ডা. শফিকুর রহমান
হিংসা-বিভক্তির অবসান চায় জামায়াত
প্রকাশ: ২৯ আগস্ট ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
কাগজ প্রতিবেদক : দেশ থেকে হিংসা-বিভক্তি রাজনীতির অবসান চায় মন্তব্য করে জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, আমরা হিংসা রাজনীতির কবর চাই। এটা আর মাথাচাড়া দিয়ে না উঠুক। আমরা বিভক্তি রাজনীতির কবর চাই। এটাও মাথাচাড়া দিয়ে না উঠুক। কোনো বিষয়ে আমরা জাতির বিভক্তি চাই না। সব ক্ষেত্রে আমরা চাই, জাতি ঐক্যবদ্ধ থাকুক।
গতকাল বুধবার দুপুরে গণমাধ্যমের সম্পাদক ও জ্যেষ্ঠ সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তিনি এ কথা বলেন। রাজধানীর গুলশানের হোটেল লেকশোরে এই মতবিনিময় অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় ভারতের প্রতি বন্ধুত্ব ও সহযোগিতার বার্তাও দেন জামায়াতের আমির। তিনি বলেন, আমরা সবাই বন্ধুত্ব চাই, সহযোগিতা চাই। আমরা দেশ থেকে হিংসা-বিভক্তি রাজনীতির অবসান চাই। জাতির ঐক্য চাই।
রাজনৈতিক দল হিসেবে কারো কোনো ক্ষোভ নেই মন্তব্য করে জামায়াতের আমির বলেন, আমরা সবাইকে ক্ষমা করে দিলাম। কিন্তু যিনি সুনির্দিষ্ট ক্রাইম করেছেন, তার ওই নির্দিষ্ট ক্রাইমের বিচার যদি নিশ্চিত না হয় তাহলে সমাজ সংশোধন হবে না। তা অন্য রকম হয়ে যাবে, বেপরোয়া হয়ে যাবে। এজন্য এটা ন্যায্য দাবি, ন্যায় বিচারের দাবি, সভ্যতার দাবি, সামাজিকতার দাবি, শান্তির দাবি। জামায়াত ‘মজলুম’ দাবি করে তিনি বলেন, ভবিষ্যতে আমরা যখন সুযোগ পাব, আমরাই যেন আবার আরেকজনের ওপর জুলুম না করি সেটা আমাদের লক্ষ্য রাখতে হবে।
এ সময় ভারত প্রসঙ্গে জামায়াতের আমির বলেন, আমরা কেউ বিপদে পড়তে চাই না। আমরা চাই সবাই সবার সম্মানিত প্রতিবেশী হিসেবে বাস করুক। এটা শুধু ভারত দিয়ে কথা নয়, সবার ক্ষেত্রে আমাদের একই কথা। বন্ধু হিসেবে আমাদের সাহায্য করুন, কিন্তু মেহেরবানি করে কেউ আমাদের বাধ্য করার চেষ্টা করবেন না। ডিসিশনটা আমাদের জনগণকে নিতে দিন। জনগণ যখন ডিসিশন নেবে তখন সেই ডিসিশন জনকল্যাণমূলক হবে, এটাই হবে গণতন্ত্রের পক্ষে, জনগণের অধিকারের পক্ষে। কিন্তু অন্য জায়গা থেকে যদি আমাদের বাধ্য করার চেষ্টা করেন তাহলে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হব।
ভারতকে উদ্দেশ করে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, আপনার স্বভাব বদলান, তাহলে প্রতিবেশী বদলানোর দরকার পড়বে না। প্রতিবেশীকে প্রতিবেশী হিসেবে আপনি রিসিভ করুন, তার প্রতি সম্মান প্রদর্শন করুন। আপনি যখন কাউকে সম্মান করবেন, ভালোবাসবেন, আপনার পাওনা হয়ে যাবে তার থেকে ভালোবাসা পাওয়া, সম্মান পাওয়া। এজন্য ধৈর্য ধরতে হবে, অস্থির হওয়ার কিছু নেই।
মতবিনিময় সভায় ‘মুক্ত গণমাধ্যম’ বিষয়ে বক্তব্য রাখেন নয়া দিগন্তের সম্পাদক আলমগীর মহিউদ্দিন, মানবজমিনের নির্বাহী সম্পাদক শামীমুল হক, এটিএন বাংলার বার্তা পরিচালক হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ, বাংলা ভিশনের প্রধান সম্পাদক আবদুল হাই সিদ্দিক, বিএফইউজের (একাংশ) সভাপতি রুহুল আমিন গাজী, মহাসচিব কাদের গণি চৌধুরী, সাংবাদিক নেতা আবদুল হাই শিকদার, এমএ আজিজ, এলাহী নেওয়াজ খান সাজু প্রমুখ।
‘রাজাকার শব্দে কষ্ট লাগে’- উল্লেখ করে জামায়াত আমির বলেন, আমার খুব ব্যথা লাগে যখন একদল বলে ‘পাকিস্তানি রাজাকার’, আরেক দল বলে ‘হিন্দুস্তানি রাজাকার’। খুব কষ্ট লাগে। আমার দেশের জনগণকে আরেক দেশের দালাল বানাচ্ছি, রাজাকার বানাচ্ছি, কেন এটা করছি? এটা যারা করে তাদের মানসিকতার পরিবর্তন হওয়া উচিত। যে জাতি নিজের নাগরিকের স্বীকৃতিই দেয় না সেই জাতি বিশ্বের দরবারে সম্মানটা পাবে কীভাবে? আপনাদের মতো আমারও কিছু কিছু দেশে যাওয়ার সুযোগ হয়েছে। সেই দেশের লোক তাদের ভাষার বাইরে কারো সঙ্গে কথা বলতে চায় না, ইন্টারন্যাশনাল ল্যাংগুয়েজ দুয়েকটা আছে, সেটা তারা জানে কিন্তু বলে না। তাদের জাতীয়তাবাদ এতটাই দৃঢ়। আমরা দেখি যে, জাতীয় জীবনে কোনো মুহূর্ত এলে তারা এক হয়ে যায়।
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর একের পর এক হত্যা মামলায় দল ও শরিক দলের শীর্ষস্থানীয় নেতা, ক্ষমতাচ্যুত সরকারের মন্ত্রী, সংসদ সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যদের আসামি করার বিষয়েও কথা বলেন জামায়াত আমির। তিনি বলেন, গণহারে একটা হত্যা মামলায় ৫০০ জনকে আসামি করা হয়, এটা কতটুকু যৌক্তিক এটা শতবার চিন্তা করা উচিত। তবে এর আড়ালে কিন্তু মূল ব্যক্তিটির বেঁচে যাওয়ার সুযোগ তৈরি হয়ে যাচ্ছে। আমরা বলেছি, আমরা সবার চাইতে মজলুম বেশি, এত মামলার দরকার নেই। সিম্বলিক কিছু মামলাই মানুষের শিক্ষার জন্য যথেষ্ট। কিন্তু সেই মামলায় একজনও নিরপরাধ মানুষ যেন অভিযুক্ত না হয় সে ব্যাপারে শতভাগ নিশ্চিত হতে হবে। ১০ জন ঠিক আছে, একজন বেঠিক। এই একজনের ওপরে যদি জুলুম হয়, আমরা জুলুম করতে চাই না। তারপরে অনিচ্ছা সত্ত্বেও কোনো ভুল হয়ে যায়, আপনাদের কাছে ধরা পড়ে আমাদের বলে দেবেন আমরা সংশোধিত হবো, কথা দিচ্ছি।
ধর্মীয় ভিত্তিতে কাউকে কিছু করতে দেয়া হবে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমার যদি এ দেশে শান্তিতে বসবাস করার অধিকার থাকে তাহলে অন্য সব ধর্মের মানুষের একই অধিকার আছে। সংখ্যালঘু স¤প্রদায় একটা শব্দ চালু আছে, এটার মাধ্যমে সমাজটাকে বিভক্ত করা হয়েছে।
এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেন জামায়াতের নায়েবে আমির মজিবুর রহমান, সৈয়দ আবদুল্লাহ মো. তাহের, সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার, সহকারী সেক্রেটারি রফিকুল ইসলাম খান, হামিদুর রহমান আযাদ, এহসানুল মাহবুব জুবায়ের, ঢাকা মহানগরের দক্ষিণের আমির নুরুল ইসলাম বুলবুল, উত্তরের আমির সেলিম উদ্দিন, প্রচার ও মিডিয়া সেক্রেটারি মতিউর রহমান আখন্দ প্রমুখ।