সিলেটে জব্দ ১৬ কেজি স্বর্ণ দিলীপ-দোলন সিন্ডিকেটের!
প্রকাশ: ৩০ আগস্ট ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
সিলেট অফিস : প্রায় ১৬ কেজি স্বর্ণসহ আরব আমিরাত-ফেরত এক যাত্রীকে সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আটকের পর বেরিয়ে এসেছে নানা চাঞ্চল্যকর তথ্য। স্বর্ণের চালানটির নেপথ্যে রয়েছে আন্তর্জাতিক চোরাকারবারের সঙ্গে জড়িত দিলীপ-দোলন সিন্ডিকেট। এর মধ্যে দিলীপ কুমার আগরওয়ালা ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি)। আর এনামুল হক খান ওরফে দোলন হলেন অনিয়মের দায়ে বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতির (বাজুস) বহিষ্কৃত সাবেক সভাপতি। অনুসন্ধানে এমন তথ্য জানা গেছে।
গত বুধবার গ্রিন চ্যানেল পার হয়ে বিমানবন্দরের গাড়ি পার্কিংয়ে ব্যাগ তল্লাশি করে ১০৫টি স্বর্ণের বার ও ৪টি গোলাকৃতির স্বর্ণের টুকরা জব্দ করা হয়। এ সময় আটক হোসাইন আহমেদ (২৫) সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার তোয়াকুল বাজার এলাকার নুরুল ইসলামের ছেলে। সূত্র জানিয়েছে, স্বর্ণসহ ধরা পড়া হোসাইন আহমেদ স্বর্ণ চোরাচালান সিন্ডিকেটের সক্রিয় ক্যারিয়ার বা বাহক। প্রবাসীরা দেশে ফেরার সময় কৌশলে তাদের মাধ্যমে দেশে স্বর্ণ পাচারে সহায়তা করে চক্রটি। সেই প্রবাসী দেশে ফেরার পর সিন্ডিকেট সদস্যদের মাধ্যমে নিরাপদ স্থানে স্বর্ণের চালানটি বুঝে নেয়া হয়। দিলীপ ও দোলন সিন্ডিকেট আওয়ামী লীগ সরকারের সময়কালে বিভিন্ন কৌশলে স্বর্ণ পাচার করেছে। দিলীপ কুমার বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় শিল্প ও বাণিজ্যবিষয়ক উপকমিটির সদস্য এবং দোলন ছিলেন আওয়ামী লীগ নেতা শেখ সেলিমের হুন্ডি ব্যবসা ও স্বর্ণ চোরাচালানের সহযোগী। ফলে হত্যা, মাদক ও অস্ত্র ব্যবসার মতো ভয়ংকর তথ্য থাকলেও ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে হাজার কোটি টাকা কামিয়েছে এই সিন্ডিকেট।
বিমানবন্দর কাস্টমস সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ বিমানের বিজি-২৫২ ফ্লাইটটি গত বুধবার সকাল ৮টা ২১ মিনিটে সংযুক্ত আরব আমিরাতের রাজধানী শারজাহ থেকে সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসে পৌঁছে। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা (এনএসআই) এবং শুল্ক গোয়েন্দার সদস্যরা ওই ফ্লাইটের যাত্রী হোসাইনকে চ্যালেঞ্জ করেন। প্রথম দফায় কাস্টমস স্ক্রিনিং করে হোসাইনের লাগেজে সন্দেহজনক কিছু পাওয়া যায়নি। তবে চ্যালেঞ্জ অব্যাহত রাখা হয়। পরে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের নিরাপত্তা শাখার সহায়তায় নিরাপত্তা স্ক্রিনিং বিশেষজ্ঞের মাধ্যমে আবার স্ক্রিনিং করে তার লাগেজে স্বর্ণের উপস্থিতি শনাক্ত করা সম্ভব হয়।
ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর কাস্টমসের সহকারী কমিশনার মো. সাজেদুল করিম বলেন, হোসাইন আহমেদ নামের এক যাত্রীর সঙ্গে থাকা ১৫ কেজি ৯১০ গ্রাম ওজনের স্বর্ণ জব্দ করা হয়েছে। এর মধ্যে ১০৫টি স্বর্ণের বার এবং ৪টি গোলাকৃতির স্বর্ণের টুকরা রয়েছে। স্বর্ণের মূল্য আনুমানিক ১৬ কোটি ৩৬ লাখ ৮৩ হাজার ১২৮ টাকা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিমানবন্দরের এক কর্মকর্তা বলেন, এত বড় চালানের সঙ্গে অবশ্যই দেশের শীর্ষস্থানীয় ও আন্তর্জাতিক স্বর্ণ চোরাকারবারীরা জড়িত।
ওসমানী বিমানবন্দরের পরিচালক হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, শুল্ক গোয়েন্দা বিভাগের কর্মকর্তাদের ফাঁকি দিয়ে বিমানবন্দরের গ্রিন চ্যানেল পার হয়ে পার্কিংস্থলে চলে গিয়েছিলেন হোসাইন। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। তার গতিবিধি সন্দেহজনক হওয়ায় বিমানবন্দরের অ্যাভিয়েশনের নিরাপত্তা কর্মকর্তারা তাকে চ্যালেঞ্জ করে পুনরায় গ্রিন চ্যানেলে নিয়ে যান। সেখানে তার দুটি লাগেজ তল্লাশি করে ৪টি জুস মেশিনের ভেতর থাকা স্বর্ণের চালান জব্দ করা হয়।