সাইফুল ইসলাম তালুকদার, ইউএই থেকে : সংযুক্ত আরব আমিরাতে (ইউএই) আগামী ১ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হতে যাচ্ছে সাধারণ ক্ষমা। তা চলবে ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত। বিভিন্ন কারণে অনিয়মিত, নথিবিহীন বা অবৈধভাবে বসবাসকারী বাংলাদেশি যাদের ভিসার মেয়াদ ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে তারা এ সাধারণ ক্ষমার সুযোগ পাবেন। আমিরাতে অবৈধ হয়ে পড়া অভিবাসীদের জন্য সরকার ঘোষিত সাধারণ ক্ষমা পেতে করণীয় নিয়ে গত বুধবার বাংলাদেশ কন্স্যুলেট জেনারেল দুবাই ভবনে কনসাল জেনারেল বি এম জামাল হোসেনের সভাপতিত্বে এক প্রেস ব্রিফিংয়ের আয়োজন করা হয়। এতে দেশটিতে অবৈধ হয়ে পড়া রেসিডেন্স ভিসাধারী বাংলাদেশিদের বিনা জেল জরিমানায় অবস্থান বৈধকরণ কিংবা দেশে ফিরে যাওয়ার জন্য ঘোষিত সাধারণ ক্ষমা বিষয়ে নানা দিকনির্দেশনা দেন তারা।

কনসাল জেনারেল বি এম জামাল হোসেন জানান, এই সাধারণ ক্ষমার সেবা পেতে দুবাইয়ের ভিসাধারীদের আল-আবীর ইমিগ্রেশন এবং অন্যান্য আমিরাতের ভিসাধারীদের সংশ্লিষ্ট প্রদেশের ইমিগ্রেশনে যেতে হবে এবং সংশ্লিষ্ট ইমিগ্রেশনের নির্দেশনা অনুযায়ী তাদের ইউএই সরকার অনুমোদিত টাইপিং তাসহিল/আমের সেন্টারে যেতে হবে। দেশে যাওয়ার জন্য এক্সিট পারমিট পেতে মূল পাসপোর্ট এবং দূতাবাস/কনস্যুলেট থেকে ট্রাভেল পারমিট লাগবে।

ভিসাবিহীন থাকার জন্য কাউকে সাধারণ ক্ষমা চলাকালে কোন জরিমানা দিতে হবে না, তবে ডকুমেন্ট প্রসেসিংয়ের জন্য নির্ধারিত ফি দিতে হবে। যারা সংযুক্ত আরব আমিরাতে অবৈধভাবে অনুপ্রবেশ করেছেন, তারা পাসপোর্ট/বাংলাদেশি হিসেবে কোনো প্রমাণ/সংশ্লিষ্ট দেশের ভিসার প্রমাণ ও পূর্ববর্তী ভিসার তথ্য প্রদানপূর্বক কনস্যুলেট/ দূতাবাস থেকে ট্রাভেল পারমিট সংগ্রহ করে সংশ্লিষ্ট ইমিগ্রেশন থেকে এক্সিট পারমিট নিতে পারবেন।

ভিসা নিয়মিত করা ও দেশে যাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে এক্সিট পারমিটের জন্য নির্ধারিত ফি পরিশোধ করতে হবে। এক্সিট পারমিট প্রাপ্তির পর ১৪ দিন তার মেয়াদ থাকবে। সংশ্লিষ্ট ইমিগ্রেশনে বায়োমেট্রিক্স স্ক্যান করার পর এক্সিট পারমিট ইস্যু করা হবে।

প্রেস ব্রিফিংয়ে আরো জানানো হয়, সংশ্লিষ্ট ইমিগ্রেশনে ভিসা রেকর্ড চেক করার পর কেউ যদি পলাতক/তা’মিম হয়ে থাকেন, তাহলে দেশে যাওযার জন্য এক্সিট পারমিট অথবা ভিসা নিয়মিত করার জন্য পুলিশ রিপোর্ট লাগবে।

তবে সাধারণ ক্ষমা চলাকালীন এক্সিট পারমিট নিয়ে দেশে গেলে কোনো প্রকার নিষেধাজ্ঞা দেয়া হবে না। সাধারণ ক্ষমার সুবিধা প্রাপ্তির জন্য আদালত থেকে ক্লিয়ারেন্স নিতে হবে।

প্রবাসীদের যাদের বিরুদ্ধে নিয়োগকর্তার পক্ষ থেকে পলাতক/তা’মিম রিপোর্ট আছে তারা কি সাধারণ ক্ষমার জন্য আবেদন করতে পারবেন? সাংবাদিকদের এ প্রশ্নের জবাবে কনসাল জেনারেল বলেন, মামলার ধরনের ওপর তা নির্ভর করবে, এক্ষেত্রে পলাতক/তা’মিম রিপোর্ট আপডেট করে সংশ্লিষ্ট ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ দেশে যাওয়ার জন্য এক্সিট পারমিট ইস্যু করবেন।

আবেদনকারী কীভাবে তার পাসপোর্ট পুনরুদ্ধার করতে পারবেন, যা স্পন্সর কর্তৃক ইমিগ্রেশনে জমা দেয়া হয়েছে- এ বিষয়ে তিনি জানান, সংশ্লিষ্ট ইমিগ্রেশনে যোগাযোগ করা হলে যথাযথ প্রক্রিয়ায় আবেদনকারীকে ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ পাসপোর্ট হস্তান্তর করবে। ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ কিছু সংখ্যক পাসপোর্ট কনস্যুলেটে/দূতাবাসে হস্তান্তর করেছে যা কনস্যুলেট/দূতাবাসে যোগাযোগ করে সংগ্রহ করা যাবে।

আবেদনকারী জরিমানা মওকুফ ও ভিসা নিয়মিতকরণ কার্যক্রম শেষ করে কী সরাসরি কর্মসংস্থান ভিসার জন্য আবেদন করতে পারবেন? এর উত্তরে তিনি বলেন, সরাসরি সংশ্লিষ্ট ইমিগ্রেশনে গিয়ে পাসপোর্ট ও ভিসা/আইডি কপি দাখিল করে প্রসেসিং ফি দিয়ে জরিমানা মওকুফ করা হবে এবং ছয় মাস মেয়াদি জব সিকার্স ভিসা ইস্যু করা হবে।

আমিরাতে বাংলাদেশিদের সাধারণ ভিসা হচ্ছে না। এক্ষেত্রে সাধারণ ক্ষমার সুযোগ প্রত্যাশীদের জন্য করণীয় সম্পর্কে কনসাল জেনারেল বলেন, সাধারণ ক্ষমা চলাকালীন সাময়িকভাবে নতুন ভিসা প্রদান বন্ধ থাকবে। অবৈধভাবে বসবাসকারী বাংলাদেশি যাদের ভিসার মেয়াদ ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে তারা সাধারণ ক্ষমার সুযোগ পাবেন। যারা ভিজিটে এসে ভিসা নেয় নাই তারা সাধারণ ক্ষমা চলাকালীন বৈধ হওয়ার সুযোগ পাবেন।

প্রেস ব্রিফিং এ ইউএইতে কর্মরত বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিক, কনস্যুলেটের প্রথম সচিব প্রেস মোহাম্মদ আরিফুর রহমান,প্রথম সচিব শেখ ফয়সাল আহমেদ ও কনস্যুলেট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।