আর্থিক খাতে প্রতারণা-জালিয়াতি
নাফিজ সরাফাত ও বেক্সিমকোর বিরুদ্ধে তদন্তে নামল সিআইডি
প্রকাশ: ০২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
কাগজ প্রতিবেদক : আর্থিক খাতে প্রতারণা ও জালিয়াতির অভিযোগে নাম উঠে আসা চৌধুরী নাফিজ সরাফাত ও তার স্বার্থসংশ্লিষ্ট ব্যক্তি এবং প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) ফিন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইউনিট। এছাড়াও একই অভিযোগে বেক্সিমকো গ্রুপ ও এর স্বার্থসংশ্লিষ্ট ব্যক্তি এবং প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধেও তদন্ত শুরু করেছে পুলিশের বিশেষায়িত এ ইউনিটটি। গতকাল রবিবার সিআইডির গণমাধ্যম শাখা থেকে পাঠানো এক বার্তায় এ তথ্য জানানো হয়।
সিআইডি সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি নাফিজ সরাফাত ও তার স্ত্রী আনজুমান আরা শহীদ এবং হাসান তাহের ইমামের বিরুদ্ধে অর্থ পাচারসহ প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধেও অনিয়মের অভিযোগ ওঠে। এসব অনিয়মের বিষয়ে তৈরি করা নথি নিয়ে সম্প্র্রতি সিআইডি কর্মকর্তাদের নিয়ে এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে পাচারসহ বিভিন্ন অনিয়মের বিষয়ে প্রাথমিক তথ্য তুলে ধরা হয়। নথিতে বলা হয়, চৌধুরী নাফিজ সরাফাত, তার স্ত্রী আনজুমান আরা শহীদ এবং হাসান তাহের ইমামের বিরুদ্ধে অর্থ পাচারের বেশ কিছু তথ্য পাওয়া গেছে। নাফিজ সরাফাত ২০০৮ সালে রেইস ম্যানেজমেন্ট পিসিএল নামে একটি সম্পদ ব্যবস্থাপনা কোম্পানির লাইসেন্স নেন। তার সঙ্গে সহযোগী হিসেবে ছিলেন হাসান তাহের ইমাম। এতে আরো বলা হয়, রেইসের অধীনে বর্তমানে ১৩টি ফান্ড রয়েছে। ফান্ডের অর্থ ব্যক্তিস্বার্থে বিনিয়োগ করে নাফিজ সরাফাত, আনজুমান আরা শহীদ ও হাসান তাহের ইমাম ফারমার্স ব্যাংকের (বর্তমানে পদ্মা ব্যাংক) পরিচালক বনে যান। একই কৌশলে নাফিজ সরাফাত তার স্ত্রীকে সাউথইস্ট ব্যাংকের পরিচালক বানান। তবে এতে ফান্ডের কোনো লাভ হয়নি।
সূত্র জানায়, রেইস বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তির কাছ থেকে অর্থ নিয়ে ১০টি মিউচুয়াল ফান্ড গঠন করে। ফান্ডগুলোর সম্মিলিত আকার প্রায় সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকা। ফান্ডের অর্থ দিয়ে নির্দিষ্ট মেয়াদের জন্য যে এফডিআর খোলা হয়, মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই ব্যাংক কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগসাজেশ করে সেই এফডিআরগুলো ভেঙে ফেলা হয়। এর ফলে, ফান্ডে বিনিয়োগকারীরা কোটি কোটি টাকার মুনাফা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। আরো জানা গেছে, এসটিডি/এসএনডি অ্যাকাউন্টে মাত্র তিন-চার শতাংশ সুদে ফান্ডের সাড়ে ৬০০ বা ৭০০ কোট টাকা জমা রাখা হয়। সুদের দুই-তিন শতাংশ অর্থ ব্যাংক কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগসাজেশ করে আত্মসাৎ করা হয়। শেয়ারবাজার থেকে প্রাপ্ত লভ্যাংশের ন্যূনতম ৭৫ শতাংশ বিনিয়োগকারীদের মাঝে বণ্টনের নিয়ম থাকলেও রেইস অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই এ নিয়ম মানেনি। বরং লভ্যাংশের বেশির ভাগ টাকাই তারা আত্মসাৎ করেছে। এছাড়া বিজিআইসি নামে ব্রোকারেজ হাউসে শেয়ার কেনার জন্য যে টাকা নেয়া হয়, সেই টাকায় ফান্ডের নামে শেয়ার না কিনে বিভিন্ন আত্মীয়স্বজনের নামে শেয়ার কেনা করা হয়। এভাবে ফান্ডের বিনিয়োগকারীদের কোটি কোটি টাকার মুনাফা বঞ্চিত করে ওই টাকা তারা আত্মসাৎ করেন। মাঝে মাঝে ফান্ডের টাকায় একটি কোম্পানির বিপুল পরিমাণ শেয়ার কিনে ইচ্ছা করেই শেয়ারের দাম বাড়িয়ে দেয়ার মাধ্যমে সাধারণ শেয়ার হোল্ডারদের কোটি কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতিসাধনও করেন তারা। এছাড়াও চৌধুরী নাফিজ সরাফত রেইস ম্যানেজমেন্ট পিএলসির চেয়ারম্যানের পাশাপাশি কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের ট্রাস্টি বোর্ডেরও চেয়ারম্যান। ২০১৮ সালে রাজুক পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে ১৭১.১৬ কাঠার একটি প্লট কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটিকে বরাদ্দ দেয়। এতে সরকারের ক্ষতি হয় ৭৭ কোটি টাকা।
এদিকে, বেক্সিমকো গ্রুপের আর্থিক অনিয়মের বিষয়ে সিআইডির প্রাথমিক পর্যালোচনায় দেখা যায়, বেক্সিমকো গ্রুপ গত ১৫ বছরে ৭টি ব্যাংক থেকে প্রতারণা ও জালিয়াতির মাধ্যমে ঋণ নিয়ে বিদেশে পাচার করেছে। বেক্সিমকো গ্রুপ জনতা ব্যাংক থেকে ২১ হাজার ৬৮১ কোটি, আইএফআইসি ব্যাংক থেকে ৫২১৮ কোটি, ন্যাশনাল ব্যাংক থেকে ২৯৫ কোটি, সোনালী, অগ্রণী ও রূপালী ব্যাংক থেকে ৫ হাজার ৬৭১ কোটি ও এবি ব্যাংক থেকে ৬০৫ কোটি টাকাসহ মোট ৩৩ হাজার ৪৭০ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে। এছাড়া, বেক্সিমকো গ্রুপ গত কয়েক বছরে বাজার থেকে ২৭ হাজার কোটি টাকা প্রতারণা ও জাল জালিয়াতির মাধ্যমে হাতিয়ে নিয়েছে মর্মে অভিযোগ রয়েছে। সৌদি আরবে যৌথ বিনিয়োগে প্রতিষ্ঠিত বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসের বেশির ভাগ অর্থ বাংলাদেশ থেকে ওভার ইনভয়েসিং, আন্ডার ইনভয়েসিং ও হুন্ডির মাধ্যমে পাচার করা হয়েছে। এসব বিষয়গুলোই সিআইডি এখন তদন্ত করে রিপোর্ট দেবে।