিটু, আফজাল, ডাকাত রফিক, ধানমন্ডির হেজাজ ও তাহাজিব। এদের মধ্যে হেজাজসহ বেশ কয়েকজন সীমান্তবর্তী একটি দেশে আত্মগোপন করেছে বলে গোয়েন্দা সূত্রে তথ্য মিলেছে। তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি) এস এম আরিফ রাইয়ান ভোরের কাগজকে বলেন, আসলে মামলাটির তদন্ত কার্যক্রম স্থবির রয়েছে এমনটা নয়। আমরা এ নিয়ে কাজ করছি। যখনই কোনো তথ্য পাচ্ছি আমরা খতিয়ে দেখছি। গত সপ্তাহেও এ নিয়ে অভিযান চালিয়েছি। আসলে এ ঘটনার নেপথ্যে আমরা যে কয়েকজনকে সাসপেক্ট করেছি অনেকেই সীমান্তবর্তী একটি দেশে পালিয়ে গেছে বলে জানা গেছে। আমরা মামলার রহস্য উদ্ঘাটনে কাজ করে যাচ্ছি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App