হাতিরঝিল থেকে নারী সাংবাদিকের লাশ উদ্ধার
প্রকাশ: ২৯ আগস্ট ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
কাগজ প্রতিবেদক : রাজধানীর হাতিরঝিল লেক থেকে বেসরকারি টেলিভিশন জিটিভির নিউজরুম এডিটর রাহনুমা সারাহের (৩২) মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। গত মঙ্গলবার রাত পৌনে ২টার দিকে ওই নারীকে পথচারীরা উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, ব্রিজের উপর থেকে লেকের পানিতে ঝাঁপ দেন সারাহ। স্বজন ও পরিচিতজনরা বলছেন, মানসিক অবসাদ থেকে লেকের পানিতে ঝাঁপিয়ে আত্মহত্যা করে থাকতে পারেন তিনি। তার ফেসবুকের পোস্টেও তেমনই ইঙ্গিত মেলে। থানাপুলিশ বলছে, মৃত্যুর পেছনে অন্য কোনো কারণ আছে কি না- তা খতিয়ে দেখা হবে। জানা গেছে, জিটিভির নিউজরুম এডিটর রাহনুমা সারাহ স্বামী সায়েদ শুভ্রর সঙ্গে ঢাকার কল্যাণপুরের একটি ভাড়া বাসায় থাকতেন। তার গ্রামের বাড়ি নোয়াখালীর সোনাইমুড়ী উপজেলার ইসলামবাগ কৃষ্ণপুরে। বাবার নাম বখতিয়ার শিকদার। দুই বোনের মধ্যে তিনি ছোট ছিলেন।
সারাহর স্বামী শুভ্র বলেন, প্রেমের সম্পর্ক থেকে ৭ বছর আগে তারা পরিবারকে না জানিয়ে বিয়ে করেন। গত মঙ্গলবার সারাহ অফিসে গিয়ে রাতে আর বাসায় ফেরেননি। এক ব্যক্তিকে দিয়ে রাত সাড়ে ১০টার দিকে বাসা ভাড়ার টাকা পাঠিয়ে দিয়েছিলেন। পরে আমি তাকে ফোন করলে সে ‘ব্যস্ত আছি’ বলে ফোন রেখে দেয়। এরপর রাত ৩টার দিকে খবর পাই, সে হাতিরঝিল লেকের পানিতে ঝাঁপ দিয়েছে। পরে ঢামেক হাসপাতালে গিয়ে স্ত্রীকে ‘মৃত অবস্থায়’ পাই।
শুভ্র আরো বলেন, আমাদের মধ্যে কোনো ঝগড়া-বিবাদ হয়নি। তবে বেশ কিছুদিন আগ থেকে আমার স্ত্রী আলাদা হতে চাইছিলেন। আমরা দুজনই কাজী অফিসে গিয়ে ডিভোর্স দিয়ে আসব বলে সিদ্ধান্ত হয়। তবে দেশের এই পরিস্থিতিতে আর কাজী অফিসে যাওয়া হয়নি। সারাহ ঝিলের পানিতে ঝাঁপ দিয়েছিলেন বলে প্রত্যক্ষদর্শীদের কাছে তিনি জানতে পেরেছেন বলেও জানান।
পথচারী মো. সাগর জানান, রাত পৌনে ১টার দিকে হাতিরঝিল প্রথম ব্রিজের নিচে লেকের পানিতে ভাসমান অবস্থায় সারাহকে দেখতে পান তারা। পাশেই তার ব্যাগ ভাসছিল। পানি থেকে তুলে তাকে দ্রুত তাকে ফরায়েজী হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখান থেকে তাকে ঢামেকে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
এদিকে এ ঘটনার কয়েক ঘণ্টা আগে ফেসবুকে এক পোস্টে সারাহ লিখেছিলেন, জীবন্মৃত হয়ে থাকার চাইতে মরে যাওয়াই ভালো। সারাহর বন্ধু সৈয়দ নাজমুস সাকিব ফেসবুকে লিখেছেন, সারাহ অনেকদিন থেকে ডিপ্রেশনে (মানসিক অবসাদ) ভুগছিলেন, চিকিৎসাও নিয়েছিলেন। সবাই তাকে আশ্বস্ত করেছিল যে তিনি ঠিক হয়ে যাবেন। সারাহর মৃত্যুতে শোকস্তব্ধ তার বন্ধু চিকিৎসক মেজবাহ উল আজিজ লিখেছেন, যে ডিপ্রেশনের জন্য আমরা লড়াই করতে চেয়েছিলাম, সেই ডিপ্রেশনের কাছেই আজ আমরা আবার হারলাম। ‘সুইসাইড প্রজেক্টে’ কাজ করতে চাওয়া, ডিপ্রেশন এর রাস্তা থেকে ফিরিয়ে আনতে চাওয়ার যুদ্ধে পরাজিত হয়ে হাতিরঝিলের পানিতে নিথর ভেসে আছে আমাদের অপরাজিতা হসন্ত (সারাহকে এই নামে ডাকতেন আজিজ)।
অন্যদিকে প্রতিদিন অফিসের গাড়িতে বাসায় ফিরলেও গত রাতে পরিচিত একজনের মোটরসাইকেলে করে রওনা হয়েছিলেন অফিস থেকে। এরপর মধ্যরাতে তার মরদেহ উদ্ধার হয়। তবে মোটরসাইকেলের ব্যক্তি কে ছিলেন সে বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যায়নি। হাতিরঝিল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইফুল ইসলাম বলেন, হাতিরঝিল লেকের পানিতে ওই নারী সাংবাদিকের নিথর দেহ ভাসছিল। এটা আত্মহত্যা নাকি হত্যা, তা মরদেহের ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পেলে বলা যাবে। তার বাবা নোয়াখালী থেকে ঢাকায় এসেছেন। তিনি থানায় যে অভিযোগ দেবেন, সেভাবে ব্যবস্থা নেয়া হবে। ঢামেক হাসপাতালের পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ (পরিদর্শক) মো. বাচ্চু মিয়া জানান, মরদেহ মর্গে রাখা হয়েছে।